বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
শুধু মাসুদ আজহারই নয়, মুম্বই হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদের ক্ষেত্রেও একই নীতি নিয়েছিল বেজিং। কিন্তু মুম্বই হামলার প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার চাপের কাছে চীনকে মাথা নত করতে হয়েছিল। ফলে হাফিজ সইদ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু জয়েশ প্রধান মাসুদ আজহারকে এখনও সেই তালিকাভুক্ত করতে পারেনি ভারত। সেই ২০০৯ সাল থেকে মাসুদকে ওই তালিকায় ঢোকানোর চেষ্টা করেছে ভারত। পাঠানকোট হামলার পর মাসুদকে ওই তালিকায় ঢোকানোর একটা মরিয়া প্রয়াস করেছিল ভারত। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশ ভারতের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু বরাবরের মতো বাধ সেধেছিল চীন। তাই মাসুদকে তালিকায় ঢোকাতে পারেনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১২৬৭ কমিটি। রাষ্ট্রসঙ্ঘে অন্তত চারবার মাসুদকে এভাবে রক্ষাকবচ দিয়েছে বেজিং। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন চীন এমন করছে?
মূলত চারটি কারণে চীন এই পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথম কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক। পাকিস্তানকে বরাবরই ‘অল ওয়েদার ফ্রেন্ড’ বা চিরকালের বন্ধু বলে স্বীকার করেছে চীন। এখন বেজিংয়ের স্বপ্নের প্রকল্প হল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। মূলত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ওই চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্পে কম করে ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বেজিং। এই করিডর হবে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের কাসগড় থেকে পাক-ইরান সীমান্তের গদর বন্দর পর্যন্ত। বালুচ বিদ্রোহী ও পাক তালিবানের রোষের স্বীকার যাতে এই করিডর না হয় তার জন্য সচেষ্ট বেজিং। এই রাস্তা তৈরি হলে চীনের পক্ষে বাণিজ্যিক লাভ অনেকটাই বেড়ে যাবে। কারণ তখন মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত ঘুরে আর জলপথে মাল আমদানি-রপ্তানি করতে হবে না। তাই চীন যে কোনও মূল্যে এই করিডর রক্ষা করতে চায়। এই করিডরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস চীনকে দিয়েছে পাকিস্তান। একইসঙ্গে চীন সুরক্ষার জন্য মদত নেয় জঙ্গিদের কাছ থেকেও। ফলে প্রতিদান হিসেবে চীন পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের সহায়তা দিচ্ছে।
দ্বিতীয় কারণ অভ্যন্তরীণ। চীনের জিজনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। এই প্রদেশ জঙ্গি হামলায় রক্তাক্তও হয়েছে। এখানকার মুসলিম উগুর সম্প্রদায় পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে লড়াই করছে। চীন ওই আন্দোলন ঠেকাতে প্রথম থেকেই তালিবানের মদত নেয়। আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত বাহিনী নাজিব সরকারের পাশে থেকেছে, তখন তালিবানকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে চীন। বেজিংয়ের নীতি ছিল স্পষ্ট, আমরা তোমাদের সাহায্য করব। তোমরা আমাদের কর। সেই থেকে উগুর সম্প্রদায়কে সমর্থন করা থেকে বিরত থেকেছে তালিবান। চীন-তালিবানের এই অলিখিত চুক্তি এখনও বলবৎ রয়েছে।
তৃতীয় কারণ অবশ্যই ভারত। তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী বলে মনে করে চীন। কিন্তু ১৯৫৯ সালেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন দলাই লামা। তাঁকে ঘিরেই দু’দেশের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব জোরালো হয়েছে। ভারত কোনও অবস্থাতেই দলাই লামাকে চীনের হাতে তুলে দিতে রাজি নয়। এরসঙ্গে রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম ও আকসাই চীন সীমান্ত নিয়ে বিবাদ। নয়াদিল্লিকে বরাবরই অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে বেজিং। চীন কোনওসময়ই চায় না ভারত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। সেই কারণে ভারতকে নানাবিধ চাপে রাখার একটি কৌশল সবসময়ই নেয় বেজিং।
চতুর্থত পাকিস্তান। চীনের চিরদিনের বন্ধু। জিনজিয়াং প্রদেশে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত এক শীর্ষ উগুর নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল পাকিস্তান। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বেজিংয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু দাউদ ইব্রাহিম থেকে শুরু করে মাসুদ আজহার—কারও ক্ষেত্রে এমন নিয়ম পালন করবে না পাকিস্তান। তাই পাকিস্তান যখন অনুরোধ করে বলে ভারতকে একটু টাইট দেওয়া হোক, তখন তা ফেলে না চীন।