উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
বাল্য বিবাহ, শিশু পাচার, ইভটিজিং বন্ধে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে ভালো কাজের সুবাদের আলিপুরদুয়ারের পাঁচ আদিবাসী নাবালিকা রাজ্য সরকারের ‘বীরঙ্গনা’ পুরস্কার পাচ্ছে। পাঁচজনেরই বাড়ি চা বাগানে। জেলাশাসক সুরেন্দ্রনাথ মিনা বলেন, এটি খুবই খুশির খবর। পুরস্কার নিতে ওই পাঁচ নাবালিকাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা প্রশাসনের তরফে করা হচ্ছে।
বীরপাড়া চা বাগানের ১৬ বছরের বীণা টোপ্পো, লঙ্কাপাড়া চা বাগানের ১৭ বছরের লক্ষ্মী রায়, বীরপাড়ার দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া রাশিতা চিকবরাইক, ভাতখাওয়া চা বাগানের ১৫ বছরের নাবালিকা সরোজিনী চিকবরাইক ও বীরপাড়ার পার্ক লাইনের ১৭ বছরের অঞ্জলি খেঁড়িয়া কলকাতায় যাবে পুরস্কার নিতে।
কী করেছে জেলার এই পাঁচ বীরাঙ্গনা? জেলা সমাজকল্যাণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বীণা বীরপাড়া চা বাগান এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধে দারুণ কাজ করেছে। লঙ্কাপাড়া চা বাগানের লক্ষ্মী প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে এলাকায় দু’টি বাল্য বিবাহ রুখে দিয়েছে। রাশিতা তার এলাকায় পুলিসের সাহায্য নিয়ে দু’বার শিশু পাচারের চেষ্টা রুখে দিয়েছিল।
স্কুল যাওয়ার পথে মেয়েদের উদ্দেশ্যে নানা কটূক্তি করত এলাকার কয়েকজন রোমিও যুবক। ইভটিজিংয়ের ভয়ে স্কুলের মেয়েরা সবসময় তটস্থ থাকত। ভয় না পেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সরোজিনী। বান্ধবীদের নিয়ে ওই রোমিওদের পাকড়াও করে স্থানীয় পঞ্চায়েতে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিল সে। আর কোভিড পরিস্থিতিতে অঞ্জলি হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেশিন তৈরি করে এলাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে নিজের বিয়ে রুখে রাজ্য স্তরে বীরাঙ্গনা পুরস্কার পেতে চলেছে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জয়া রায়। তার মা নেই। বাবা পেশায় দিনমজুর। পড়াশুনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল বাল্যবিবাহ। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে হার মেনেছে সেই বাধা। বিয়ে রুখতে দ্বাদশ শ্রেণীর ওই ছাত্রী চাইল্ড লাইনে যোগাযোগ করেছিল। শিশু সুরক্ষা কমিশনের সহযোগিতায় নাবালিকা ওই ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করে প্রশাসন। সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং করা হয়।
জলপাইগুড়ির সমাজ কল্যাণ আধিকারিক দীনবন্ধু সাহা বলেন, ওই মেয়েটির এই লড়াই সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
মালদহের চাঁচলের কনুয়া মধ্যপাড়ায় বাড়ি সঞ্জয় রবিদাসের। অভাব তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশুনার খরচ জোগাতে জুতো সেলাই ও পালিশ করে উপার্জন করেছে সে। সেভাবেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলও করেছে। জেলা সমাজ কল্যাণ দপ্তরের জেলা আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি বলেন, সঞ্জয়ের এই সাফল্যে আমরা গর্বিত।
শৈশবেই বাবা জগদীশ রবিদাসকে হারিয়েছিল সঞ্জয়। তারপর থেকেই শুরু হয় আর্থিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই। মা কল্যাণী রবিদাস দিনমজুরের কাজ করেন। সঞ্জয় সংসারের সুরাহার জন্য লেগে পড়ে জুতো পালিশ ও সেলাইয়ের কাজে। এত কিছুর পরেও পড়াশোনা ছাড়েনি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৬৫ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল সে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।