অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
বিশ সালটা মহামারীর বছর। কোভিডের গ্রাসে পড়েছিল মোয়াশিল্প। তবে সব ভীতি কাটিয়ে ঘরে-বাইরে জয়নগরে ব্যবসার বহর এবার মন্দ নয়। দিনভর দোকানে দোকানে ভিড়। অনলাইনে অর্ডার আসছে ভিনরাজ্য ও বিদেশ থেকে। চাহিদা আর জোগানের ভারসাম্য রাখতে এখন নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন মোয়ার কারিগররা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘কোভিড আতঙ্কের মধ্যেও মোয়ার ব্যবসা বেড়েছে দ্বিগুণ।’
জয়নগরের মোয়ার উৎপত্তি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। লেখক-সাহিত্যিকদের মধ্যে মতভেদও প্রকট। তবে একটি জনশ্রুতি চৈতন্যযুগ থেকে আজও বহমান। বহড়ু কিংবা জয়নগরে কান পাতলে শোনা যায় যামিনীবুড়োর নাম। কথিত রয়েছে, নিজের চাষ করা কণকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড় দিয়ে মোয়া তৈরি করেছিলেন তিনি। সেই মোয়া একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশনও করেছিলেন যামিনীবুড়ো। সেখানে এসেছিলেন যুগ-অবতার শ্রীচৈতন্য দেব স্বয়ং। মোয়া খেয়ে খুব সুখ্যাতি করেছিলেন তিনি। এরপর থেকেই না কি বহড়ুর মোয়া জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লক্ষ্মীকান্তপুর শাখার বহড়ু স্টেশন থেকে কয়েক মিনিট এগলেই কলুর মোড়। সেখান থেকে কুলপি রোড—দু’দিকে শুধু মোয়ার দোকান। নতুন গুড়ের গন্ধে ম ম করছে গোটা এলাকা। লাইন দিয়ে চলছে কেনাকাটা।
করোনা নিয়ন্ত্রণে টানা লকডাউন। পরে উম-পুনের জোর ধাক্কা। বেসামাল হয়ে পড়েছিল জয়নগর। ফলে নভেম্বরের গোড়ায় মোয়ার বাজার নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে ব্যবসায়ীদের। এদিন এলাকায় ঘুরে সেই ভাঁজ অবশ্য নজরে আসেনি। স্থানীয়দের কথায়, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মোয়ার বাজারে চলবে জমজমাট ভিড়। অনলাইনেও হচ্ছে দেদার বুকিং। মোয়া প্রস্তুতকারক সোসাইটির ‘জয়নগর ডট কম’-এ অর্ডার আসছে প্রচুর। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও ভিন রাজ্য থেকে মোয়া পাঠানোর আর্জি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সোসাইটির কর্মকর্তারা। সমানে বরাত আসছে বিদেশ থেকেও। কথা হচ্ছিল শ্যামসুন্দর মিষ্টান্ন ভান্ডারের ব্যবসায়ী রণজিৎ ও বাবলু ঘোষের সঙ্গে। দু’জনেই বলছিলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এই বছরে মোয়ার দামের কোনও বদল হয়নি। এক কেজির দাম সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। আবার ৪২০ টাকা কিংবা ৩২০ টাকা কেজি দরেও মোয়া পাওয়া যাচ্ছে। বেড়েছে বিক্রিও। অনলাইনে প্রতিদিন ৩০-৪০টা করে অর্ডার আসছে। এই তো ক’দিন আগে আমাদের ৫০-৬০ কেজি মোয়া গেল বেঙ্গালুরুতে। এক ভদ্রলোক তাঁর মেয়ের জন্মদিনে অর্ডার দিয়েছিলেন।’ বীণাপানি মিষ্টান্ন ভান্ডারের ব্যবসায়ী গনেশ দাস বলেন, ‘অনলাইনে অনেকে বেশি দাম নিয়ে নিচ্ছে। তাই সেখানে মোয়া কিনছেন না। তবে এমনিতেই লোকের মাধ্যমে হুগলি, নদীয়া, হাওড়া, কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় মোয়া প্যাকেজিং হয়ে চলে যাচ্ছে। করোনার মধ্যেও এবারে চাহিদা বেশ ভালো।’ মোয়ার মূল উপাদান বলতে কনকচুড় ধানের খই। তার সঙ্গে যত্নে মেশানো হয় নলেন গুড়, কিসমিস, খোয়া ক্ষীর, ঘি, কাজু। আপাতত দৃষ্টিতে তৈরি করা খুব সহজ। রাজ্যের বহু মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীও তৈরি করেন। কিন্তু জয়নগর-বহড়ুর মোয়ার কৌলিন্যকে ছুঁতে পারেননি কেউই। জয়নগরের সাফল্য ঠিক এখানেই। -নিজস্ব চিত্র