মানসিক উত্তেজনার বশে ঘরে বাইরে বিবাদে জড়িয়ে অপদস্থ হতে পারেন। হস্তশিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। মনে ... বিশদ
সময়ের সঙ্গেই পরিবর্তিত হয়েছে অপরাধ তত্ত্ব। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে সিজার বেকারিয়া এবং জেরেমি বেন্থামের ক্ল্যাসিকাল থিয়োরির অনুসরণে অপরাধবিদ্যাকে ইতিবাচক এবং সামাজিক প্রক্রিয়া ও কাঠামোর দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়। অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭২ সাল থেকে ন্যাশনাল ক্রাইম ভিক্টিমাইজেশন সার্ভে (এনসিভিএস) চালু হয়েছে। অপরাধ এবং অপরাধী সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য ভারতে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে। বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রতিবছর সেখানে যাবতীয় তথ্য পাঠানোর কথা। তার ভিত্তিতে নিয়মিত প্রকাশিত হয় এনসিআরবি’র বার্ষিক রিপোর্ট। এই রিপোর্টগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ অঞ্চলেই অপরাধ ক্রমবর্ধমান এবং অপরাধের ধরন নানা মোড় নিচ্ছে। তার কারণ শুধু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাই নয়, ওইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির উন্নতি ও তৃণমূল স্তর পর্যন্ত তার ব্যবহার। অপরাধ-রহস্যের উন্মোচন এবং অপরাধী চিহ্নিতকরণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে বিশেষ সহায়ক হয়েছে তাতে কোনও সংশয় নেই। একই সঙ্গে তৈরি হয়েছে অন্য সমস্যা—প্রযুক্তির অপব্যবহার হয়ে উঠে উঠেছে লাগামছাড়া। তাতে একদল মানুষ সচেতনভাবে অথবা অজ্ঞাতেই ভয়ংকর অপরাধ করে বসছে এবং আর দল নির্দোষ নিরপরাধ মানুষ হচ্ছে তার শিকার।
সাইবার ক্রাইম এখন নানা প্রকার। প্রতিদিন তার ডালপালা বাড়ছে। সাইবার অপরাধের আর্থিক ক্ষেত্র তো আছেই, সেখানে ক্ষতি সীমাবদ্ধ থাকে ব্যক্তি বা সংস্থার আর্থিক লোকসানের মধ্যেই। কিন্তু এই অপরাধ কিছু ক্ষেত্রে সমষ্টিকেই জড়িয়ে নেয়। যেমন ইদানীন্তন অধিকাংশ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের কারণ খুঁজলে দেখা যাবে, তার নেপথ্যে রয়েছে কোনও না কোনও বিতর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের চটজলদি প্রতিক্রিয়া। আরও পরিতাপের বিষয় হল, বহু ক্ষেত্রে এমন পোস্ট যে বা যারা করেছে তারা নাবালক। তাদের ‘অবুঝ’ পোস্টের ফুলকি থেকেই লেগে গিয়েছে দাবানলের চেয়েও ভয়াবহ আগুন! তখন সবার আগে কোপ পড়ে এলাকার ইন্টারনেট সংযোগে। উস্কানিতে তৎক্ষণাৎ কিছুটা রাশ পড়লেও সুরাহা কিন্তু মেলে না। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণার চাষ আরও বেড়েছে। এই আবহে রাজ্যের স্কুলপাঠ্যে যুক্ত করা হয়েছে সাইবার অপরাধ এবং সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সচেতনতার পাঠ। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা বিষয়ের অংশ হিসেবেই এগুলি পড়বে। এই উদ্যোগ সময়োচিত এবং প্রশংসনীয়। এর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দায়িত্বশীলতার পরিচয় মেলে। কারণ, আজকের দিনে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া স্কুলপড়ুয়াদেরও নাগালে, কম বয়সের দোহাই দিয়ে তাদেরকে আর এসব থেকে দূরে রাখার সুযোগ নেই। ব্যাপারটা আগুনের মতোই। আগুন অবশ্যই বিপজ্জনক, কিন্তু তার নিরাপদ ব্যবহার জানা থাকলে আগুনের চেয়ে আশীর্বাদ কমই হয়। মানবসভ্যতা এগিয়েছে যে দুটি জিনিসের উপর ভর করে তার একটি চাকা হলে অন্যটি অবশ্যই আগুন। তেমনি বর্তমান সভ্যতার অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরত্ব রচনা নয়, তার সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবহার শিখে নেওয়া এবং ছোট-বড় সকলকে তা শেখানোই হল সমাধান। তাই রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার এই দায়িত্বশীল উত্তরণ অবশ্যই আশা জাগায়।