কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
সহদেব দাস। দিনমজুর। হিন্দু বাঙালি। মাটির দেওয়ালে টিনের চাল। অনটনের ছাপ সর্বত্র। ‘স্বদেশি’ নাকি ‘বিদেশি’? চিহ্নিতকরণ পর্বে অনেক কালঘাম ছুটিয়ে এহেন দুধপাতিলের সহদেব আর তাঁর স্ত্রী কালিতারার নাম উঠেছিল ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্সে (এনআরসি)। ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকা দেখে নিশ্চিত হয়েছিলেন দাস দম্পতি। বরাক উপত্যকার এই হিন্দু বাঙালির গলায় স্পষ্ট আক্ষেপ—‘তাতেও কি স্বস্তি মিলেছে? এক বছর দু’মাস বাদে হঠাৎই একদিন শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল-৩ থেকে নোটিস পাঠিয়ে বলা হল, আপনার নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ আছে, আপনি ডি-ভোটার। এনআরসি’তে নাম থাকা সত্ত্বেও ডি-ভোটার, বুঝুন তাহলে! এখানে বঙ্গভাষী মানেই যেন বাংলাদেশি।’ ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ফের সহদেব ও তাঁর স্ত্রী ‘ভারতীয়’ প্রমাণিত হয়েছেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম এখনও ওঠেনি। একই অবস্থা কাটিগোড়ার বৃদ্ধা অঞ্জলি রায়ের। ২০১৫ সালে চিহ্নিত হয়েছিলেন ‘বিদেশি’ বলে। অনেক লড়াইয়ের পর নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে সক্ষম হলেও, নাম নেই এনআরসি’তে। নাম ওঠেনি ভোটার তালিকায়। সহদেব দাস আর অঞ্জলি রায়, শ্রীকান্ত দাসের মতো আরও অনেকে এখন রেশন সহ যাবতীয় সরকারি পরিষেবা থেকে ব্রাত্য। নিজভূমে পরবাসী।
ভারতীয়দের ‘ভারতীয়’ প্রমাণের এই লড়াইয়ে ভুক্তভোগীদের সহায়ক হয়েছেন সমাজকর্মী কমল চক্রবর্তী। কখনও স্ত্রীর থেকে ধার নিয়ে আবার কখনও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে আইনি লড়াই চালিয়েছেন মানুষগুলোর জন্য। তাঁর কথায়, ‘এনআরসি নিয়ে এই দুর্ভোগের পর এখন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা প্রচার করছেন, আগামী ছ’মাসের মধ্যে হিন্দু বাঙালিদের ডি-ভোটার সহ যাবতীয় সমস্যা তিনি মেটাবেন। নির্বাচনে বাঙালিদের সাহায্য চাই।’ কমলবাবুর সংযোজন, ‘এরা (বিজেপি) ভাবেটা কী? মানুষ সব ভুলে গিয়েছে? ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল, ডি-ভোটার থাকবে না, থাকবে না ডিটেনশন ক্যাম্প। ১০ বছর পার, চলছে ডিটেনশন ক্যাম্প। গোটা অসমে এখন লাখখানেক ডি-ভোটার। আর বাঙালি প্রভাবিত কাছাড়ে এবারও ভোট দিতে পারবেন না ৪ হাজার ২০৭ জন। ভারতীয় হয়েও যাঁরা ডি-ভোটার বলে চিহ্নিত।’