ইসলামাবাদ, ৬ মার্চ (পিটিআই): প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দেশের জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে পাক সরকার। মঙ্গলবারই জয়েশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ভাই ও শ্যালক সহ ৪৪জনকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আটক করেছে পাক প্রশাসন। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে মুম্বই হামলার মূলচক্রী হাফিজ সইদের জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) এবং এর শাখা সংগঠন ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের (এফআইএফ) একাধিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবারই পাক প্রশাসনের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের যে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ৭০টি সংগঠনের মধ্যে নাম রয়েছে জামাত-উদ-দাওয়া এবং ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের। জঙ্গি দমন আইনের (১৯৯৭) ভিত্তিতেই পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক এই তালিকা তৈরি করেছে। পাক দৈনিক ‘ডন’ জানিয়েছে, ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামাত-উদ-দাওয়া এবং ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের অন্তত দু’টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং তাদের সব সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। কমিশনার ও ডিভিশনাল পুলিস প্রধানদের সঙ্গে পাঞ্জাব প্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের ভিডিও কনফারেন্সের পর চাকওয়াল এবং অ্যাটক জেলায় জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চাকওয়ালের তালাগাঙ্গ এলাকায় মাদ্রাসা খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং চাকওয়ালের রেলওয়ে রোডে মাদ্রাসা দারুস সালাম— জামাতের এই দু’টি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে পাক সরকার। অন্যদিকে, অ্যাটক জেলায় জামাত এবং ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের যে তিনটি সম্পত্তি রয়েছে, স্থানীয় জেলা প্রশাসন তার দখল নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা এবং পিপলস কলোনিতে মসজিদ মুসাব বিন উমের। ১.৬ একর জায়গা জুড়ে এই সংগঠন চালানোর জন্য মাসিক ব্যয় ৬০ হাজার টাকা। ফালাহ-ই-ইনসানিয়াতের একটি অ্যাম্বুলেন্স জেলা প্রশাসন বাজেয়াপ্ত করেছে, যার মাসিক খরচ ৪৮ হাজার টাকা। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, জামাতের নেটওয়ার্কে ৩০০টি সেমিনারি ও স্কুল, হাসপাতাল, একটি প্রকাশনা সংস্থা এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা রয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পিছনে ছিল লস্কর-ই-তোইবার এই অগ্রণী সংগঠন জামাতই। সেই জঙ্গি হামলায় মুম্বইয়ে ১৬৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
প্যারিস স্থিত ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী দেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে পাকিস্তানকে। তাই, বাধ্য হয়েই পাক সরকার সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার পাবলিক অ্যাকউন্টস কমিটির সাব-কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে কথা স্বীকারও করেছেন পাকিস্তানের অর্থ সচিব আরিফ আহমেদ খান। তাঁর আশঙ্কা, উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে পাকিস্তান।