গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ধনেখালির তন্তুবায়দের আক্ষেপ, আগে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে পুজো পর্যন্ত আমাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকত না। আশির দশকেও ভালো মজুরি পাওয়া যেত। এখন সেসব অতীত। তাঁত শিল্পীদের জন্য সরকার কাগজে-কলমে প্যাকেজ তৈরি করলেও তা দিনের আলো দেখেনি। সমোসপুর, এনাতনগর, বৃন্দাবনপুর, হারপুর সহ ধনেখালি ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতে কিছু মানুষ এখনও শাড়ি তৈরির কাজ করেন। নতুন প্রজন্ম আমাদের দুরবস্থা দেখে আর এই পেশায় আসতে চাইছে না।
এক তাঁত শিল্পী বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছি। সুতো কিনতে হচ্ছে জিএসটি দিয়ে, অথচ পাইকারি বিক্রি করার সময় আমরা জিএসটি পাই না। একটি শাড়ি তৈরি করতে দু’জনের সময় লাগে দেড় থেকে দু’দিন। মজুরি মেলে ২০০-৫০০ টাকা। তাঁত নিয়ে সরকারি উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে উপকৃত হননি কোনও তাঁত শিল্পী। তাঁত হাব এখনও রূপায়িত হয়নি। আগে ধনেখালির কয়েকশো পরিবার তাঁতের কাজ করত। এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ১০০ পরিবারে।
তাঁত শিল্পী তুষারকান্তি ভড় বলেন, আমাদের এখানে ১২ হাত লম্বা ও ৪৮ ইঞ্চি বহরের শাড়ি তৈরি হয়। জাপান থেকে অর্ডার এসেছে ৪৪ ইঞ্চি শাড়ির। অর্ডার আসছে ওড়না, চুড়িদারেরও। কিন্তু আমাদের এখানে পরিকাঠামোর অভাবের কারণে তাঁতের সাইজ পরিবর্তন করা বা নতুন তাঁত বসানো সম্ভব নয়। তাই হঠাৎ করে এই ধরনের অর্ডার বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। অন্যদিকে, বিদেশের মাটিতে ভেষজ রঙের তাঁতের শাড়ির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ভেষজ রঙের জোগান সেভাবে নেই। হাতে তৈরি শাড়ির তুলনায় অনেক কম সময়ে বেশি সংখ্যক শাড়ি বোনা যায় পাওয়ারলুমে। তাতে খরচও কম হয়। সুরাত থেকে আধুনিক ডিজাইনের কম দামের শাড়ি আসছে বাজারে। এখন ৪০-৪৫ বছরের কম বয়সি কোনও শিল্পী নেই ধনেখালিতে। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, আধুনিকীকরণ না হওয়ায় বছর ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে ধনেখালির তাঁত শিল্প। এই শিল্পকে বাঁচানোর আর্তিকে খোদ সংসদে পৌঁছে দিতে নতুন সাংসদের কাছে আর্জি জানাবে ধনেখালি। -নিজস্ব চিত্র