সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: জেলায় পরপর ডাকাতিতে ঘুম ছুটেছিল পুলিসের। একেবারে নিখুঁত কায়দায় হচ্ছিল ডাকাতি। তার জেরে দুষ্কৃতীদের ধরতে কালঘাম ছোটে পুলিসের। সব রকম চেষ্টা করেও দু’বছর ধরে পুলিস দু’বছর ধরে দুষ্কৃতীদের নাগাল পায়নি। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়েনি পুলিস। শেষেমেশ মদের বোতল পুলিসের মুশকিল আসান করল। মদের বোতলই ধরিয়ে দিয়েছে পুরুলিয়ায় ছ-ছ’টি ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত দুষ্কৃতীদের। অন্যান্য প্রমাণ নষ্ট করে দিলেও দুষ্কৃতীরা তাদের ফেলে যাওয়া মদের বোতল সরায়নি। তবে, মদের বোতলই যে তাদের চিনিয়ে দিতে পুলিসকে সাহায্য করবে, তা ভাবতেও পারেনি দুষ্কৃতী দলটি। কুখ্যাত দুষ্কৃতী দলের ছ’জনকে পুরুলিয়া জেলা পুলিস গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে রাতে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার নদীয়াড়া গ্রামে এক ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। বাড়ির সঙ্গেই ব্যবসায়ীর হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে। ১০-১২ জনের একটি দুষ্কৃতী দল তাঁর বাড়িতে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুটপাট চালায়। সোনার গয়না ও নগদ মিলিয়ে প্রায় ১০লক্ষ টাকার সামগ্রী দুষ্কৃতীরা নিয়ে যায়। এছাড়া রঘুনাথপুর বাজার, আদ্রা, আড়ষার সেনাবনায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালেও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। জেলায় পরপর ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিস ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। 
পুলিস সুপার বলেন, প্রায় একই কায়দায় ডাকাতিগুলি হয়েছিল। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন সাঁওতালডিহি থানা এলাকার একই গ্রামের বাসিন্দা। একজন ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারি ও দু’জন ধানবাদ এলাকার বাসিন্দা। এই ডাকাত দলে রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যের আরও বেশ কয়েকজন যুক্ত রয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে। ধৃতদের কাছ থেকে ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। 
পুলিস সুপার বলেন, এই দুষ্কৃতীরা অত্যন্ত ওস্তাদ। দুষ্কৃতীরা অপরাধ করার পর কোনও ক্লু রেখে যেত না। ফলে, প্রাথমিকভাবে কোনও তথ্যই পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রমাণ লোপাটের জন্য সিসিটিভির হার্ডডিক্স তারা খুলে নিয়ে পালিয়েছিল। এমনকী, যে মোবাইলগুলি তারা লুট করে নিয়ে গিয়েছিল সেগুলিও কিছুদূর গিয়ে ফেলে দিয়েছিল। তবে একটি ঘটনাস্থলে মদের বোতল পাওয়া গিয়েছিল। তা থেকেই দুষ্কৃতীদের ধরা হয়।
কীভাবে মদের বোতল থেকে দুষ্কৃতীদের ধরা গেল? পুলিস সুপার বলেন, ফেলে যাওয়া মদের বোতলে কিউআর কোড ছিল। তাতে কোন দোকান থেকে ওই মদ কেনা হয়েছিল, তা জানা যায়। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তারপর আরও বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের পরিচয় জানানো হচ্ছে না। ধৃতদের হেফাজতে নেওয়া হবে। তাদের জেরা করে চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। 
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা ডাকাতির আগে এলাকায় রেকি করত। নদীয়াড়ার ঘটনায় দোকানে এসে রং কিনেছিল। বারবার এসে গোটা এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেছিল ডাকাত দলটি। তারপরই তারা হানা দেয়। ওই দলের সঙ্গে যুক্ত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে পুলিস সুপার জানিয়েছেন।