সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পালাক্কাড জেলায় কেরল পুলিসের বিশেষ বাহিনী থান্ডারবোল্ট এক অভিযান চালিয়ে চারজন মাওবাদী জঙ্গিকে গুলি করে মারে। সরকারিভাবে বলা হয়, জঙ্গলঘেরা এলাকায় ওই মাওবাদীদের সঙ্গে ‘সংঘর্ষে’ তাদের মৃত্যু হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে থান্ডারবোল্ট কমান্ডোরা পাল্টা গুলি চালালে ওই চারজন প্রাণ হারায়। পুলিস তথা সরকারের এই ভাষ্য নিয়ে অবশ্য বিস্তর হইচই হয়। কংগ্রেস সহ বিরোধীরা তো বটেই, বাম-গণতান্ত্রিক জোট সরকারের দ্বিতীয় শক্তিশালী শরিক সিপিআই এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল তোলে। ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ‘সংঘর্ষস্থলে’ যাওয়া স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া ছবি ও রিপোর্ট উল্লেখ করে দলের রাজ্য সম্পাদক কান্নাম রাজেন্দ্রন কড়া ভাষায় বিজয়ন সরকারের পুলিসকে ‘ট্রিগার-হ্যাপি’ বলতেও ছাড়েননি। কিন্তু এই বিতর্ক সম্প্রতি আরও তুঙ্গে ওঠে একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে রাজ্যের বর্তমান মুখ্যসচিব টম জোশের লেখা নিবন্ধকে কেন্দ্র করে। ওই নিবন্ধে মাওবাদীদের খতম করার পক্ষে জোরালো যুক্তি দিয়ে পুলিসের এহেন অপারেশনের পক্ষেই সওয়াল করায় গোটা রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্কের জল আরও গড়ায়। বিধানসভার চলতি অধিবেশনেও প্রবল হইচই চলে এই ইস্যুতে। বিরোধী বা শরিক দলগুলির চাপে মুখ্যসচিব আগাম অনুমতি ছাড়াই এই নিবন্ধ লিখেছেন বলে মানলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা অবশ্য ঘোষণা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই ইস্যুতেও কেরল সিপিএমের অন্দরে বিজয়নবিরোধী লোকজন মুখ খুলতে শুরু করেন।
মাওবাদীদের খতম অপারেশনের ঠিক পরেই কোঝিকোড়ে সিপিএমের দুই সক্রিয় যুব কর্মীকে পুলিস মাওবাদীদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু বিতর্কিত নথি ও পুস্তিকাও পাওয়া যায় বলে পুলিস দাবি করে। দু’জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারাও দেয় তারা। আর তাতেই দলের মধ্যে এই ইস্যুতে নয়া বিতর্ক শুরু হয়। নীতিগতভাবে সর্বভারতীয় পর্যায়ে ইউএপিএ আইনের তীব্র বিরোধী সিপিএম। সংসদের ভিতরে ও বাইরে এ নিয়ে তারা বহুবার তাদের আপত্তির কথাও সরাসরি জানিয়েছে। এই অবস্থায় বাম সরকারের পুলিস সিপিএমেরই দু’জন কর্মীর বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা প্রয়োগ করায় গোটা দলের ভিতরে হইচই শুরু হয়। কার্যত এই ইস্যুতে দলের নেতৃত্ব থেকে সাধারণ সমর্থকরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইয়েচুরি, এম এ বেবির মতো দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা খোলাখুলি এভাবে বিজয়ন সরকারের পুলিসের ইউএপিএ প্রয়োগ করার বিরোধিতা করে মন্তব্য করেন। এমনকী, বৃহস্পতিবার কোচিতে গিয়ে দলে বিজয়নের উত্থানের অন্যতম স্থপতি প্রকাশ কারাতও ইয়েচুরিদের সুরেই কথা বলেন। দলের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ করা ভুল হয়েছে বলে তিনি সরাসরি তোপ দাগেন। কিন্তু এরপরও বিজয়ন পিছু হটার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছেন না বলে জানা গিয়েছে। বিধানসভায় তাঁর বিবৃতিতে তার প্রমাণ মিলেছে। সর্বোপরি, শুক্রবারই আদালতে পুলিস ওই দু’জনকে পেশ করে ইউএপিএ ধারার পক্ষে জোরালো যুক্তি খাড়া করেছে। বিচারক আপাতত দু’জনকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশও দিয়েছেন। পাশাপাশি এ নিয়ে দল রাজ্যব্যাপী প্রচার কর্মসূচি নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজ্য পার্টিতে তাঁর ক্ষমতা এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার মতো অবস্থায় আসেনি বলে মনে করা হচ্ছে।