ব্যবসায়ে যুক্ত হলে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো যাবে না। প্রেম প্রণয়ে বাধা। কারও সাথে ... বিশদ
বিষয়গত দিক থেকে ‘বিষদিগ্ধা’ বেশ পরিচিত। দাম্পত্য অস্থিরতা এবং ব্যক্তিত্বের সংঘাত। স্বামী সফল নাট্যকার। স্ত্রী ভালো অভিনেত্রী কিন্তু বিয়ের পর স্বেচ্ছায় অভিনয় ছেড়ে ঘরের বউ। কিন্তু মন অস্থির, না পারে সংসার করতে, না পারে মা হতে, না পারে নিজের সৃষ্টিশীলতাকে প্রকাশ করতে। সে ভালোবাসতে চায়, মা হতে চায়। কিন্তু সন্দেহ, হিংসায় জর্জরিত মনের গভীরে ফল্গুর মত বিষের ধারা বয়ে চলে। যে বিষে ছারখার হয় সংসার, স্বামী এবং অবশ্যই সে নিজে। পরিচিত প্লটকে আকর্ষণীয় করে তোলেন মুখ্য দুই কুশীলব গোরা এবং দেবাহূতি।
ধারে, ভারে এবং অভিনবত্বে দ্বিতীয় নাটক ‘বিদ্যার সাগরেরা’ মনের মধ্যে ধাক্কা মারে। জোরালো প্রাসঙ্গিকতা নাটকটির মূল আকর্ষণ।
আপাত শিক্ষিত, সৎ, নিরপেক্ষ, সংস্কারমুক্ত চারজন মানুষ। সমাজের প্রথম সারিতে যাঁদের অবস্থান। যাঁদের কার্যকলাপ সাধারণকে প্রেরণা জোগায়। এমন চারজন বিদ্বজ্জন একত্র হয়েছেন। স্বনামধন্য কবি ও অধ্যাপিকা, নামী সংবাদিক, গুণী অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় নায়ক। বিদ্যাসাগরের ২০০তম জন্মদিবসের প্রাক্কালে এঁরা চলেছেন এক গ্রামে, ঈশ্বচন্দ্রের উপর বক্তৃতা দিতে। মাঝরাস্তায় এই চার বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করে কে বা কারা। ধীরে ধীরে জানা যায় অপহরণকারীরা আসলে মাওবাদী বা নকশাল। যাদের রয়েছে একটা আদর্শ। হয়তো তাদের আদর্শ এবং এগিয়ে চলার পথের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। তবুও তারা তাদের কাজের প্রতি সৎ। তাদের দলনায়কের মুখোমুখি হয় উচ্চবিত্ত সমাজের চার প্রতিভূ। মৃত্যুভয়ে কুকড়ে যাওয়া চারটি মানুষের, দলনেতার প্রশ্নবাণে, ন্যায্য কথার তীব্র আক্রমণে মুখোশ খুলে পড়ে। স্বার্থপর, নীচ, আমিত্বময় জগতের বাসিন্দাদের সামনে আয়নাটা তুলে ধরে সেই দলপতি। বিদ্যার অহং এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠা ও নামের অহংকারে এই মানুষগুলো আজ স্বঘোষিত বিদ্ধান। অথচ যাঁর জন্মদিবসে বক্তব্য রাখার জন্য এঁরা যাচ্ছিলেন, সেই ঈশ্বরচন্দ্রকে ‘বিদ্যাসাগর’ অ্যাখ্যা দিয়েছে সমগ্র দেশবাসী। তাঁর প্রকৃত শিক্ষা, তাঁর নির্ভীকতা, তাঁর সত্যতা, তাঁর সততা, তাঁর পরোপকারী মনের জন্য। অবশেষে ধীরে ধীরে আসল মনের দরজা খুলে যায়। এই চার বুদ্ধিজীবীর আত্মগ্লানি, ভুল সংশোধনের ইচ্ছা, সত্যের কাছে আত্মনিবেদনের মধ্যে দিয়ে নির্দেশক এক নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছেন। সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন দর্শকদের মধ্যেও। এখানেই ‘বিদ্যার সাগরেরা’ সার্থক। সৌরভ সেনের হিরো আরও একটু দৃঢ়, আরও একটু শক্ত হলে একটা ভারসাম্য তৈরি হতে পারত। তুলনায় সাংবাদিকের চরিত্রে কৌস্তুভ ভৌমিক এবং অধ্যাপকরূপী শুভজিত মুখোপাধ্যায় তাঁদের চরিত্রের ধার এবং ভারকে যথাযথ বহন করেছেন। চমৎকার লেগেছে কবি অধ্যাপিকার চরিত্রে মৌলিকা সাজোয়ালকে। অন্যরকম এক ভালোলাগা জাগায় পল্লব মিশ্র এবং হুসনে শবনম।
দুটি নাটকের ভাব, বক্তব্য আলাদা। সেই ভাবেই নাটকদুটিকে দক্ষতা এবং যত্নের সঙ্গে মঞ্চস্থ করেছেন নির্দেশক গৌরাঙ্গ দন্ডপাট।