পিতার স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন পাঠনে পরিশ্রমী হলে ... বিশদ
রূপসু ও চাংথাং এলাকার নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়ায় এখানকার আদিবাসী যাযাবর চাঙপাদের নানা দল। চাঙপাদের মূল জীবিকা পশুপালন অর্থাৎ ভেড়া, চমরিগাই, ঘোড়া এবং অতি অবশ্যই পশমিনা ছাগল পালন। এই ছাগলের লোম থেকে তৈরি হওয়া উল থেকে তৈরি হয় মহার্ঘ্য পশমিনা শাল। চাঙপারা নিজেরা পশমিনা শাল তৈরি করে না। কিন্তু পশমিনা ছাগলের লোম কেটে কাছাকাছি শহরে বা গ্রামে ব্যবসাদারদের কাছে বিক্রি করে ওদের দিন গুজরান হয়। পশমিনা ছাগলের প্রিয় খাদ্য ঘাস। পনেরো হাজার ফুটের উপরের উচ্চতায় যে ঘাস জন্মায় তা খেলে ওদের শরীর থেকে উচ্চমানের লোম পাওয়া যায়। তাই সেই ধরনের ঘাসের খোঁজে চাঙপারা ভয়ঙ্কর প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে বারবার স্থান বদল করে এই বৃষ্টিহীন, বৃক্ষহীন, রুক্ষ পাহাড়ের মধ্যে যাযাবর জীবন কাটায়।
নির্দিষ্ট দিনে সকাল সকাল কোরজোক গ্রাম থেকে চাঙপাদের অবস্থান জেনে নিয়ে রওনা দিন। সম্ভব হলে চাঙপা ভাষা জানা একজন গাইড সঙ্গে নিন। কিছুটা গাড়িতে আর কিছুটা পায়ে হেঁটে যান ওদের অস্থায়ী আস্থানায়। জোব্বা পরা বন্ধুবৎসল চাঙপাদের ‘জুলে’ বলে সম্বোধন করুন। জুলে মানে নমস্কার। সঙ্গে সঙ্গে চোখে কৌতূহল আর মুখে সারল্যমাখা হাসিতে প্রত্যুত্তরে আসবে ‘জুলে’।
সকালবেলা চাঙপা কলোনিতে খুব ব্যস্ততা। কর্মক্ষম চাঙপা নারীপুরুষরা পোষ্যদের দুধ দুইয়ে অর্গলমুক্ত করে দিচ্ছে আর ছাগল, ভেড়া সব তিড়িং তিড়িং করে লাফাতে লাফাতে দূরে পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে খাবারের সন্ধানে। কেউ কেউ পশমিনা ছাগলদের লোম কাটার পর ছাগলগুলিকে পাহাড়ি ঝোরার বরফ গলা জলে স্নান করাতে ব্যস্ত। জোব্বা পরা বয়স্ক চাঙপারা কেউ কেউ রোদ পোহাচ্ছে, কেউ বা গৃহকর্মে ব্যস্ত। অনুমতি নিয়ে ঢুকে পড়ুন কোনও তাঁবুতে। আপনি আপ্যায়িত হবেন তিব্বতি নুন চায়ে। পারলে প্রাতঃরাশে ওদের সঙ্গে অংশ নিন, মিলবে সাম্পা ছাতু (আমাদের বার্লি) আর দুধ। রান্না হচ্ছে টিনের বাক্সের দুচুল্লির উনুনে, যার একপাশ থেকে একটা টিনের পাইপ উঠে গেছে তাঁবুর বাইরে। ওটা ধোঁয়া বেরনোর চিমনি। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় পশুর শুকনো মল আর রুক্ষ পাহাড় থেকে সংগৃহীত ছোট ছোট ঝোপের শুকনো মূল। দুপুরে আবার সাম্পা ছাতু আর মাংস, ভাগ্য ভালো থাকলে মিলতে পারে খিচুড়ি। আপনাকে ভালো লেগে গেলে চাঙপা মেয়েরা নেচে দেখাবে ওদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক নাচ ‘জাব্রো নাচ’। উন্মুক্ত আকাশের নীচে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বারো হাজার ফুট উচ্চতার পাহাড়ি পটভূমিকায়, যাযাবর চাঙপা মেয়েরা ওদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মিষ্টি সুরে গান গাইতে গাইতে শ্লথ গতিতে নাচছে, এ দৃশ্য আপনার হৃদয়ে সারা জীবনের জন্য আঁকা হয়ে যাবে এটা নিশ্চিত।
প্রয়োজনীয় তথ্য:
লাদাখের লেহ শহর থেকে গাড়িতে সোমোরিরি লেকের ধারে কোরজোক গ্রামে পৌঁছতে ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। থাকার জন্য আছে হোম স্টে, হোটেল এবং তাঁবু। উচ্চতাজনিত শারীরিক সমস্যার জন্য ওষুধপত্র সঙ্গে রাখুন। কোরজোক গ্রামের বৌদ্ধগুম্ফায় জাঁকজমকপূর্ণ বাৎসরিক উৎসব ‘কোরজোক গুস্তর’-এর সঙ্গে সময় মিলিয়ে গেলে ওটা উপরি পাওনা। এ বছরের কোরজোক গুস্তর অনুষ্ঠিত হবে ১৫ আর ১৬ জুলাই।
ছবি: লেখক