বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
বেশ কিছুদিন ধরেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন শীলা দীক্ষিত। এদিন সকালে অবস্থার অবনতি হলে দিল্লির প্রথম সারির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানেই দুপুর ৩টে ৫৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দিল্লির যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানকার চেয়ারম্যান তথা চিকিৎসক অশোক শেঠ বলেন, ‘চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে ছিলেন শীলা দীক্ষিত। দুপুর ৩টে ১৫ মিনিট নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সেখানেই ৩টে ৫৫ মিনিটে মারা যান তিনি।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দিল্লি কংগ্রেসের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শীলা দীক্ষিত। গত লোকসভা নির্বাচনেও উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। যদিও, বিজেপি প্রার্থী মনোজ তিওয়ারির কাছে হেরে যান প্রবীণ এই কংগ্রেস নেত্রী। তিনবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শীলা। নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করতেন তিনি। শীলার শাসনেই আমূল বদলে যায় রাজধানীর পরিকাঠামো। সড়ক ও উড়ালপুল নির্মাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। রাশ টানেন পরিবেশ দূষণেও। সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সহজলভ্য করে তুলেছিলেন উমাশঙ্কর দীক্ষিতের পুত্রবধূ শীলা দীক্ষিত। তাঁকে পরাজিত করেই দিল্লির মসনদে বসেন আম আদমি পার্টি সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল। প্রসঙ্গত, ইন্দিরা গান্ধী সরকারের মন্ত্রী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী উমাশঙ্কর।
১৯৩৮ সালের ৩১ মার্চ পাঞ্জাবের কাপুরতলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শীলা। নয়াদিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কনভেন্ট স্কুল থেকে পাশ করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ করেন। উত্তরপ্রদেশের কনৌজ লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন শীলা। জুতো কিনতে ভালোবাসতেন তিনি। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ভক্ত শীলা দীক্ষিত এমপি হিসেবে সংসদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির দায়িত্বভার সামলেছেন। রাজীব গান্ধী মন্ত্রিসভার সংসদবিষয়ক মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন শীলা। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির নিজামুদ্দিনের বাসভবনেই রাখা হবে তাঁর মরদেহ। রবিবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ নিগম বোধ ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
শীলা দীক্ষিতের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি। ট্যুইটারে রামনাথ কোবিন্দ লিখেছেন, ‘ওঁর হাতেই দিল্লির ভোল পাল্টে যায়। তার জন্য চিরদিন মানুষ ওঁকে মনে রাখবেন। ওঁর পরিবার ও সহযোগীদের সমবেদনা জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘প্রাণবন্ত ও অমায়িক ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিত ছিলেন উনি। দিল্লির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। ওঁর পরিবার ও সমর্থকদের সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি।’ প্রবীণ নেত্রীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে কংগ্রেস। দলের তরফে ট্যুইটারে লেখা হয়েছে, ‘শীলা দীক্ষিতের প্রয়াণে আমরা শোকাহত। আজীবন কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তিন-তিনবার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দিল্লির ভোল পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি।’
ব্যক্তিগতভাবে শোক জানিয়েছেন রাহুল গান্ধীও। তাঁর ট্যুইট, ‘কংগ্রেসের স্নেহভাজন কন্যা। ব্যক্তিগতভাবে যাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলাম, সেই শীলা দীক্ষিতজির প্রয়াণে আমি বিধ্বস্ত। তিন দফায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গিয়েছেন। ওঁর পরিবার ও দিল্লিবাসীকে সমবেদনা জানাই।’ শোকপ্রকাশ করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধেরাও। রবিবার জম্মু ও কাশ্মীরের বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের। শীলা দীক্ষিতের মৃত্যুতে সে সফর বাতিল করেছেন তিনি। ট্যুইটে লিখেছেন, ‘শীলা দীক্ষিতের মৃত্যুতে দিল্লির বিরাট ক্ষতি হল। ওঁর অবদান সবাই মনে রাখবে। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’
শীলা দীক্ষিতের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমি যখন সাংসদ হয়েছিলাম, উনি তখন সংসদবিষকমন্ত্রী ছিলেন। উনি সবসময় আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। আমরা ওঁর অভাব অনুভব করব।’ শোকপ্রকাশ করেছেন বলিউডের তামাম তারকারাও। শীলাকে ‘প্রখ্যাত মহিলা’ আখ্যা দিয়েছে সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর লিখেছেন, ‘আমরা কখনও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করিনি। তবে গান ও কবিতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’ অন্যদিকে, অক্ষয় কুমার লিখেছেন, ‘তাঁর রাজত্বে দিল্লির ভোল বদলে দিয়েছিলেন উনি। ওঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা রইল।’