পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
সামনেই ভিউপয়েন্ট... ধনুষ্কোডি। একটু এগলে মিশে যাওয়া দুই সাগরের জল, আর ওই যে উত্তাল ঢেউকে হারিয়ে মাথা তোলা ‘রাম সেতু’। কচ্ছথিবুটা কোনদিকে? মাত্র ১৬ নটিক্যাল মাইল দূরে বিতর্কিত দ্বীপটি তামিল রাজনীতির মতো এখান থেকেও অদৃশ্য। সেই সঙ্গে বিজেপিও। কারণ, মোদি যতই সরব হন, খাস কচ্ছথিবু লাগোয়া লোকসভাতেই প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়নি। গেরুয়া শিবিরের ভরসা তাই নির্দল প্রার্থী, ‘আম্মা’র দল থেকে বহিষ্কৃত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও পনিরসেলভম (ওপিএস) ও তাঁর ‘কাঁঠাল’ প্রতীক। কারণটা একেবারেই জাতপাতের অঙ্ক নির্ভর। এই কেন্দ্রে ওপিএস থেভার সম্প্রদায়ের প্রভাব যথেষ্ট। এতদিন তারা ছিল এআইএডিএমকের ভোটব্যাঙ্ক। এবার নির্বাচনী বৈতরণী পেরতে সেটাই বিজেপির পাখির চোখ।
অথচ রামের স্মৃতিমাখা এই জনপদ, রামনাথপুরম লোকসভাই নাকি এবারের ভোটে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। রামনাথস্বামী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ শিবমন্দিরের শহর শুধু নয়, মোদির প্রার্থীপদের জল্পনা ছড়িয়েছিল গোটা তামিলনাডুতে। উড়িয়ে দেননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। কারণ, এবার তাঁর জয়ের অন্যতম হাতিয়ার কচ্ছথিবু। বিজেপির রাজ্য সভাপতি আন্নামালাই দায়ের করেছিলেন আরটিআই। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এসেছে জবাব। আর তারপরই সরব মোদি—জনমানবহীন দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়ে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কংগ্রেস এবং সহযোগী ডিএমকে।
‘এসবই ভোটের জন্য, লোকদেখানি কারবার’, বলছিলেন ধনুষ্কোডি লাইটহাউসের কাছে দাঁড়ানো রোজারিও। দেশের পূর্ব উপকূলে এখন যন্ত্রচালিত নৌকা নামানো নিষিদ্ধ। ৬১ দিনের নিষেধাজ্ঞার জেরে সারি সারি সবুজ বোট-ছোট ট্রলার ভাসতে দেখেছি রামেশ্বরম ফিশিং হারবারে। রোজারিওর মতো ওখানেও আলাপ হয়েছিল আয়ুথাপুজাই ও কারুয়াম্মানের সঙ্গে। তাঁরাও কচ্ছথিবু ইস্যুকে হাত নেড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। আয়ুথাপুজাই কিংবা রোজারিওর ভাঙা ইংরেজিতে যা বুঝলাম, ‘ওই দ্বীপ যে দেওয়া হয়েছে, সে তো আমরা তো জানি। শুধু এটুকু জানতে ১০ বছর লেগে গেল মোদি সরকারের? ভোটের জন্য এসব বাতেলা ছেড়ে আমাদের নির্ভয়ে মাছ ধরার অধিকার দিন। শ্রীলঙ্কার নৌসেনা যেন গ্রেপ্তার না করে, সেটা আগে নিশ্চিত করুন। ওদের তো এত সাহায্য করেছে আমাদের সরকার, বিনিময়ে এটুকু চাওয়া যায় না!’ এবছর কচ্ছথিবু দ্বীপে সেন্ট অ্যান্টনি’স ক্যাথলিক চার্চের তিনদিনের বার্ষিক অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। তাঁদের আশা, এতে যদি হুঁশ ফেরে রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে সরকারের।
ধনুষ্কোডি রেলস্টেশনের ধ্বংসাবশেষ থেকে একটু দূরে সবুজ প্লাস্টিক বিছিয়ে মাছ বেচছিলেন বছর সাতান্নর থিরুয়াম্মা। গত বছর ৬০ দিন শ্রীলঙ্কার জেলে কাটিয়ে ফিরেছেন তাঁর স্বামী। গোটা গায়ে ছুরির কাটা দাগ। সৌজন্যে ওদেশের নৌসেনা। তাঁদের মুক্তির জন্য কিছুই করেনি মোদি সরকার, অভিযোগ ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দেবাদোসের। তিনি বলেন, এদেশের ৩৫০-রও বেশি নৌকা আটকে রেখেছে শ্রীলঙ্কা। ওরা আইন করে সেগুলি দখল করছে। পেটের ভাত ছেড়ে খামোখা দ্বীপ চাইব কেন বলুন? এ প্রশ্ন আরও অনেকের।
শিকাগোয় হিন্দু ধর্মের বিজয়কেতন ওড়ানোর চার বছরের মাথায় এপথে এসেছিলেন সৌম্যদর্শন এক বাঙালি গেরুয়াধারী। কোথায় উঠেছিলেন তিনি? ধনুষ্কোডি থেকে ফেরার পথে মাথায় ঘুরছিল প্রশ্নটা। আচমকাই হলুদ বালির বুকে সবুজ বেড়ার এক মন্দিরের কাছে দাঁড়াল লোকাল বাস। পনমুদি কোডি স্বামীঙ্গাল ট্রাস্টের অন্নপ্রসাদমের আমন্ত্রণে। গোল করে বসে খাওয়ার বন্দোবস্তের মধ্যেই জানতে চাইলাম স্বামী বিবেকানন্দের সেই আশ্রয়ের কথা। উত্তর মিলল না। হয়তো কোনওদিন মোদিজি আরটিআইতে সেটাও খুঁজে পাবেন!