পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি।প্রতিকার: আজ দই খেয়ে শুভ ... বিশদ
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ ৪৫-৫০জন লোক পিণ্ডরুই গ্রামে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা পম্পা প্রধানের বাড়িতে চড়াও হয়। ঘটনার সময় পম্পাদেবীর স্বামী সুকুমার প্রধান বাড়িতে ছিলেন না। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা নিজে এবং তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়ি বাড়িতে ছিলেন। তাঁর শাশুড়িকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। পম্পাদেবীর শাশুড়ি মঞ্জুদেবী প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সরকারি কাজে টাকা পয়সা খরচের কোনও হিসেব দিতে পারবেন না বলে জানানোর পর উত্তেজিত লোকজন তাঁর খড়ের চালাবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘরের ভিতরে বাড়ির সদস্যরা থাকা অবস্থায় বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সকলকে উদ্ধার করা হয়।
কাটমানি ইস্যুতে চড়াও হওয়া লোকজন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যাকে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলোচনার বসায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোথায় কত টাকা খরচ হয়েছে, কত টাকা পড়ে রয়েছে, এসব সম্পর্কে গ্রামবাসীকে অবহিত করার জন্য মুখোমুখি বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পম্পাদেবী সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েও দিন পিছচ্ছিলেন। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার গ্রামের লোকজন সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার বাড়ি যান। গ্রামের রাস্তাঘাট নির্মাণের নামে ব্যাপক কাটমানির খেলা হয়েছে। এদিন আলোচনার প্রস্তাবে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা বেঁকে বসেন। বিজেপির লোকজনের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা নিজেই নিজের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।
এদিন ঘটনার খবর পেয়ে পুলিস এলাকায় গেলে উত্তেজিত বাসিন্দারা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার ভূমিকার প্রতিবাদে পুলিসকে ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এব্যাপারে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রণব কর বলেন, বিজেপি এলাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির জন্য এসব করছে। পিণ্ডরুই গ্রামে লোকসভা ভোটে আমাদের ৫২ভোটের ঘাটতি ছিল। বিজেপি এখন কাটমানি ইস্যুকে সামনে রেখে বাজার গরম করতে চাইছে। এলাকাকে উত্তেজিত করতেই বিজেপির লোকজন বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মৃণালকান্তি দাস বলেন, বিজেপি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছে। আমরা তীব্র ধিক্কার জানাই। গোটা বিষয়টি পুলিসকে জানিয়েছি।
এব্যাপারে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, বৃহস্পতিবার গোটা জেলাজুড়ে বিডিও অফিসে আমাদের ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল। কাটমানি ইস্যুতে জেলার কোনও জায়গায় এদিন দলীয় কর্মসূচি ছিল না। তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের কাটমানির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে উঠছেন। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন জায়গায় হিসেব চাইছেন। তৃণমূলের অনেক জনপ্রতিনিধি ও নেতা কাটমানি খেয়েছেন। এখন মানুষ তার হিসেব চাইছে। আর তৃণমূল যাবতীয় ঘটনার দায় বিজেপির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে গত সোমবারই জেলাশাসকের অফিসে গ্রিভান্স সেল খোলা হয়েছে। যেকেউ অফিসে গিয়ে সরকারি কাজকর্মের যেকোনও অভিযোগ সরাসরি সেখানে লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। কিন্তু, গ্রিভান্স সেলে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৫-১৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। গ্রিভান্স সেলে সেভাবে অভিযোগ না এলেও কাটমানি ইস্যুতে প্রতিদিনই পোস্টার থেকে বাড়িতে চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। কাটমানি ইস্যুতে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অনেক জায়গায় বিজেপি কিংবা শাসক দলের বিপক্ষ টিম এনিয়ে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
বুধবার নন্দকুমার বিডিও অফিসের সামনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভানেত্রী ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে পোস্টার পড়ার পাশাপাশি তমলুক-শ্রীরামপুর রাস্তায় সুলোচনা বাজারে অবরোধ হয়। ওই দিন বিজেপির জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের বিরুদ্ধেও কাটমানি ইস্যুতে মেচেদায় পাঁচমাথার মোড় সংলগ্ন বাজার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পোস্টার পড়ে। উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনায় ডিলারশিপ পাইয়ে দেওয়ার নামে বিজেপির জেলা সভাপতি কাটমানি নিয়েছেন বলে পোস্টারে উল্লেখ ছিল। তবে, নবারুণবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।