উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
শুধু উত্তর দিনাজপুর জেলা নয়, গোটা উত্তরবঙ্গের, এমনকি প্রতিবেশী রাজ্য বিহার থেকেও বহু মানুষ এখানকার শিল্পীদের হাতে তৈরি মাটির প্রদীপ, নানা ধরনের কারুকার্য সম্বলিত সরা, ঘট প্রভৃতি সামগ্রী সংগ্রহ করেন প্রতিবছর। কিন্তু এবছর কালীপুজো, দীপাবলি এবং ছটপুজো উপলক্ষে সেই অর্থে অর্ডারই পাননি শিল্পীরা।
পুরুষদের পাশাপাশি এলাকার মহিলারাও এই কাজে হাত লাগান। তেমনই মৃৎশিল্পী আরতি রায় ও বিনোদা রায় বলেন, মেলা হলে সেখানে আমরা সামগ্রী নিয়ে যাই। দু’ পয়সা উপার্জন হয়। এবার বছরভর কোনও হস্তশিল্প মেলা হয়নি। সেকারণে সারা বছরই আমাদের বাজার মন্দা গিয়েছে। ভেবেছিলাম কালীপুজো ও ছটপুজোর সময়ে কিছুটা আয় করতে পারব। কিন্তু সে গুড়েও বালি আমাদের। তৈরি জিনিসের কোনও চাহিদা নেই এবার। দামি প্রদীপ তো বিক্রিই হচ্ছে না।
কালিয়াগঞ্জের কুনোর গ্রামের শতাধিক পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সাধারণ প্রদীপ, ঘট, গাছা প্রদীপ, টেরাকোটার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে তাঁরা সিদ্ধহস্ত। কিন্তু এবছর করোনা আবহে তাঁদের তৈরি সামগ্রীর চাহিদা একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে। ব্যবসায়ীরা এবছর মাটির তৈরি সামগ্রী নিতে আসছেন না। স্থানীয় শিল্পী খোকা রায় বলেন, পঞ্চপ্রদীপ ছাড়াও সপ্তপ্রদীপ, নয়প্রদীপ, এগারোপ্রদীপ, চোদ্দপ্রদীপ ইত্যাদি আমরা তৈরি করি। এগুলোকেই চলতি ভাষায় গাছা প্রদীপ বলে। এবছরও করছি, তবে অল্প সংখ্যায় তৈরি করছি। কারণ এবছর আমরা বলতে গেলে, দামি প্রদীপের সেভাবে অর্ডারই পাইনি। তাই অল্প স্বল্প বানিয়ে রাখছি, যদি বিক্রি হয়।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরাও মৃৎশিল্পীদের থেকে বেশি পরিমাণে মাল নিতে ভরসা পাচ্ছেন না, যদি বিক্রি না হয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণ প্রদীপের চাহিদা এবছর তুলনামূলকভাবে ঠিকই রয়েছে। কিন্তু দামি প্রদীপের চাহিদা নেই বললেই চলে। ৫০ থেকে ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা এবং ৩০০-৪০০ টাকার প্রদীপের চাহিদা এবছর একেবারেই নেই। গ্রামেগঞ্জে নয়, এধরনের প্রদীপর খদ্দেররা মূলত শহরের বাসিন্দা। কিন্তু শহরাঞ্চলের সৌখিন ক্রেতারা এবছর কেনাকাটায় একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
কুনোরের কলেজছাত্রী প্রিয়াঙ্কা রায় বলেন, প্রতি বছর এই সময় কাজের খুব চাপ হয়। অর্ডার সামলাতে আমিও বাবা-মার সঙ্গে কাজে হাত লাগাই। কিন্তু এবছর আমাকে কাজ করতে হচ্ছে না। স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের মাটি সরবরাহ করে ওই এলাকারই অরুণ মাহাতো।
সে আবার স্থানীয় হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া। অরুণ বলে, আমরা এলাকার ঝিলপাড় থেকে এঁটেল মাটি জোগাড় করি। প্রতি বস্তা ৫০ টাকা দরে সেই মাটি মৃৎশিল্পীদের কাছে বিক্রি করি। কালীপুজোর সময় ভালো ব্যবসা হয়। কিন্তু এবছর ওরা আমাদের ডাকছেই না। এলাকার মৃৎশিল্পী গোপাল রায়, শ্যামল রায়, দুলালচন্দ্র রায়রা বলেন, চাহিদা কম থাকায় এবছর শিলিগুড়ি, বিহার, রায়গঞ্জ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ির ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা বাধ্য হয়েই অত্যন্ত কম দামে মাটির সামগ্রী বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। তবুও তাঁরা মাল নিতে চাইছেন না।