কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
গোয়ার সঙ্গে সমুদ্রতট, ঐতিহাসিক গির্জা আর ভিন্ন স্বাদের রান্না অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। গোয়ার সংস্কৃতিতেও একটু ভিন্ন ধারা মিশে গিয়েছে সেই বহু যুগ আগেই। তবে গোয়ার এই বিবর্তন সম্পূর্ণই পর্তুগিজদের হাত ধরে।
১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে গোয়ার সমুদ্রতটে যখন পর্তুগিজদের নৌকো এসে প্রথম ভিড়েছিল তখন গোয়ার চরিত্রে কোনও বিদেশি ধাঁচ ছিল না। নেহাতই ভারতীয় এক অঞ্চল ছিল তখন এটি। পর্তুগিজরা গোয়ায় এসে বসবাস শুরু করার পর থেকেই এই রাজ্যের চরিত্র ক্রমশ বদলাতে থাকে। বৈচিত্র্য দেখা দেয় এই রাজ্যে চলনে বলনে।
প্রথম পর্তুগিজরা খাদ্যের সন্ধানে বেরল। কারণ জাহাজে যা রন্ধনসামগ্রী ছিল তাতে বেশিদিন চলত না, অতএব আঞ্চলিক বাজার দোকান ঘুরতে শুরু করল তারা খাবারের সন্ধানে। ভারতীয় উপকরণের সাহায্যেই নিজেদের দেশের রান্নার স্বাদ আনার চেষ্টা করল তারা। তৈরি হল নতুন ধরনের রান্না। গোয়ানিজ রান্নার ধাঁচ এখনও মূলত সেই ধারাটিই বহন করে চলেছে। রেট্রো রেস্তরাঁ চ্যাপ্টার টু-তে সেই স্বাদে-গন্ধে ভরা গোয়ানিজ কুইজিন নিয়ে চলছে মাসব্যাপী ফুড ফেস্ট। অ্যাংলো কালচার আর সামুদ্রিক রান্নার স্বাদ নিতে চাইলে রেস্তরাঁয় তো যেতেই পারেন। তেমন রান্না বাড়ির হেঁশেলেও বানাতে চান? তাহলে আপনাদের জন্য থাকছে দু’টি গোয়ানিজ রেসিপি। আর অপেক্ষা কেন? আজই রান্নাঘরে নিয়ে আসুন প্রাদেশিক স্বাদ।
গোয়ান প্রন বালচাও
উপকরণ: মাঝারি চিংড়ি ১ কেজি, মিহি করে কুচি করা পেঁয়াজ ২০০ গ্রাম, রসুন কুচি ৪-৫টা, কারিপাতা ২ গাছি, জুলিয়েন করে কাটা (স্লাইস) আদা ১ ইঞ্চি, কাঁচালঙ্কা ৩-৪টে, গুড় ১০-১৫ গ্রাম, তেল ১ কাপ, নুন স্বাদ মতো। চিংড়ি ম্যারিনেট করার জন্য: হলুদ গুঁড়ো চা চামচ, লঙ্কা গুঁড়ো চা চামচ, নুন স্বাদ মতো। বাটা মশলার জন্য: কাশ্মীরি লঙ্কা ২৫টা, রসুন ১৫ কোয়া, আদা ১ ইঞ্চি, গোটা জিরে ১ চা চামচ, দারচিনি ১ ইঞ্চি কাঠি, গোলমরিচ ৪০টি, লবঙ্গ ১৫টা, হলুদ গুঁড়ো সামান্য, ভিনিগার কাপ (প্রয়োজনে আরও একটু বেশি ব্যবহার করতে পারেন)।
পদ্ধতি: চিংড়ি মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর তা ম্যারিনেশনের উপকরণ দিয়ে মাখিয়ে রেখে দিন আধ ঘণ্টা। ইতিমধ্যে মিক্সির বড় জার ভিনিগার দিয়ে মুছে নিন। তারপর বাটার মশলাগুলো ভিনিগার মিশিয়ে বেটে নিন। একটা পাত্রে তেল গরম করে তা বাটিতে ঢেলে রাখুন ঠান্ডা করার জন্য। এবার একটা কড়াইতে গরম করা তেল থেকে কিছুটা নিয়ে ম্যারিনেট করা চিংড়িগুলো হালকা করে ভেজে নিন। অল্প অল্প করে চিংড়ি নিয়ে ভাজবেন। চিংড়ি ভেজে তুলে রাখুন। এবার ওই একই কড়াইতে আরও কিছুটা তেল দিয়ে রসুন ও লঙ্কা কুচি ভেজে নিন। তারপর কারিপাতা ফোড়ন দিন। এরপর পেঁয়াজ দিয়ে ভাজুন। পেঁয়াজে রং ধরলে বাটা মশলা মেশান। অল্পক্ষণ নেড়ে একটু ভিনিগার যোগ করুন। ঢিমে আঁচে রেখে চিংড়িগুলো যোগ করুন। নুন দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। তারপর বাকি তেল ঢেলে দিন। সবটা আবারও নেড়ে মিশিয়ে নিন। মোটামুটি মিনিট দশেক এইভাবে রেখে দিন। চিংড়ি সেদ্ধ হলে গুড় মিশিয়ে দিন। ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে আরও দশ মিনিট রান্না করুন। গ্যাস বন্ধ করে একটু ঠান্ডা হতে দিন। এবার একটা কাচের বয়মে এই পদটি ঢেলে রেখে দিন। চিংড়ি মাছ মশলায় যতদিন থাকবে তত বেশি জারিয়ে উঠবে এবং তখনই সুস্বাদুও হবে। এইভাবে মোটামুটি দু’সপ্তাহ রেখে দিতে পারেন এই পদটি।
চোরিজো রাইস
উপকরণ: রান্না করা ভাত ১ কাপ, চোরিজো (মশলাদার পর্ক সসেজ) ১০টা, তেল ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, ছোট পেঁয়াজ ১টা, চেরি টম্যাটো ৬-৮টা, সবুজ অলিভ স্লাইস করে কাটা ৮-১০টা, নুন স্বাদ মতো, গোলমরিচ থেঁতো করে নেওয়া পরিমাণ মতো, গুঁড়ো চিনি ১ চা চামচ, পার্সলে পাতা কুচি কয়েকটা।
পদ্ধতি: একটা ননস্টিক কড়াইতে তেল গরম করে চোরিজো ভেজে তুলে নিন। তারপর তা তেরছা করে কেটে টুকরো করে নিন। তবে টুকরোগুলো যেন খুব ছোট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এবার ওই চোরিজো ভাজা তেল আর একটু গরম করে তাতে রসুন কুচি ভাজুন। এবার ভাজা রসুনের মধ্যেই টুকরো করে কাটা চোরিজো মিশিয়ে নাড়ুন। রসুন কুচি যখন লালচে হয়ে যাবে তখন তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি করে কেটে মিশিয়ে দিন। পেঁয়াজ কুচি বেশ সোনালি করে ভাজুন। এবার চেরি টম্যাটো অর্ধেক করে কেটে তাতে মিশিয়ে দিন। অল্প একটুক্ষণ নেড়ে আঁচ বন্ধ করে দিন। তারপর অলিভ স্লাইসগুলো মেশান। সবটা বেশ একে অপরের সঙ্গে মিশে গেলে আবারও গ্যাস জ্বালিয়ে নিন। সবটা নাড়তে থাকুন। একটু চিটপিট আওয়াজ শুরু হলে গোলমরিচ থেঁতো, চিনি, নুন ও বাকি সব মশলা মিশিয়ে দিন। সব শেষে রান্না করা ভাত মিশিয়ে একটু নেড়েই আবারও আঁচ বন্ধ করে দিন। এরপর সবটা নেড়ে নিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। খানিকক্ষণ বাদে ঢাকা খুলে উপর থেকে অল্প একটু পার্সলে পাতা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
ছবি: প্রদীপ পাত্র, শ্যুটিংস্থল: চন্দ্রকোণ স্টুডিও