সামাজিক কর্মে সম্মান লাভ। স্ত্রী’র শরীর-স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। দেরীতে অর্থপ্রাপ্তি। ... বিশদ
এরকমই একজন ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর গ্রামের গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী যুবক অসিতকুমার সিংহ। এলাকার অহিংস ও সহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরকে ব্রিটিশ পুলিসের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ছেলে জয়ন্তকুমার সিংহ বলেন, কম বয়সেই বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামে নাম লিখিয়েছিলেন। মালদহের স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা কংগ্রেস নেতা হরিশ্চন্দ্রপুরের ভূমিপুত্র সুবোধকুমার মিশ্রের অনুগামী ছিলেন অসিতবাবু। সুবোধকুমার মিশ্র একাধিকবার ইংরেজদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য অসিতবাবুর সাহায্যে বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর এলাকায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন। একসময় অসিতবাবুর বাড়িতে এসেছেন সুচেতা কৃপালনী, বিনোবা ভাবের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। রাতের অন্ধকারে আমবাগানে গুপ্ত বৈঠক করেছেন এলাকার বিপ্লবীরা। তাঁদের দেখাশোনার ভার থাকত এই অসিতবাবুর কাঁধেই।
এছাড়াও প্রচুর বিপ্লবী রাত-বিরেতে পুলিসের চোখ এড়ানোর জন্য অসিতকুমার সিংহের শরণাপন্ন হতেন। কখনও বিপ্লবী এবং অহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরকে বিভিন্ন রকম ছদ্মবেশ ধারণ করিয়ে কিংবা আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে আত্মগোপনের ব্যবস্থা করে দিতেন। শুধু তাই নয়, সে সময় বাংলা, বিহার, ওড়িশার প্রচুর স্বাধীনতা সংগ্রামী মালদহের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। অনেক সময় রাত-বিরেতে তাঁদেরকেও আশ্রয় দিতেন তিনি। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার ভারতে প্রায় ২১ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকার প্রধান ছিলেন অসিতবাবু।
এদিকে, হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার পিপলা গ্রামের বাসিন্দা অতুলচন্দ্র মিশ্রও স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। জেলার ইতিহাসবিদ তথা অধ্যাপক সমরকুমার মিশ্র বলেন, অতুলবাবু ছিলেন মালদহ কালেক্টর অফিসের মুহুরি। ব্রিটিশ সরকারের কর্মী হলেও, তিনি মনে প্রাণে ছিলেন দেশপ্রেমী। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে মালদহ যাওয়া-আসা করতেন চাকরি সূত্রে। সেখানে চাকরি করে ব্রিটিশ অফিসারদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেছিলেন। সেই সুবাদে প্রচুর গুপ্ত সরকারি নথিপত্র ঘাটার সুযোগ পেয়েছিলেন। এবং সেখান থেকেই ব্রিটিশদের গুপ্ত খবর হরিশ্চন্দ্রপুরে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কানে পৌঁছে দিতেন তিনি। অতুলচন্দ্র মিশ্রের এনে দেওয়া ব্রিটিশদের সেই গুপ্ত খবরের জন্য এলাকার অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সহিংস বিপ্লবীরাও আগাম সচেতন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই আগাম খবর পেয়ে যাওয়াতে অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্রিটিশদের গ্রেপ্তারি এড়াতে পেরেছিলেন। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও অতুলচন্দ্র মিশ্র স্বাধীনতা সংগ্রামে এক বড় ভূমিকা পালন করে গেছেন। কিন্তু তার জন্য কোনও স্বীকৃতি আজও তিনি পাননি।
হরিশ্চন্দ্রপুরের ইতিহাসবিদ তথা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের তীব্র হিংসাত্মক রূপ হরিশ্চন্দ্রপুর, ভালুকা, রতুয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। রেললাইন উপড়ে ফেলা, টেলিগ্রাফের তার কেটে ফেলা, ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে দেওয়া, রেল ব্রিজ ভেঙে দেওয়া, ডাকঘর পুড়িয়ে দেওয়া সহ নানারকম কর্মসূচি পালন করছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর সহ জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জেলায় এই তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পুলিস প্রশাসন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।