ব্যবসায়ে যুক্ত হলে এই মুহূর্তে খুব একটা ভালো যাবে না। প্রেম প্রণয়ে বাধা। কারও সাথে ... বিশদ
শিল্পপতি প্রতাপ রায় ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বহুদিন। ছেলে সুমন মানুষ হয়েছে মায়ের কাছে শান্তিনিকেতনে, মেয়ে মিঠুয়া বাবার কাছে আমেরিকায়। দাদা-বোন কেউ জানে না পরস্পরের অস্তিত্বের কথা। আজীবন মায়ের ছায়ায় মানুষ হয়েও সুমন বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময় বাবার সাহায্য চায়। মিঠুয়া আচমকা জানতে পারে তার দাদা, তার মায়ের কথা। মিঠুয়া অনুভব করে তার মায়ের প্রতি নাড়ির টান, ঠিক যখন তার নিজের নাড়ির বন্ধনে বেড়ে উঠছে এক শিশু, তার প্রেমিক প্রীতমের ঔরসে। প্রতাপের বোন জয়ার তত্ত্বাবধানে মানুষ হলেও মিঠুয়ার কাছে নাড়ির টানটাই শেষ পর্যন্ত বড় হয়ে ওঠে, একদিকে যেমন তার নিজের জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি, আর একদিকে তার ভাবী সন্তানের প্রতি, যাকে সে জন্ম দিতে চায়। তাই তো সে স্বার্থপরের মতো মায়ের থেকে দূরে চলে যাওয়া দাদার অভাব ভোলাতে মায়ের কাছেই থেকে যেতে চায়, আবার একই সঙ্গে তার প্রেমিক প্রীতমের কাছ থেকে গর্ভপাতের শেষ কথা শোনার পরও পৃথিবীর আলো দেখাতে চায় তার সন্তানকে।
অভিনয়ে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রতিমা) প্রথমে ততটা স্বচ্ছন্দ না থাকলেও পরের দিকে সেটা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন। তার গলায় ‘কেমন করে গাইছে আকাশ’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা শোনাটা অবশ্যই বাড়তি পাওনা। রাহুলদেব বসুর (সুমন) কিছুই করার ছিল না। পুরনো চাকর কালিপদর ভূমিকায় ডন রায়ের সংলাপ, ‘তোমরা কি জন্মাবার পর নিজের মাকেও থ্যাঙ্কু বলেছিলে?’ উপভোগ্য লাগে। প্রতিমার কাজের মেয়ে লক্ষ্মীর ভূমিকায় কৌশিকী গুহ সাবলীল। স্বল্প পরিসরে প্রীতম ব্যাসের চরিত্রাভিনেতাকে খুব ভালো লাগে। প্রীতমের দ্বন্দ্ব, পারিবারিক চাপের কাছে তার অসহায়তা বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। খেয়ালী দস্তিদার (জয়া), ও সব্যসাচী চক্রবর্তী (প্রতাপ রায়) যথাযথ। তবে, চমকে দিয়েছেন অনুষা বিশ্বনাথন (মিঠুয়া)। তাঁর বিদেশি অ্যাকসেন্টে ইংরেজি ও বিদেশিদের মতো বাংলা উচ্চারণ এবং সর্বোপরি মিঠুয়ার জীবনের ক্রাইসিস, তার আবেগ, তার ছেলেমানুষী সবটাই তিনি অসম্ভব প্রাণবন্ত অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে জীবন্ত করে তুলেছেন। ভালো লাগে আড়ম্বরহীন মঞ্চসজ্জা (বিলু দত্তকৃত) ও ‘জোনাল লাইটিং’-এর (সুদীপকুমার সান্যালকৃত) ব্যবহার। তবে প্রতাপ রায়ের বাড়ির সদর দরজাটির খোলা-বন্ধের প্রতি পরবর্তী শো’তে খেয়াল রাখতে হবে, কারণ, অভিনেতারা মাঝে মাঝেই কোন দিকে সেটি খুলবেন তাই নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছিলেন। খুব অভিনব লাগে ‘ভিডিও কল’-এর মাধ্যমে কথা বলার দৃশ্যগুলি। এ জন্য নির্দেশিকাকে ধন্যবাদ। দু’একটি প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পরিষ্কার হয়নি— দু’বছরের শিশুর কাস্টডি মা কেন পেল না, বা দাবি করল না, যেখানে মাকে খুবই আবেগপ্রবণ ও মানবিক বলেই দেখানো হয়েছে? প্রতাপ রায় যদি বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন আত্মকেন্দ্রিকই হবেন তাহলে তিনি কেন অপেক্ষাকৃত বড় শিশুপুত্রটিকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন না, কন্যাসন্তান বড় করার বাড়তি দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে? তথাকথিত বাস্তবপন্থীদের কাছে তো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী পুত্রসন্তানই বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে তাই না? টাইটেল মিউজিক থেকে নাটকের বিভিন্ন মুড অনুযায়ী রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরের প্রয়োগটির জন্য সঙ্গীত পরিচালিকা লোপামুদ্রা মিত্র ও ‘ডিফারেন্ট সোল মেট্স’ অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপক।