ব্যবসায়ে যুক্ত হলে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো যাবে না। প্রেম প্রণয়ে বাধা। কারও সাথে ... বিশদ
কিন্তু না। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ গোটা পৃথিবী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আমিও পাচ্ছি। কীভাবে? না এখনও আমি এই ভাইরাসে আক্রান্ত নই। খাস কলকাতায় বড় হওয়া আমি মনে-প্রাণেও বাঙালি। একসময় সাংবাদিকতা করতাম। গত চার বছর রয়েছি টেক্সাসের ডালাস কাউন্টিতে। আমার শহরের নাম আরভিং। বেশ সুন্দর ছিমছাম শহর। ভারতীয়ই বেশি। আমার ১৩ মাসের মেয়েকে নিয়ে, তথ্যপ্রযু্ক্তি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী স্বামীর সঙ্গে দিব্যি হেসে খেলে, ঘুরে বেরিয়ে কেটে যাচ্ছিল। মাঝে মা, বাবা, শ্বশুর, শাশুড়িকেও নিয়ে এসেছিলাম এখানে। আর কয়েক মাস পরে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনা সেই পরিকল্পনায় ইতি টেনে দিয়েছে।
গত দু’সপ্তাহ বাড়ি থেকে বের হয়নি। আমার মেয়ে অল্প অল্প হাঁটতে শিখেছে। বাড়ি থেকে পার্কিং পর্যন্ত যেতে ভয় লাগে। ভাবি, যদি কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গে সংস্পর্শে আসি। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো বেঁচে থাকার লড়াই চালানোর চেষ্টা করব। কিন্তু মেয়েটার কী হবে? বাড়ির বারান্দা থেকে বাইরেটা দেখেই দিন কাটছে। রোজ মোবাইল, টিভিতে খবর দেখছি আর ভাবছি, আর কতদিন! বর বাড়ি থেকেই কাজ করছে। একদিকে ভালো। কারণ বাইরে গেলেই আতঙ্ক।
ঘরে ঢোকার আগে হাজারো নিয়ম-বিধি। হাত ধোয়া, গাড়ি-বাড়ির চাবি জীবাণুনাশক ওয়াইপ দিয়ে মুছে, স্নান করে ঘরে ঢোকা। তার আগে সোফায় বসা, জলের বোতল ধরা কিছুই করা যাবে না। বাইরে গেলে মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বার বার হাত পরিষ্কার করা, গাড়ির স্টিয়ারিং পরিষ্কার করা, লোকজনের থেকে দূরে থাকার মতো বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হচ্ছে। সবাই এগুলো করছে। এর মধ্যে কেউ যদি হাঁচি, কাশি দেয় তো ব্যাস! প্রায় ছোটাছুটি পড়ে যাচ্ছে। এটা কেমন বেঁচে থাকা?
এই পরিস্থিতির মধ্যে বর একদিন স্টোরে গিয়েছিল। দৈনন্দিন জিনিস কিনে এনেছে। স্টোরগুলির বেশিরভাগই খালি। কীভাবে জিনিস আসছে, আর খালি হয়ে যাচ্ছে তা কর্মীরাই ভেবে পাচ্ছেন না। এখন শুনছি রুটির আকাল শুরু হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর টয়লেট পেপার তো নেইই। এমনকী, দু’টো দোকান ঘুরে চাল কিনতে হয়েছে। বেবি ওয়াইপস, ডিসইনফেকট্যান্ট ওয়াইপসও নেই। অনেক খুঁজে একটা অনলাইন স্টোর থেকে অর্ডার দিয়ে আনাতে হল।
কিন্তু যে জিনিসগুলো ডেলিভারি হচ্ছে, সেগুলোও তো জীবাণুমুক্ত নয়। বাক্স খুলে সেগুলো বাড়িতে ঢোকানোও একটা মিশন। আগে হোম ডেলিভারি এলে খুব আনন্দ-উত্তেজনা হত। এখন শুধুই আতঙ্ক। কিছু এলে নিজেকে যেন বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াডের কর্মী মনে হয়। মুখে মাস্ক পরে, টিস্যু দিয়ে সেই বাক্সটা ধরি। ভেতরে এনে সেটাকে জীবাণুনাশক দিয়ে স্প্রে করি। তারপর বাক্স খুলে পণ্যটিকে ওয়াইপস দিয়ে মুছে ঘরে রাখি। আমাদের তবু সেই উপায় রয়েছে। কিন্তু, যাঁকে রাস্তায় ঘুরে ডেলিভারি দিতে হচ্ছে, তার অবস্থা ভাবুন তো!
স্টোরে গিয়ে শপিংও একটা অভিজ্ঞতা। স্টিয়ারিং ধরার আগে তো জীবাণুমুক্ত করতে হচ্ছেই। স্টোরে ঢুকে সবাই দেখছে, কোন সারিতে লোকজন কম। কোথাও লোক বেড়ে গেলেই পাশের সারিতে চলে যাচ্ছে। পাশের কেউ হাঁচি, কাশি দিলে কয়েকদিন ধরে লোকে আতঙ্কে ভাবছে, তারও বুঝি করোনা হয়ে গেল। কেনাকাটার পর বাড়ি ঢুকে জিনিসগুলো ঘরের এক কোণে রাখা হচ্ছে। তারপর চোরের মতো বাথরুম ঢুকে হাত, পা, চুল, ওয়ালেট সবই ধুয়ে বা মুছে নিতে হচ্ছে। এরপর কিনে আনা আলু-পটল ধোয়ার পালা। তালিকায় রয়েছে জুতোও। শুনছি এই ভাইরাস নাকি ১২দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই ভয় পিছু ছাড়ছে না।
একটা প্রতিবেদন পড়লাম, এক বছর সবাই আইসোলেশনে থাকলে ভাইরাসটা পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে যাবে। কিন্তু ততদিনে বিশ্ব অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। না খেতে পেয়েই সবাই মারা যাবে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে আমেরিকা এই মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ দেশ। তবে ভারতেও অবস্থা ভালো নয়। তাও মনে হচ্ছে, এই সময়টা দেশে থাকতে পারলে হয়তো ভালো হতো! আন্তর্জাতিক উড়ান চালু থাকা পর্যন্ত সেই সুযোগও ছিল। কিন্তু এখন দেশে ফেরা মানেই প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করা। কোয়ারেন্টাইন, পরীক্ষার পরও মানুষ সন্দেহের চোখে তাকাবে। করোনা যেন আমাদের সব দিক থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। আর এখনও যারা এটা নিয়ে মজা করছে, তাদের দেখে অবাক লাগছে। এবার অন্তত তারা সচেতন হতেই পারে।