ম্যাঞ্চেস্টার, ১০ জুলাই: জেমস নিসামের বল যুজবেন্দ্র চাহালের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক টম লাথামের দস্তানায় জমা পড়তেই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বুকে টেনে নিলেন মার্টিন গাপটিলকে। কারণ, ব্যাটে রান না পেলেও ডাইরেক্ট থ্রোতে ধোনিকে রান আউট করে ম্যাচ নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে দিতে পেরেছেন গাপটিল। এরপরই অধিনায়ককে দেখা গেল ট্রেন্ট বোল্টকে জড়িয়ে ধরতে। মাথাব্যথার কারণ রবীন্দ্র জাদেজা বোল্টের বলেই উইলিয়ামসনের হাতে ধরা পড়ায় জয়ের গন্ধ পেয়ে যায় কিউয়ি শিবির। গ্রুপ পর্বের শেষ তিনটি ম্যাচে হারার পর নক-আউটে ভারতের মতো ফেভারিটকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার আনন্দে গোটা শিবিরই তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেছে। ড্রেসিংরুম থেকে ক্রিকেটাররা এসে যোগ দিলেন সেই বিজয়োৎসবে। ভিআইপি গ্যালারি থেকেই তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও এই উৎসবে গা ভাসালেন। তারই মাঝে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন জানালেন, ‘সত্যি বলছি, একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। যে উইকেটে খেললাম, আর যেভাবে জিতলাম, তা সত্যিই খুব নাটকীয়!’ গত বিশ্বকাপেও ফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু, ফাইনালে তারা হার মানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। কিন্তু উইলিয়ামসন জানালেন, ‘এবারের অনুভূতি এবং পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। এবারের দলে একাধিক কৃতী ক্রিকেটার রয়েছে। আর তাই ভারতের মতো শক্তিশালী ও প্রতিভাধর দলের বিরুদ্ধে এত কম রানের পুঁজি নিয়েও আমরা জিততে পেরেছি।’ উইলিয়ামসন বললেন, ‘আমরা দু’টি দলই বুঝতে পেরেছিলাম, এই ম্যাচে খুব বেশি রান উঠবে না। ২৪০ থেকে ২৫০ রান তুললেই চলবে। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতির কিছুটা বদল হয়। তবু, আমাদের বোলাররা নতুন বলে দুর্দান্ত বল করেছে। সুইং আদায় করতে পেরেছে। তবু, জাদেজা ও ধোনি দারুণভাবে ভারতকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু, চাপের মুখে ফের আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। খুব ভালো ক্রিকেট যে খেলেছি, তা বলব না। কিন্তু, আমরা ঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পেরেছি।’
রহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল এবং দীনেশ কার্তিক— ৩৭ রানের বিনিময়ে ভারতের এই তিনটি উইকেট তুলে নেওয়ার জন্য ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলার ম্যাট হেনরি। ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসনকে ছাপিয়ে নায়ক হওয়ার পর হেনরি জানিয়েছেন, ‘ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে চাই অস্ট্রেলিয়াকেই। গত বিশ্বকাপে ওরা আমাদের হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে। এবার ওদের হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে তার বদলা নিতে চাই।’ ম্যাট হেনরি অবশ্য এই জয়ের জন্য আলাদা করে উল্লেখ করেছেন জেমস নিসামের অনবদ্য ক্যাচ ধরা এবং মার্টিন গাপটিলের দুরন্ত ফিল্ডিংয়ের কথা। তিনি বলেছেন, কীভাবে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরা যায়, তা নিয়ে ভারতীয় ইনিংস শুরুর আগে আমরা আলোচনা করেছিলাম। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বিশ্বসেরা। তাই বুঝেছিলাম, ভুল করলে চলবে না। আমরা জানতাম, এই উইকেটে ব্যাট করা মোটেই সহজ নয়। পরিকল্পনামাফিক বল করতে পারলে ভারতকে বেগ দেওয়া সম্ভব। বাস্তবে তাই হয়েছে।’ ম্যাট হেনরি জানিয়েছেন, ‘লর্ডসে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারা বিরাট ব্যাপার! আমাদের সমর্থকরা যাতে হতাশ না হন, তারজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।’