রাহুল দত্ত, কলকাতা: প্রকৃতির ‘দামাল’ ছেলে ঘূর্ণিঝড়ের নতুন নামকরণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষের মুখে। তিতলি, বিজলি, আইলা, সিডার, নার্গিস, ফণী....গত কয়েক বছরে একের পর এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে ভারত সহ দক্ষিণ এশীয় এবং সংলগ্ন একাধিক দেশের উপরই। ২০০৪ সালের আগে এই সমস্ত অঞ্চলে ঝড়ের তথাকথিত কোনও নাম ছিল না। ওই বছরই ভারত সহ প্রতিবেশী আটটি দেশ মিলিতভাবে এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের উদ্যোগ নেয়। সেই মতো প্রতিটি দেশ মিলিত বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের আটটি করে নাম ঠিক করে। সেই নামেই এতদিন ধরে ঘূর্ণিঝড়গুলি পরিচিত হচ্ছিল। কিন্তু, এবার সেই নামাবলির ভাণ্ডার খালি হওয়ার মুখে, নয়া নামকরণের যাগযজ্ঞও শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী বছরের গোড়াতেই পরের কয়েক দশকের ঘূর্ণিঝড়ের নয়া নামের তালিকা প্রকাশ হতে চলেছে। এখনও পর্যন্ত ‘দস্যি ছেলে’ ঘূর্ণিঝড়ের ১০৪টি নাম জমা পড়েছে। এবার নামকরণে হাত বাড়িয়েছে আগের আটটি দেশের সঙ্গে নতুন পাঁচটি দেশও।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের সর্বোচ্চ কর্তা এম মহাপাত্র জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় নামের তালিকা ইতিমধ্যে ভারত সহ সব দেশ জমা দিয়ে দিয়েছে। নামের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। শীঘ্রই সব দেশের প্রতিনিধিরা আবার মিলিত হয়ে তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর দেবে। পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা কেন্দ্রের প্রধান আবহাওয়াবিদ মহম্মদ হানিফ জানিয়েছেন, এবার যেহেতু আগেরবারের থেকে বেশি দেশকে নিয়ে এই নামকরণের কাজ করা হয়েছে, তাই গোটা প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে তিনি আশাবাদী খুব শীঘ্রই নতুন নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। উল্লেখ্য, গতবার (২০০৪ সালে) ৮টি দেশ (ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওমান, মায়ানমার, মালদ্বীপ এবং থাইল্যান্ড) এই নামের তালিকা তৈরি করেছিল। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও পাঁচটি দেশ— ইয়েমেন, সৌদি আরব, কাতার, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।
মহাপাত্র বলেন, এতগুলি দেশ থেকে নাম নিয়ে, তারপরে তা বাছাই করা হয়েছে। তিনি জানিয়ে দেন, আগের তালিকার এখনও দুটো ঝড়ের নাম (শ্রীলঙ্কার দেওয়া পবন এবং থাইল্যান্ডের দেওয়া উম-পুন) বাকি রয়েছে। আরও দুটি ঘূর্ণিঝড় হতে হতে নয়া নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ২০০৪ সালে তৈরি নামের তালিকা প্রায় ১৬ বছর চলল। নতুন তালিকার নামগুলি আরও বেশিদিন চলবে বলেই জানিয়েছেন হানিফ।
তবে প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ বাড়ছে, তাই নতুন তালিকা প্রকাশের আগেই যদি ফের নতুন ঝড় চলে আসে তাহলে কী হবে? পাকিস্তানের সামুদ্রিক আবহাওয়া বিভাগের প্রধান আব্দুল কায়ুম ভুট্টো জানিয়েছেন, সেক্ষেত্রে ২০০৪ সালে শুরু হওয়া তালিকা অনুযায়ী ফের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া শুরু হতে পারে। তবে খুব জরুরি ক্ষেত্রেই একমাত্র এই পদক্ষেপ করা হবে। মালদ্বীপের আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আলি আশরাফ বলেন, আর মাত্র দুটি ঝড়ের নাম পরে রয়েছে। তাই দ্রুত নয়া নাম চূড়ান্ত করতে হবে সেটা তাঁরাও জানেন। তাই গোটা প্রক্রিয়াটা যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেবিষয়ে সব দেশই সচেষ্ট। ওমানের আবহাওয়া সতর্কীকরণ বিভাগের অধিকর্তা বদর আল-রুমহি বলেন, দ্রুত বৈঠক করে নয়া নামের তালিকাতে সিলমোহর দিতে তাঁরাও প্রবলভাবে আগ্রহী। শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডিজি কে এইচ এম এস প্রেমলাল বলেন, সব দেশ ইতিমধ্যে নামের তালিকা কমিটির কাছে জমা করে দিয়েছে। তিনিও আশাবাদী সময়েই ঘূর্ণিঝড়ের নয়া নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে।