কর্মস্থলে জটিলকর্মে অনায়াস সাফল্য ও প্রশংসালাভ। আর্থিক দিকটি শুভ। ক্রীড়াস্থলে বিশেষ সাফল্য। ... বিশদ
রাজ্যে ২৬টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও কলকাতার প্রধান পাঁচটিতেই যে গোটা বাংলার মানুষ এসে ভিড় করে, তা চিকিৎসক থেকে রোগী—প্রত্যেকেই জানেন। কারণ, উন্নত চিকিৎসা। আর রোগীদের এই সুনামির মতো স্রোত সামাল দিতে একটা বড় ভূমিকা নিয়ে থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাজ্য সরকার তাই প্রথম থেকেই আবেদন জানিয়ে এসেছে, কাজে ফিরুন। এমনকী সুপ্রিম কোর্ট ফ্রি-হ্যান্ড দেওয়া সত্ত্বেও চরম সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনকারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে বিরূপ পদক্ষেপ নেয়নি নবান্ন। তারপরও সাড়া মিলল না। বরং মঙ্গলবার দুপুর থেকে স্বাস্থ্যভবন চত্বরে যে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে বাড়ল তার বহর। অভয়ার ধর্ষণ-খুনের বিচারে রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকা, সিপি ও স্বাস্থ্যসচিব সহ আধিকারিকদের অপসারণ, বৈঠকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি এবং পুরো বৈঠক সরাসরি সম্প্রচারের শর্ত ঠুকে নবান্নে পাল্টা ই-মেল পাঠালেন আন্দোলনরত ডাক্তাররা। তার আগে অবশ্য রাত পৌনে চারটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে আরও একটি মেল করেছিলেন তাঁরা। সেখানেও ছিল দাবিদাওয়ার হিসেব-নিকেশ।
সন্ধ্যা ছ’টায় বৈঠকের সময়। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শর্ত চাপানো ই-মেল আসায় স্বাভাবিকভাবেই তার উত্তর নবান্ন থেকে আসেনি। সেই সময় শিল্প-বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌজন্যের এমন জবাবে তিনি রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘শর্ত চাপালে কি আলোচনা হয়?’ এই একই সুর পরে শোনা যায় রাজ্য সরকারের সাংবাদিক সম্মেলনে। সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ডিজিপি রাজীব কুমার অত্যন্ত নরম সুরেই আরও একবার কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানান ডাক্তারদের কাছে। তাঁরা বলেন, ‘আমরা বারবার আলোচনায় বসতে চাইছি। সেই মর্মে ই-মেলও পাঠানো হয়েছে। তাঁদের না আসাটা দুর্ভাগ্যজনক। জুনিয়র ডাক্তাররা বিচক্ষণ, শিক্ষিত। তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। শর্ত চাপিয়ে দিলে তো আর খোলা মনে আলোচনা হতে পারে না! আবার আমরা কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি। কর্মক্ষেত্রে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চন্দ্র্রিমাদেবী বলেন, ‘আপনারা কাজে ফিরুন। আলোচনায় বসুন। রাজনীতির ফাঁদে পা দেবেন না। ভুল পথে চালিত হবেন না।’
তারপরও অবশ্য ডাক্তারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘রাজনীতি আমরা করছি না। তবে শর্ত মানতে হবে। তবেই আলোচনায় বসব।’ প্রমাণ স্বরূপ দেখানো হয়েছে এদিন সকালে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পলকে ‘গো ব্যাক’ চিৎকারে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা। তবে বিকেলে বামপন্থী অভিনেতা চন্দন সেন গেলে তাঁকে ঘিরে কোনও স্লোগান শোনা যায়নি। সন্ধ্যা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেক্টর ফাইভ মুখর হয়েছে গানে-স্লোগানে। চারদিকে ফ্লেক্স, ব্যানার দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই, ‘অভয়া’র ধর্ষক-খুনির সাজা চেয়ে এই আন্দোলন। বরং রাজনীতির ইন্ধনে সেঁকে সর্বত্রই নিশানা রাজ্য সরকার। একেই কি রাজনীতি বলছিলেন চন্দ্রিমাদেবী? প্রশ্ন উঠছে, মানুষের সেবার শপথ নিয়ে যাঁরা এই পেশায় এসেছেন, সেই জুনিয়র ডাক্তারদের ভিলেন বানিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে নামেনি তো একাংশ? স্বাস্থ্যভবন চত্বরে বুকে ব্যাজ বসানো অনেককেই দেখা যাচ্ছে। তাঁরা কিন্তু ডাক্তার নন।