পিতার স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন পাঠনে পরিশ্রমী হলে ... বিশদ
ঘরের দাওয়ায় বসে পুরুষেরা বেশির ভাগ টুকটুক করে কাঠ খোদাই করে চলেছেন, নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে নানা রকম পুতুল- রাজা থেকে সান্ত্রী, পৌরাণিক দেবতা থেকে জন্তু-জানোয়ার থেকে বলদে টানা গাড়ি, আরও কত কী। কোথাও বা মহিলারা রং চড়াচ্ছেন সেই কাঠের গায়ে। ইতস্তত ছড়িয়ে আছে অর্ধসমাপ্ত কাজ। কোনওটা হাওদা পিঠে হাতি, কোনওটা গণেশ, কোথাও আবার রঙের অপেক্ষায় দশাবতার মূর্তি কিংবা একসারি বাজনদার। স্থানীয় ভাষায় এই কাঠের পুতুলকে বলা হয় ‘বোম্মালা’ আর আমরা এসে পৌঁছেছি কোণ্ডাপল্লির ‘বোম্মালা কলোনি’তে। যেখানে আধুনিক খেলনার সঙ্গে অসম লড়াই করেও এই চিরাচরিত শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন গ্রামের শিল্পীরা। একসময় ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হলেও, এখন এদের তেমন বাজার নেই। সাম্প্রতিককালে কোণ্ডাপল্লির খেলনা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) ট্যাগ বা স্বীকৃতি পেয়েছে।
আমাদের গাড়ির ড্রাইভার তাঁর এক পরিচিত শিল্পীর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জানালেন কোণ্ডাপল্লির পুতুল শিল্পের ইতিহাস। স্থানীয় লোক-কথা অনুযায়ী মহাদেবের বরপ্রাপ্ত মুক্তঋষি ছিলেন উচ্চমানের শিল্পী। বর্তমান শিল্পীরা এই ঋষির বংশধর বলে মনে করেন নিজেদের। ইতিহাস বলে আর্যক্ষত্রিয় শ্রেণীভুক্ত এই শিল্পীদের পূর্বপুরুষেরা চারশো বছর আগে রাজস্থান থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। এখন আর পাঁচটা গ্রামের মতো দেখতে হলেও, এক সময় এই অঞ্চল বেশ বর্ধিষ্ণু ছিল। ১৩২৫ সালে রেড্ডি বংশের হাতে পত্তন হয় বিশাল দুর্গের, আজকেও যার ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় গ্রামের এক প্রান্তে। বাহমনি এবং বিজয়নগর বংশ হয়ে মুঘল, নিজামদের হাত ঘুরে ইংরেজদের হাতে যায় এই দুর্গ। তাই পুতুল শিল্পের মধ্যেও রাজস্থানি, ইসলামিক ও ইউরোপীয় ভাবধারার প্রকাশ দেখা যায়।
এই পুতুল তৈরির জন্য ব্যবহার হয় এক বিশেষ গাছের কাঠ, যার নাম পনিকি। এই কাঠ বেশ নরম হয়। আগে দুর্গের নীচে এই পনিকি গাছের জঙ্গল ছিল, তখন অনায়াসে পাওয়া যেত এই কাঠ। রং করার জন্য ব্যবহৃত হতো ভেষজ রং। কিন্তু এখন এই কাঠের জোগান অনেক কমে গিয়েছে বলে জানালেন শিল্পীরা। তাই খরচ বেড়ে গিয়েছে। আবার ভেষজ রঙের ব্যবহারও কমেছে। দাম নাগালের মধ্যে রাখার জন্যে বাজারে সহজলভ্য কৃত্রিম রং ব্যবহার হচ্ছে। ঝলমলে রং যেমন লাল, সবুজ, গোলাপি, গাঢ় নীল ইত্যাদি রঙের ব্যবহার বেশি। পুতুলের প্রতিটি অংশ আলাদা তৈরি হয়, তারপর তেঁতুল বীজ থেকে তৈরি আঠা দিয়ে জুড়ে নেওয়া হয়. তারপর চলে রঙের পালা। ছাগলের লোমে তৈরি সরু তুলি দিয়ে আঁকা হয় বিশেষ ফিচারগুলি, যেমন চোখ-নাক, গোঁফ ইত্যাদি।
অন্ধ্রপ্রদেশ বেড়াতে গেলে অবশ্যই এই খেলনা স্মারক হিসেবে কিনতে পারেন। গ্রামেই দোকান আছে। অথবা শিল্পীদের থেকে সরাসরি কিনতে পারেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, চিরাচরিত খেলনার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে আধুনিক ডিজাইনের খেলনা বা ঘর সাজাবার জিনিস। এমনকী কোমর দোলানো তাঞ্জোর ডল ও পাবেন এখানে। আর যাঁরা কোণ্ডাপল্লি যেতে পারছেন না, তাঁদের আশা মেটাতে পারে অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারি এম্পোরিয়াম।
উত্তরা গঙ্গোপাধ্যায়