হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
এদিন ইস্ট বেঙ্গলের শতবর্ষের স্মরণীয় ক্রীড়া দিবস অনুষ্ঠানে চাঁদের হাট বসেছিল। ছয় থেকে নয়ের দশক পার করে লাল-হলুদে খেলে যাওয়া ফুটবলাররা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন অনুষ্ঠান। ৩২ বছর পর দেখা হতেই ‘মজিদ-জামশিদ’ জুটির মঞ্চে সখ্যতা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল খেলার মাঠে তাঁদের বোঝাপড়া কী ধরনের ছিল! মজিদের গলায় লাল-হলুদ উত্তরীয় পরিয়ে দেন জামশিদই।
শুরুতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন তিন অতিথি- সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার, নাট্য ব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মঞ্চে তখন উপস্থিত মজিদ বাসকার, আশিয়ান কাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ঘানার সুলে মুসা। মঞ্চে উপবিষ্ট প্রত্যেক অতিথিকে আজীবন সদস্যপদ দিয়ে সম্মানিত করে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব।
একশো বছরে পা দেওয়া ইস্ট বেঙ্গলের সোনালি ইতিহাসের শুভ সূচনা ‘পঞ্চপাণ্ডব’কে দিয়ে। সেই আমেদ-সালে-ধনরাজ-ভেঙ্কটেশ-আপ্পারাও’র পরিবারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গল কর্তারা। এর মধ্যে আমেদ খানের পুত্র আব্দুল মজিদ খান, সালের স্ত্রী সেনাবা সালে, পিএম ভেঙ্কটেশের পুত্র ভেঙ্কটেশ শ্রীনিবাসকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। বাকি দুই প্রাক্তন কিংবদন্তি ফুটবলারের পরিবারের সদস্যকে দেখা যায়নি। যেমন ক্রীড়া দিবসের মঞ্চে উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে সুধীর কর্মকার ও গৌতম সরকারের। যদিও মঞ্চের ব্যাকড্রপ স্ক্রিনে ইস্ট বেঙ্গলের সর্বকালের সেরা সাইডব্যাক সুধীর কর্মকার লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলার স্মৃতিচারণ করেছেন। সেই স্ক্রিনে ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবস ১ আগস্টে নেওয়া সাক্ষাৎকারে একের পর এক প্রাক্তনরা স্মৃতির অতলে ভেসে গিয়েছেন।
ছ’য়ের দশক থেকে শুরু হয় ইস্ট বেঙ্গল অধিনায়কদের সংবর্ধনা পর্ব। ছ’য়ের দশকের তিন ফুটবলার সুকুমার সমাজপতি, চন্দন ব্যানার্জি, পরিমল দে’কে দেখে আবেগে ভেসে যায় ইস্ট বেঙ্গল জনতা। তাঁরা হাত তুলে অভিবাদন গ্রহণ করেন সমর্থকদের। এরপর সাতের দশকের অধিনায়কদের বরণ করে নেওয়ার পালা। সুনীল ভট্টাচার্য, স্বপন সেনগুপ্ত, সমরেশ চৌধুরি, শ্যামল ঘোষ, শ্যাম থাপা, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, প্রশান্ত ব্যানার্জি প্রমুখ। তবে ১৯৭৯ সালের অধিনায়ক প্রশান্ত ব্যানার্জি যখন বললেন, ‘ইস্ট বেঙ্গল জার্সি গায়ে মাঠে নামলে ৩০ শতাংশ সেরাটা দেওয়ার ক্ষমতা থাকলে সমর্থকদের চিৎকারে সেই ক্ষমতা বেড়ে ১০০ শতাংশ হয়ে যেত।’ সঞ্চালক মীরের অনুরোধে প্রশান্ত ব্যানার্জির বক্তব্যে গরম হয়ে ওঠে ইনডোরের গ্যালারি।
আটের দশকের প্রথম বছরের অধিনায়ক সত্যজিৎ মিত্র ব্যক্তিগত কাজে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য (১৯৮১), ভিক্টর অমলরাজ (১৯৮২), মিহির বসু (১৯৮৩), ভাস্কর গাঙ্গুলি (১৯৮৪), বলাই মুখার্জি (১৯৮৫), তরুণ দে (১৯৮৬), অলোক সাহা (১৯৮৭) ও ১৯৮৮ ও ৯১ সালের অধিনায়ক বিকাশ পাঁজিসহ প্রায় সকলেই হাজির ছিলেন। এরপর ক্রমে নয় ও একবিংশ শতাব্দীর অধিনায়করা সম্মানিত হন। এরমধ্যে তুষার রক্ষিত, বিজেন সিং, ফাল্গুনি দত্ত, সুলে মুসা, মেহতাব হোসেন, সৌমিক দে, অভ্র মণ্ডল, খাবরা, অনীত ঘোষ, রহিম নবি, অর্ণব মণ্ডলরা শতবার্ষিকী স্মারক গ্রহণ করেন। ইস্ট বেঙ্গলে সংবর্ধিত কোচেদের মধ্যে সুভাষ ভৌমিক, আর্মান্দো কোলাসো, অলোক মুখার্জি, মৃদুল ব্যানার্জিরা উপস্থিত থাকলেও উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি সুব্রত ভট্টাচার্যের। তিনি অবশ্য ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘২০০৭ সালে ইস্ট বেঙ্গলের ফেডারেশন কাপ জয়ী দলের কোচ আমি। এটা আমার কোচিং জীবনের অন্যতম সেরা সাফল্য।’
এদিন ইস্ট বেঙ্গল মাঠে প্রাক্তনদের প্রীতি ম্যাচে রহিম নবি হ্যাটট্রিক করেন। দুই দলের কোচ ছিলেন সুভাষ ভৌমিক ও আর্মান্দো কোলাসো। মঙ্গলবার সকালে প্রয়াত সচিব দীপক (পল্টু) দাসের জন্মদিনে ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করেন মজিদ বাসকার। আর সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে সুলে মুসা ও মজিদ বাসকারের জন্য বরাদ্দ ছিল সবচেয়ে বেশি করতালি। যা ধ্বনি আরও ছাপিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে মজিদ বাসকারকে সংবর্ধিত করার সময়ে। তাঁকে শতবার্ষিকী স্মারক, মুদ্রা, তৈল চিত্র, উত্তরীয় পরিয়ে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্লাব সভাপতি ডাঃ প্রণব দাশগুপ্ত, সচিব কল্যাণ মজুমদার। অনুষ্ঠানের দুই পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইমন চক্রবর্তী ও নচিকেতা।