মানসিক উত্তেজনার বশে ঘরে বাইরে বিবাদে জড়িয়ে অপদস্থ হতে পারেন। হস্তশিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। মনে ... বিশদ
ভারতের নিম্ন র্যাঙ্কিংয়ের একাধিক কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—এখানকার সবচেয়ে গরিব ২০ শতাংশ শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১.৯ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা পাচ্ছে। অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মীদের হাল তো কহতব্য নয়। কেন্দ্রীয় বাজেট আজ পর্যন্ত এই গুরুতর বিষয়ে সদয় নয়, তাই চাহিদাগুলি পূরণ হয় না সরকারিভাবে। দেশের জন্য জীবনপাত করার পরিণামে চরম বঞ্চনাই হল ভারতের ‘সৌন্দর্য মাহাত্ম্য’! তাই নাগরিকের নিজের প্রয়োজন মেটাতে হয় নিজেকেই, কিন্তু সেখানেও বাধা রাষ্ট্রের রক্তচোষা চক্ষু। নাগরিকের ব্যক্তিগত বিমার উপরেও বিপুল করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার। স্বভাবতই বিমার ছাতার নীচে প্রবেশ করতে পারে না বেশিরভাগ নাগরিক। জীবন বিমা, সাধারণ বিমা থেকে চিকিৎসা বিমা সবগুলি থেকেই দূরে সরে সরে যাচ্ছে অনেকে। বিপদ বাড়বে জেনেও নিরুপায় নাগরিক, কেননা তারা সত্যিই অপারগ, অক্ষম। ২০৪৭ সাল বা স্বাধীনতার শতবর্ষকে সামনে রেখে সব নাগরিককে বিমার ছাতার তলায় নিশ্চিতভাবে আনার প্রচার চলে। কিন্তু বাস্তবে মোদির ভারত যে উল্টো দিকেই হেঁটে চলেছে তা মানে দেশের বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইআরডিএআই)। তাদের হিসেবে, জীবন ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এদেশে প্রতি ১০০০ জনে বিমা কিনেছেন মাত্র ৩৭ জন! অর্থাৎ শতকরা হিসেবে ৯৬.৩ শতাংশ ভারতবাসীর কোনও ধরনের বিমা নেই। আরও লক্ষ করার মতো বিষয় হল, বিমা কেনায় এই অনীহা বাড়ছে প্রতিবছর।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেনা বিমাকে সমীক্ষার আতশকাচের তলায় রাখতেই প্রকাশ্যে এসেছে এই গুরুতর পরিসংখ্যান। বিশ্বের গড় হিসেব অনুযায়ী প্রতি হাজারে ৭০ জন বিমা কিনে থাকেন। সেই নিরিখে ভারতের গড় প্রায় অর্ধেক। এর কারণ অনেকগুলি। প্রথমত, কম খরচে ইনস্যুরেন্স করানোর সুবিধা এদেশে নেই। অনলাইনে বিমা কেনা বা পলিসির শর্ত লাঘবের মতো কিছু পদক্ষেপ কেন্দ্র করলেও তা সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। তার উপর চাপানো হয়েছে অত্যন্ত উচ্চ হারে (১৮ শতাংশ) জিএসটির বোঝা। গ্রাহকের এই বোঝা কমানোর ব্যাপারে বিমা সংস্থাগুলি কেন্দ্রের কাছে বারবার অনুরোধ করছে। সমস্ত গ্রাহক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তরফে প্রতিবাদ, আর্জি তো আছেই। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, অর্থনীতির বৃদ্ধির লক্ষণ বস্তুত করুণ। ভারত সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগই ইতিমধ্যে অশনিসঙ্কেত দিয়ে রেখেছে, চলতি অর্থবর্ষের জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৬.৪ শতাংশ, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রত্যাশার চেয়ে ২০ বেসিস পয়েন্ট কম। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি এগনোর পরিবর্তে চারবছর পিছনে হাঁটতে চলেছে! তারপরও মোদি সরকারের হেলদোল নেই। তাদের এই নীতি কল্যাণকামী রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশের সরকারের এই নীতি গ্রহণের অর্থ, একটি রাষ্ট্র হিসেবে ভারতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ অমানবিকতার শিকার। সেখানে ‘আচ্ছে দিন’, ‘অমৃতকাল’ প্রভৃতি প্রচার অতিনিকৃষ্ট প্রহসন মাত্র।