সংবাদদাতা, শান্তিনিকেতন: সপ্তম পে কমিশনের টাকা বাকি রয়েছে। সেই দাবিতে বিশ্বভারতীতে চলতে থাকা অচলাবস্থার জট কিছুতেই কাটছে না। মঙ্গলবার কর্মিসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘক্ষণ বৈঠক চলার পরেও মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র। তারফলে কর্মবিরতি থেকে সরে আসার কোনওরকম পরিকল্পনা নেই কর্মিসভার সদস্যদের। তাদের পক্ষে জানানো হয়েছে, আগামী শুক্রবার থেকে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবে তারা। অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করে বিশ্বভারতীতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে আসা যায়।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬সালে সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়েছে। কিন্তু কর্মী, অধ্যাপকরা এখনও বেতন কমিশনের ৫০শতাংশ পাননি। সেই বিষয় নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার বৈঠকে বসেছেন কর্মী এবং অধ্যাপকেরা। কিন্তু, সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। তারপরেই ২সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে কর্মিসভা। কর্মীদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, যতদিন না কর্তৃপক্ষ কর্মীদের সপ্তম বেতন কমিশনের বকেয়া টাকা দেবে ততদিন এই আন্দোলন চলবে। এদিকে এই আন্দোলনের জেরে চূড়ান্ত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বিশ্বভারতীতে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় সহ বিভিন্ন ভবনে সরকারি কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও বিশ্বভারতীর সমস্ত ভবনের পঠন-পাঠন স্বাভাবিক রয়েছে। বকেয়া মেটানো ছাড়াও কর্মীদের অবস্থান বিক্ষোভ থেকে পড়ুয়াদের ফি বৃদ্ধি কমাতে হবে, ছাত্রাবাসগুলির অবস্থা সুস্থ করতে হবে, ক্যান্টিনগুলিতে ভালো খাবারের ব্যবস্থা, গবেষক পড়ুয়াদের ফেলোশিপের টাকা দেওয়া সহ বিভিন্ন দাবিও তোলা হয়। তবে, কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেতন ও পেনশন তহবিলে ঘাটতি থাকায় বকেয়া টাকা এখনই মেটানো সম্ভব নয়। মঞ্জুরি কমিশনের তরফে এখনও কোনও টাকা পাঠানো হয়নি। টাকা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তা কর্মীদের দিয়ে দেওয়া হবে। তবে, সেই কথা শুনতে নারাজ কর্মীরা তাঁদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। সেই জট কাটানোর উদ্দেশ্য নিয়ে মঙ্গলবার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মিসভার সদস্যদের প্রায় চারঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়। কিন্তু, সেই বৈঠকেও কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। একদিকে কয়েকদিন আগেই বকেয়া টাকা মিলছে না সেই বিষয়ে জানিয়ে বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ও মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকে চিঠি দিয়েছে কর্মিসভা। অন্যদিকে, বেশ কিছুদিন আগেই অচলাবস্থা কাটাতে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক কর্মীদের উদ্দেশে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদনও জানিয়েছেন।
বিশ্বভারতী কর্মিসভার সভাপতি গগন সরকার বলেন, মঙ্গলবার দীর্ঘক্ষণ বৈঠক চলার পরেও কোনওরকম মীমাংসা হয়নি। আমাদের কোনও দাবি বিশ্বভারতী মেনে নেয়নি। তাই আগামী শুক্রবার থেকে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।
বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, উপাচার্য মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী কর্মীদের বেতন ও পেনশন বাবদ প্রায় ৬৫কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই বেতন কমিশনের টাকা কর্মীদের দিয়ে দেওয়া হবে।