বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
টানা লকডাউন উঠে যাওয়ার পর মন শক্ত করে সকাল-বিকেল দোকান ও কারখানা খুলেছিলেন অনেকে। কিন্তু দিনভর মাছি তাড়ানো ছাড়া আর কিছুই হয়নি। নেই ক্রেতা, নেই বড় বড় দোকানের কোনও অর্ডার। তাই সোনার গয়না তৈরির কাজে বসে না থেকে পেশা বদলে নিয়েছেন অনেকেই। কেউ আবার জব কার্ড জোগাড় করে গ্রামে গিয়ে মাটি কোপাচ্ছেন। বর্তমানে স্বর্ণ ব্যবসায়ী তথা স্বর্ণ কারিগরদের রোজগার মাথায় উঠেছে সোনার মূল্যবৃদ্ধি তথা করোনা সংক্রমণের জেরে। তাই বাড়িতে অন্ন সংস্থানের জন্য বিকল্প পেশাকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
বরানগরের স্বাধীন পল্লি, মান্নার পাড়া, বেণী কলোনি, বিধান পার্কের মতো জায়গায় যেখানে পুজোর আগে থেকে অর্ডার আসতে শুরু করত, সেখানে গিয়ে দেখা গেল, খাঁ খাঁ করছে চারপাশ। যেক’টি দোকান খোলা, তাতে শেষ কবে খরিদ্দার এসেছেন, তা জোর করেও মনে করতে পারলেন না বিক্রেতারা। প্রায় সব বাড়ির নীচেই গয়না তৈরির কারখানা। সেগুলির বেশিরভাগই তালাবন্ধ। কয়েকটি ওয়ার্কশপে কাজ হচ্ছে।
কিন্তু যেখানে ১০-১২ জন কাজ করতেন, সেখানে তিন থেকে চারজন কারিগর। প্রত্যেককে কাজে যুক্ত করলে মজুরি দেব কীভাবে, প্রশ্ন তুললেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী তাপস কোটাল। বললেন, ‘এখন যেটুকু কাজ আসছে, তা দিয়ে বর্তমানে যাঁরা আছেন, তাঁদেরই মজুরি দিতে পারছি না। বাকিদের কথা তো ছেড়েই দিয়েছি। যেটুকু সঞ্চয় ছিল, তা কার্যত শেষ। দিনের পর দিন কারখানার ঝাঁপ বন্ধ রেখে কী করে চলবে, বলুন তো! কারিগররা বাধ্য হয়ে নিজ নিজ গ্রামে চলে গিয়েছেন।’
অন্য এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী অজয় গুছাইত বললেন, ‘সোনার ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরেই মন্দা চলছিল। কোনওভাবে টিকে থাকার লড়াই চলছিল। তাও শেষ হয়ে গেল। করোনা ধাক্কায় স্বর্ণ ব্যাবসা সম্পূর্ণ বেসামাল। মজুরি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। বুঝতে পারছি না, কবে এই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশজুড়ে আর্থিক মন্দার কারণে স্বর্ণ ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বেসরকারি ক্ষেত্রে লাগাতার ছাঁটাই, কর্মহীনতার কারণে একটা বড় অংশের মানুষ শুধু মাত্র সাজসজ্জার কারণে সোনা কেনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। একই সঙ্গে ছোট ছোট ব্যবসায় বিপর্যয় এমনকী কৃষকদের হাতে টাকা না-থাকার কারণে ছোট ও মাঝারি দোকানগুলিতে গয়নার বিক্রি ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকতে শুরু করেছিল। কিন্তু লকডাউনে তা চরম আকার নেয়।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘুরে জানা গেল, প্রায় দু’লক্ষের কাছাকাছি কারিগর এখানে এই কাজে যুক্ত থাকেন। হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার বাসিন্দা এখানে কাজ করেন। কোভিড পরিস্থিতিতে বর্তমানে ৫০ হাজারের কম কারিগর এখন রয়েছে এই বিশাল এলাকায়। বাকিরা বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন। অজয়বাবু বললেন, পুজোর আগে প্রতিবার বড় বড় গয়নার দোকান থেকে অর্ডার আসে। কিন্তু সেখান থেকে এ বার জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না। সেই কারণে খরিদ্দার নেই। স্বাভাবিকভাবেই বরাতও নেই।