অলকাভ নিয়োগী, বারাসত, বিএনএ: শাকের উপর একটু বড়ি ভেজে গুঁড়ো করে না দিলে জমে! কিংবা লাউয়ের তরকারিতে! ট্যাংরা-ভেটকিতেও দু’একটা বড়ি ভেজে দিলে ঝোলের স্বাদটাই আলাদা হয়ে যায়। খুব সামান্য বস্তু মনে হলেও বিভিন্ন ডালের বড়ি বঙ্গ-হেঁসেলের এক রত্ন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অনেক জায়গায় রান্নার বড়ি তৈরি হলেও রাজ্যসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হেঁসেল দখল করেছে নৈহাটির সুস্বাদু বড়ি শিল্প। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই বড়ি শিল্পের মানোন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার নৈহাটি সংলগ্ন মামুদপুর এলাকায় বড়ি উৎপাদন ও বিপণন কেন্দ্র খুলছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র দপ্তর। এর জন্য তিন কোটি ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দও হয়েছে। দপ্তরের দাবি, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সাড়ে পাঁচশো মানুষ উপকৃত হবেন। এবার শপিং মলেও এই বড়ি মিলবে। সেই সঙ্গে রান্নাঘরে বসে হাতে স্মার্ট মোবাইল থেকে বড়ির অর্ডার দিতে পারেন। কারণ, অনলাইন শপিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
নৈহাটি সহ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বহু এলাকায় বড়ি শিল্প রয়েছে। তবে, নৈহাটির বড়ি শিল্প বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে। এখানে বিপুল পরিমাণে বড়ি তৈরি হয়। বছর দেড়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিল্প কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নৈহাটির বড়ি শিল্প নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। দপ্তরের দাবি, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে— নৈহাটিতে বড়ি তৈরির প্রায় ছোট-বড় ৩০০টি ইউনিট রয়েছে। এখানে এমন ইউনিট রয়েছে, যাঁদের বছরে লাভের পরিমাণ এক কোটি পর্যন্ত। সবচেয়ে ছোট ইউনিটগুলিরও লাভের পরিমাণ বছরে কমবেশি ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু, এই শিল্প নিয়ে অতীতে কেউই কোনও নজর দেয়নি। ফলে, গতানুগতিকভাবে এই শিল্প চলছে। তাই এই শিল্পের উন্নতির জন্য উদ্যোগী হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। গত ১১ জানুয়ারি বারাসতের যাত্রা উৎসবের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রণবকুমার নস্কর বলেন, নৈহাটি সংলগ্ন এলাকাতেই মামুদপুর কৃষক বাজার রয়েছে। সেখানে নৈহাটি বড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং ক্লাস্টার ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে এই প্রকল্প হবে। সেখানে বড়ি তৈরি করা হবে এবং বিপণনও হবে। এই ক্লাস্টারে বড়ি তৈরির জন্য মেশিন বসানো হবে। অর্থাৎ হাত দিয়ে আর বড়ি দিতে হবে না। দ্বিতীয়ত, বর্ষার সময় বড়ি শুকানোর সমস্যা হয়। এখানে ড্রায়ার মেশিন বসানো হবে। তাই শুকানোর ঝামেলাও থাকবে না। তিনি বলেন, যে কোনও খাদ্যদ্রব্যের মান নির্ণয় এবং প্যাকেজিং নিখুঁতভাবে করতে হয়। এবার থেকে এই বড়ি শিল্পেও তা মেনে চলা হবে। উন্নতমানের প্যাকেজিংও করা হবে। সরকারিভাবে একটি কোঅপারেটিভ করে এই ক্লাস্টার পরিচালনা করা হবে। যাঁরা ছোট ব্যবসায়ী তাঁরা ভাড়া দিয়ে মেশিন ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা পৃথক পৃথকভাবে ফড়ের মাধ্যমে এখন বড়ি বিক্রি করেন। এই প্রকল্প হলে নিজেরাই নাম দিয়ে ব্র্যান্ডিং করতে পারবেন। এতে লাভের পরিমাণ আরও বাড়বে। আমরা শপিং মলেও এই বড়ি রাখার ব্যবস্থা করব। সেই সঙ্গে এখন অনলাইনে শপিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই প্রকল্প হওয়ার পর অনলাইনেও বড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের দপ্তর এই প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ করে দিয়েছে। খুব শীঘ্রই টেন্ডার প্রক্রিয়া হবে। তারপরই কাজ শুরু হয়ে যাবে। এটা রাজ্যের মধ্যে একটি অভিনব প্রকল্প হতে চলেছে।