ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
মেয়েদের সিঙ্গলস টেনিসে টিন এজার হিসেবে শেষবার গ্র্যান্ডস্ল্যাম খেতাব জিতেছিলেন মারিয়া শারাপোভা। সেটাও ২০০৬ সালে এই ফ্লাশিং মিডোতেই। তার ১৩ বছর পর ফের কোনও টিন এজারের হাতে উঠল গ্র্যান্ডস্ল্যাম চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। ১৯ বছরে বয়সে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতে শারাপোভাকে ছুঁয়ে ফেললেন বিয়াঙ্কা আন্দ্রিস্কু। তাঁর দুরন্ত উত্থানের সামনে ফের একবার ধরাশায়ী হল সেরেনা উইলিয়ামসের ২৪তম গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের স্বপ্ন। টেনিস ইতিহাসে সর্বাধিক ২৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতা মার্গারেট কোর্টকে স্পর্শ করতে মরিয়া ছিলেন অষ্টম বাছাই মার্কিনী তারকা। হট ফেবারিট হিসেবেই কোর্টে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু আন্দ্রিস্কুর অনবদ্য টেনিসের সামনে হারের হতাশা নিয়েই ফিরতে হল ৩৭ বছর বয়সি সেরেনাকে। ২০১৭ সালে মা হওয়ার পর কোর্টে ফিরে চারটি গ্র্যান্ডস্ল্যামের ফাইনালে উঠেও ট্রফি জিততে পারলেন না তিনি।
মনে হচ্ছিল, এবার হয়ত ফাইনালের গাঁট টপকে মার্গারেট কোর্টকে ছুঁয়ে ফেলবেন সেরেনা। কিন্তু তা আর হতে দিলেন না আন্দ্রিস্কু। ১৯৯৯ সালে সেরেনা যখন প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম খেতাব জিতেছিলেন, তখনও জন্মই হয়নি আন্দ্রিস্কুর। প্রায় অর্ধেক বয়সি সেই কানাডিয়ান তরুণীর কাছে স্ট্রেট সেটে ধরাশায়ী হলেন তিনি। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে সেরেনার শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। তাঁর নড়বড়ে শুরুর সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগান আন্দ্রিস্কু। প্রথম সেট দাপটের সঙ্গে ৬-৩ গেমে জিতে নেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় সেটেও ৫-১ গেমে এগিয়ে যান কানাডিয়ান তরুণী। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় খামতি রাখেননি সেরেনা। টানা চার গেম জিতে ৫-৫ সমতা ফেরান তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে পরের দু’টি গেম দখল করে সেরেনার আশায় জল ঢেলে দেন আন্দ্রিস্কু।
মাস খানেক আগে প্রথমবার দেখা হয়েছিল সেরেনা ও আন্দ্রিস্কুর, কানাডা ওপেনের ফাইনালে। সেই অভিজ্ঞতা সুখের ছিল না সেরেনার কাছে। পিঠের ব্যথার জন্য মাঝপথে ম্যাচ ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম কানাডিয়ান হিসেবে ওই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আন্দ্রিস্কু। এক মাস পর, আরও একটা ফাইনালে মার্কিনী তারকার বিরুদ্ধে বাজিমাত করলেন তিনি। অথচ এক বছর আগেও আন্দ্রিস্কুর ডব্লুটিএ র্যাঙ্কিং ছিল দেড়শোর আশেপাশে। তখন কে জানত বারো মাসের মধ্যেই সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি! রূপকথার উত্থান বললেও কমই বলা হবে।
জন্ম কানাডার টরন্টো হলেও বিয়াঙ্কা আন্দ্রিস্কুর বাবা-মা রোমানিয়ান। যখন তাঁর বয়স সাত বছর, সেই সময় তাঁর পরিবার কয়েক বছরের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন রোমানিয়ায়। সেখানেই টেনিসে হাতে খড়ি কিম ক্লিস্টার্সের ভক্ত বিয়াঙ্কা আন্দ্রিস্কুর। কানাডায় ফিরে আসার পর আরও গতি পায় তাঁর অগ্রগতি। কানাডিয়ান মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড় ইউজেনি বুশার্দকেও পেছনে ফেলে দেন তিনি। হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয় ‘বিবি’। হ্যাঁ, বিয়াঙ্কাকে এই নামেই ডাকেন তাঁর ভক্তরা। সেরেনার বিরুদ্ধে জয়ের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন আন্দ্রিস্কু। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এখনও যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না যে আমি গ্র্যান্ডস্ল্যাম খেতাব জিতেছি। সেটাও আবার সেরেনাকে হারিয়ে। আমি সব সময় সেরেনার বিরুদ্ধে খেলতে চেয়েছি। সে জন্য মাঝেমধ্যেই আমার টিমকে বলতাম, অবসর নেওয়ার আগে আমি যেন ওর সঙ্গে খেলার সুযোগ পাই। এই ম্যাচটার দিকে বহু আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম আমি। আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে কেউ যদি আমাকে বলত যে, এবার আমি গ্র্যান্ডস্ল্যাম ফাইনালে খেলব, তখন আমি হয়ত তাকে পাগলই বলতাম। আর আজ আমি কিনা ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন। ঘোর যেন কাটতেই চাইছে না।’
প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রশংসা করে সেরেনা বলেন, ‘অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে যোগ্য জয় পেয়েছে বিয়াঙ্কা। তবে আমিও নিজের সেরা ছন্দ মেলে ধরতে পারিনি। তাই বলে ওর কৃতিত্বকে এতটুকু খাটো করব না। ওর প্রশংসা করতেই হবে।’