রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
তারপর শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে সঙ্গে লইয়া গেলেন দাদা বলরামের কাছে। “ব্রজে পাঠাইতেছি উদ্ধবকে আমাদের সংবাদ দিতে,” কহিলেন শ্রীকৃষ্ণ অগ্রজকে। অনুমোদন করিলেন সানন্দে সেকার্য্য শ্রীবলদেবচন্দ্র। প্রণতঃ হইলেন উদ্ধব। আশিস্ দিলেন তাঁহার শিরে হাত দিয়া। জননী রোহিণীর কাছে শ্রীকৃষ্ণ গেলেন তারপর উদ্ধবকে সাথে লইয়া। বলিলেন মাকে মনের সঙ্কল্প। রাঙা হইয়া উঠিল রোহিণী মায়ের বদনমণ্ডল ব্রজের কথা স্মরণে আসিতেই। কহিলেন মা অশ্রুগদ্গদ কণ্ঠে, ‘ব্রজেশ্বরী যশোদাকে সান্ত্বনা দিবে প্রতিনিধি পাঠাইয়া? তাও কি সম্ভব, বাছা?” “সবই ত জানো মা, উপায় কী”—বলিতে বলিতে রুদ্ধ হইয়া আসিল শ্রীকৃষ্ণের কণ্ঠও। পদধূলি লইলেন শিরে উদ্ধব রোহিণী জননীর তাঁহার সম্মুখে নতজানু হইয়া। স্নেহপূর্ণ শ্রীকরে স্পর্শ করিলেন রোহিণীমাতা উদ্ধবের নত মস্তক। তৎপর শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে সাজাইয়া দিলেন নিজ শ্রীহস্তে নিজ অঙ্গের আভরণ ও পুষ্পমালিকা খুলিয়া লইয়া। উদ্ধবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আনন্দে যেন জড়তা প্রাপ্ত হইল প্রিয়সখার স্নেহভরা আদর ও মধুভরা স্পর্শ পাইয়া। ব্রজে যাইতেছেন উদ্ধব কৃষ্ণের কার্য্যে মনের আনন্দেই, কিন্তু কিছু কিছু দুঃখও আছে অন্তরের গভীর তলদেশে, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গসুখ ও সেবা-সুখে বঞ্চিত থাকিবেন, যে কয়দিন থাকিতে হইবে দূরে ঐ কার্য্যানুরোধে। অন্তরে বুঝিয়াছেন অন্তরদেবতা প্রিয় উদ্ধবের। বলিলেন প্রিয় উদ্ধবকে “ব্রজে গেলে সঙ্গহারা হইবে আমার, এই আশঙ্কা করিও না উদ্ধব। আমি ব্রজেই আছি অনাদিকাল। কুত্রাপি ব্রজছাড়া নই। এখানে আমার যেন একটা টুক্রা পড়িয়া আছে—গোটা আমি ব্রজবনেই আছি। ব্রজে আমাকে পাওয়াই ঠিক পাওয়া। তুমি আমাকে হারাইতে যাইতেছ না,—পাইতে যাইতেছ উদ্ধব। আর আমার সেবার কথা ভাবিতেছ? আমার সেবাই আমার সেবা নহে। আমার প্রিয়জনদের সেবাই আমার প্রকৃষ্ট সেবা। আমার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ প্রিয়জনদের সেবায় যাইতেছ তুমি। আর বড় সেবা নাই আমার ইহা অপেক্ষা উদ্ধব।” প্রিয়ের আদরমাখা কথায় সকল বেদনা ঘুচিয়া গেল উদ্ধবের অন্তরের।
পদব্রজেই যাইবেন কৃষ্ণতীর্থে, উদ্ধবের সাধ। যান-আরোহণে তীর্থ-দর্শন শাস্ত্রবিধি নয়। কিন্তু পায়ে হাঁটিয়া গেলে দেরী হইবে যে অনেক, তাহা সহ্য হয় না শ্যামসুন্দরের।