কর্মে কিছুটা শুভ। খেলাধূলায় বিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন। মানসিক দিকটি বিক্ষিপ্ত থাকবে। ... বিশদ
মঙ্গলবার খড়্গপুরে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মথুরাকাটিতে তৃণমূলের পার্টি অফিসের সামনে গুলি চলে। তিনজন দুষ্কৃতী মুখ ঢাকা অবস্থায় এসে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হন এক তৃণমূল কর্মী। ঘটনায় দুষ্কৃতীদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও বৃহস্পতিবার নবান্নের বৈঠকে এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়লেন না মমতা। ক্ষোভের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন এমপিকে কীভাবে নিয়ে এসে খুন করল প্ল্যান করে। খড়্গপুরেও গুলি চালিয়ে দিয়ে চলে গেল। পুলিসও আমি চেঞ্জ করতে পারছি না। বছরের প্রতিদিনই প্রায় ইলেকশন!’ স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, খড়্গপুরের বারবার দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিসের উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ মমতা। অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁর সরকারকে। খড়গপুরকে ‘ঠান্ডা’ করতে একাধিকবার পুলিসে রদবদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও খড়্গপুরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমদানি বন্ধ হয়নি অস্ত্রেরও।
শহরবাসীর একাংশই মনে করাচ্ছেন, ২০২২ সালের মে মাসে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসেও পুলিসের ভূমিকা নিয়ে একইভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। পুলিসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শুনিয়েছিলেন, ‘খড়্গপুর খুব স্পর্শকাতর এলাকা। দুষ্কৃতীরা বাইরে থেকে আসছে। দু’হাজার টাকায় বন্দুক কিনে আনছে। একটা করে গুলি চালিয়ে দিয়ে খবর হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।’ সেই সঙ্গে তিনি জুড়েছিলেন, ‘বিহারে বন্দুক তৈরির কারখানা আছে। পাশেই ঝাড়খণ্ড বর্ডার আছে। ফলে এই সমস্যা হচ্ছে।’ খড়্গপুরের তত্কালীন আইসিকে তাঁর পরামর্শ ছিল, ‘দুষ্কৃতীরা রেলে আসছে কিনা নজর রাখতে হবে। খড়্গপুর বড় রেল স্টেশন। তোমরা ট্রেনেও মাঝে মাঝে নাকা চেকিং করবে। তুমি তো বুঝতে পারবে না, উপরে পালংশাক নিচে বন্দুক।’
পুলিসের অবশ্য দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর কথা মেনে সবরকম পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, খড়গপুর আছে খড়গপুরেই। একসময় রেলের ছাঁট কারবারে কোটি কোটি টাকা উড়ত এই খড়্গপুরে। নব্বইয়ের দশক থেকেই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, শ্যুটআউট—নিত্যদিনের ঘটনা ছিল শহরের। অপরাধীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ হয়ে ওঠেছিল রেল শহর। দীর্ঘদিন এই সাম্রাজ্যের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ ছিলেন বাসব রামবাবু। যদিও পরে ‘রাম-রাজ্য’ দখল করে শ্রীনু নাইডু। ২০১৭ সাল নাগাদ খুন হন শ্রীনু। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘদিন জেল খাটার পর গত বছরই বেকসুর খালাস পেয়েছেন রামবাবু।
রামবাবুর দাপট কমলেও নব্বইয়ের দশক থেকে যে ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল খড়্গপরে, তা বজায় রয়ে গিয়েছে আজও। কথায় কথায় বন্দুক বের করার স্বভাব আজও রয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীদের। তবে, দুষ্কৃতীদের হাতে কীভাবে সহজে বন্দুক পৌঁছে যাচ্ছে, পুলিসই বা কেন এনিয়ে পদক্ষেপ করছে না তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বিস্তর। এসবের পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের মদতের প্রসঙ্গও উড়িয়ে দিচ্ছেন কেউই।