মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য। ... বিশদ
এলাকার প্রবীণ এবং বিশিষ্ট মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ডেমুরিয়ার রথযাত্রার নানা ইতিহাস ও কল্পকাহিনী। তৎকালীন সময়ে ডেমুরিয়ায় মগিনীনারায়ণ চৌধুরী নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি প্রতিবছর এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে নিয়ে পুরীতে তীর্থ করতে যেতেন। একবার তীর্থে যাওয়ার পথে বালেশ্বরের কাছে অসুস্থ হয়ে পড়েন মগিনীনারায়ণ। তখন জগন্নাথ তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, তোদের আর পুরী আসতে হবে না। ডেমুরিয়ায় একটি ঝিল রয়েছে। সেখানে খুঁজলে একটি কাষ্ঠখণ্ড পাবি। ওই কাঠ থেকে আমার, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি তৈরি করে তুই পুজো কর। মাটির মন্দির তৈরি করে আরাধনা শুরু হয়। স্বর্ণালঙ্কার ও ধনসম্পদ যথেষ্ট ছিল মন্দিরে। যার লোভে বর্গীরা মন্দিরে হানা দেওয়ার চেষ্টা করে। বর্গী হানার আশঙ্কায় জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে এলাকারই বাসিন্দা করুণাকরণ পাহাড়ীর বাড়িতে হাজির হন মগিনীনারায়ণ। সঙ্গে নিয়ে আসেন স্বর্ণালঙ্কার, বাসনপত্র-সবকিছুই। ফলে বর্গীদের মন্দির লুটের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর ত্রিমূর্তির আরাধনার ভার নেন পাহাড়ী পরিবার। সেই পাহাড়ী পরিবারই পরবর্তীকালে চৌধুরী পদবি নেন এবং তাঁরাই মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত। আর ভোগ রান্না করেন মগিনীনারায়ণেরই বংশধর। এদিকে তৎকালীন সময়ে মন্দির ধ্বংস হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে এগরার বাসুদেবপুরের জমিদার লক্ষ্ণীকান্ত রায়ের দান করা জায়গায় মাটির মন্দির গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে সেই মন্দিরও ধ্বংস হয়ে যায়। এক দশকেরও বেশি সময় আগে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বড় পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। ট্রাস্টি কমিটি মন্দির পরিচালনা করে।
রথযাত্রার দিন সুউচ্চ তিনটি আলাদা রথে সওয়ার হয়ে মাসির বাড়িতে যাত্রা করেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। সাতদিন পর উল্টোরথেও সম্প্রীতির একই ছবি ধরা পড়ে। রথযাত্রা পরিচালন কমিটির সম্পাদক তমালতরুবাবু বলেন, পুরীর মন্দিরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের প্রবেশে বাধা রয়েছে। তবে এখানকার মন্দিরে তাঁদের প্রবেশে কোনও বাধা নেই। বহুকাল আগে থেকেই ডেমুরিয়ার রথযাত্রা উৎসবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ শামিল হন। এখনও সেই ধারা চলে আসছে ভগবানপুরের পাঁউশির রথ ঘিরেও উন্মাদনায় মাতেন বাসিন্দারা। রথ উপলক্ষে বসে মেলা। মেলায় নানা ধরনের ফুল ও ফলের চারাগাছের পসরা সাজান বিক্রেতারা। আম-কাঁঠালের সঙ্গে নানা সামগ্রী বিক্রি হয়।