বিষয় সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে শরিকি বিবাদ চরম আকার ধারণ করতে পারে। কর্মে উন্নতি হবে। অপব্যয়ের ... বিশদ
কিন্তু আইনটি বলবৎ হওয়ার এক দশক পরেও সকলের খিদের যন্ত্রণা দূর হয়নি। ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি শিশু, মহিলাসহ গরিব পরিবারের স্বাস্থ্যচিত্রের। যক্ষ্মা বা টিবির মতো অপুষ্টিজনিত অসুখের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে এখনও বহু মানুষকে। শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক আসরে ভারতের ছেলেমেয়েরা যে বরাবর পিছনে রয়ে যাচ্ছে, তার একটি বড় কারণ তাদের এই দুর্বল স্বাস্থ্য। বুঝতে বাকি থাকে না—৪ নভেম্বর, ২০২৩ ভোটমুখী ছত্তিশগড়ের দুর্গ এলাকার প্রচারসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কেন বলতে হয়েছিল, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিজেপি সরকার দেশের ৮০ কোটির বেশি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার প্রকল্প আরও পাঁচবছর বাড়িয়ে দেবে।’ ভোটপণ্ডিতের একাংশের দাবি ছিল, ২০২৪ লোকসভার অঙ্ক মাথায় রেখেই চালটি সেদিন দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি অবশ্য তাঁর এবং বিজেপি সরকারের ‘মানবিক মুখ’ তুলে ধরতেই ওই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধির কোনও মানুষ তার মধ্যে মোদি সরকারের বাহাদুরি খুঁজে পায়নি, বরং লজ্জিতই হয়েছিল। কারণ যে দেশের ৮০ কোটির বেশি মানুষকে বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে ভাত বা রুটি জোগাড় করতে হয়, সেই রাষ্ট্রের হাঁড়ির হালই প্রকট হয়ে পড়ে। ভারতে বিনামূল্যের মোট রেশন গ্রাহক যত তার নীচের জনসংখ্যার দেশ রয়েছে ২৩২টি। শতাধিক দেশের মিলিত জনসংখ্যাও ৮১ কোটির কম!
স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও ভারতের মতো সুবৃহৎ এবং শস্যশ্যামলা দেশের এই করুণ অবস্থা কেন? প্রথম কারণ তীব্র বৈষম্য, যা হ্রাসের বদলে ক্রমবর্ধমান। দ্বিতীয় কারণ চরম অদক্ষ সরকারি ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি। যেমন এখানে ১,৮২৩ কোটি টাকার খাদ্যশস্য নষ্ট হওয়ার দুঃসংবাদ সামনে এসেছে। তাও মোদি জমানায় গত সাড়ে পাঁচ বছরে—২০১৯-২০ থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে। কেন্দ্রীয় সরকারের এক অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে এজন্য গুদামের অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। গুদাম থেকে রেশন দোকানে খাদ্যশস্য পাঠানোর পথেই ৬.২১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১,৮২৩ কোটি টাকা। এ তো মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের খতিয়ান। এই নষ্ট-সংস্কৃতি যে দেশের এবং যে ব্যবস্থার মজ্জাগত, সেখানে পূর্ববর্তী বছরগুলিতেও যে ক্ষুধানিবারণের বিপুল সামগ্রী জলাঞ্জলি গিয়েছে তা বুঝে নিতে কোনও গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। খিদের জ্বালায় জর্জরিত দেশে এই ঘটনা মোটেই স্বাভাবিক নয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক গুদাম নির্মাণ হয়নি কেন? অভাবটা কীসের? অর্থের অভাবের দোহাই সরকার বাহাদুর দিতেই পারেন, কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এই বোধগম্য যুক্তিই সামনে রাখা যায় যে, বছর বছর যত টাকার খাদ্যশস্য নষ্ট হচ্ছে তার এক ভগ্নাংশ অর্থেই দেশজুড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক উন্নত মানের গোডাউন তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। তাতে খাদ্যের অপচয় বন্ধ হবে সরাসরি। অন্যদিকে সহজতর হবে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই এবং কৃষকের হাতেও তুলে দেওয়া যাবে বাড়তি অর্থ। কিন্তু যাদের অপদার্থতার জন্য ধারাবাহিকভাবে দেশের এই অপরিমেয় ক্ষতি হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে কেন উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এটাই আজকের জরুরি প্রশ্ন।