ব্যবসায়ে যুক্ত হলে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো যাবে না। প্রেম প্রণয়ে বাধা। কারও সাথে ... বিশদ
কিন্তু মেডিকেল ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি বি জে মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি একটি নেশারও শিকার হয়ে পড়েন। এ নেশা যে সে নেশা নয়! থিয়েটারের নেশা। আর থিয়েটারের নেশা ধরলে যা হয়! সমমনস্ক কয়েকজনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে খুলে ফেললেন একটি নাটকের দল ‘প্রগ্রেসিভ ড্রামাটিক অ্যাসোসিয়েশন’। নাটক এবং ডাক্তারি পাশাপাশি চলতে লাগল। পুনেতে ছ’ বছর ডাক্তারি করার পর কানাডা ও ইংলন্ডে পাড়ি দিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখানে থেকে গেলেন তানজানিয়া। এরপর কয়েক বছর বাদে ফিরে এলেন দেশে। ফের শুরু করলেন থিয়েটার করা। ১৯৬৯ সাল নাগাদ ডাক্তারি টাক্তারি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে নেমে পড়লেন থিয়েটার করতে। এই পর্যায়ে তাঁর প্রথম অভিনয় বসন্ত কানেতকরের লেখা ‘ওশালা মৃত্যু’ নামে একটি মারাঠি নাটকে। এর পর ‘নটসম্রাট’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করে তিনি মারাঠি থিয়েটারে কিংবদন্তী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেলেন। এরপর মারাঠি সিনেমা এবং ক্রমে হিন্দি সিনেমা থেকে ডাক আসতে থাকল। বহু সুপারহিট হিন্দি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। একইসঙ্গে থিয়েটারও করতেন। কলকাতায় বহুবার এসেছেন তাঁর নাটক নিয়ে। একটি সাক্ষাৎকারে ডাঃ লাগু বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল। মানুষজনকে খুব নকল করতেন। তাই দেখে অনেকেই তাঁর বাবা-মা’কে বলতেন, এ ছেলে বড় হলে অভিনেতা হবে। পরবর্তীকালে ডাঃ লাগু অভিনয় নিয়ে বিস্তর পড়াশুনো ও চর্চা করেছিলেন। তিনি নিজেই অন্য একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, স্তানিস্লাভস্কি, ব্রেখট্ এসব পড়ার পরও তিনি নিজের অভিনয়রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কখনওই অভিনেতার চরিত্রের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম হয়ে পড়ায় বিশ্বাসী ছিলেন না। শম্ভু মিত্রের কাছে শোনা একটি কথাকে খুব বিশ্বাস করতেন তিনি। শম্ভু মিত্র একবার তাঁকে বলেছিলেন, অভিনেতাকে হতে হবে একদিকে অ্যাথলেট ও অন্যদিকে দার্শনিক। একজন অভিনেতা হলেন একাধারে একটি যন্ত্র উপকরণ ও সেই যন্ত্রের পরিচালকও।
তাঁর অভিনেতা এবং ডাক্তারি সত্তার পাশাপাশি ডাঃ লাগুর আরও একটি সত্তা ছিল। তা হল কুসংস্কারের বিরোধী যোদ্ধা। মহারাষ্ট্রের কুসংস্কার বিরোধী লড়াইয়ে সবার আগে থাকতেন তিনি। ডাঃ আব্রাহাম কভুরের উপর একটি বইয়ের মুখবন্ধ লিখতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভগবানের এবার অবসর নেওয়ার সময় হয়েছে’। এ লেখা নিয়ে সেই সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। শুধু কুসংস্কারের বিরোধীই নন, ডাঃ লাগু ছিলেন চরম নাস্তিক এবং সে কথা সর্বজনসমক্ষে তিনি ঘোষণা করতেও পিছপা ছিলেন না। আজকে যখন চারিদিকে ধর্ম, সম্প্রদায় নিয়ে হিংসা আর হানাহানি চলছে সেই সময়ে ডাঃ শ্রীরাম লাগুর মতো এক যোদ্ধার অভাব দেশ অনুভব করবে।