বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 

কী কিনবেন অক্ষয় তৃতীয়ায়?
সুনীতি বন্দ্যোপাধ্যায় 

বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি অক্ষয় অর্থাৎ যা অবিনশ্বর অর্থাৎ ক্ষয় নেই। ১৪৩১ সনের অক্ষয় তৃতীয়া বৈশাখ মাসে ২৭ তারিখে ও ইংরেজি ২০২৪ সালের ১০ মে শুক্রবার।
বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথিতে ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর পুজো করা হয় সম্পদ এবং শুভকামনায়। এই দিন পুজোর মাধ্যমে ঘরের সম্পদ যাতে অক্ষয় অর্থাৎ ক্ষয় না হয় সেই কামনায় অক্ষয় তৃতীয়ায় দেবী লক্ষ্মী ও বিষ্ণু পুজো করা হয়।
এই দিন ভগবান সুন্দরেশা (শিবের অবতার) দেবী মধুরিমাকে বিবাহ করেছিলেন। তাই এই দিন বিবাহে দেবতার আশীর্বাদ বর্ষিত হয় নব দম্পতির ওপর। 
এই দিন আপনি ঘরদোর পরিষ্কার করবেন, ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর পুজো করবেন। ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর অভিষেক করবেন গোরুর দুধ, মধু, দধি, ঘৃত ও শর্করা অর্থাৎ পঞ্চমৃত সহযোগে। 
অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনা অত্যন্ত শুভ। দেবতাদের পুজো করুন এই দিন পুজো করলে আপনার সম্পত্তি কমবে না উপরন্তু বৃদ্ধি পাবে। এই দিন ভগবান বিষ্ণু পৃথিবী শাসন করেন তাই এই দিন ভগবান বিষ্ণু ও মাতা লক্ষ্মী ও কুবেরের পুজো শুভ দায়ক। হিন্দু শাস্ত্রানুসারে ত্রেতা যুগের শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে। 
পুজোর ফল 
ঐশ্বরিক আশীর্বাদ প্রাপ্ত হওয়া। বিষ্ণু, লক্ষ্মী ও কুবেরের আশীর্বাদ প্রাপ্তি লাভ ঘটবে। সম্পদ ও সৌভাগ্যের অক্ষয় প্রাপ্তি ঘটবে। কর্মক্ষেত্রে নাম যশ ও উন্নতি ঘটবে। আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মানসিক সম্প্রীতির পরিপূর্ণতা ঘটবে। এই দিন আপনি যাই করবেন না কেন তার ক্ষয় নেই। পুজো মুহূর্তে ভগবান বিষ্ণু মাতা লক্ষ্মী ও কুবেরের পুজোয় সর্ব সিদ্ধি লাভ করা যায়। 
গঙ্গায় স্নান না করতে পারলে শুদ্ধ জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান সারুন। ঘর পরিষ্কার করুন। 
বেদ অনুসারে এই দিন আপনি আপনার আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করুন। জব, তপ, পুজো, ইষ্ট দেবতার ধ্যান, দান, ব্রাহ্মণ ভোজন ও গাছ রোপণ ও গাছে জল দিন, ধর্ম পুস্তক পড়ুন। 
সূর্য ও চন্দ্রের কিরণ এই দিন সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হয় এই দিন পুজোয় দেহ ও মনের শুদ্ধি ঘটে। 
  অক্ষয় মানে হল ক্ষয়হীন অর্থাৎ যা ক্ষয় বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। এদিন পুজো, জপ, তপ, দান ও ধ্যানে আপনার ক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধি পাবে। 
পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দিন। আধ্যাত্মিক শক্তি ও জাগতিক ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পাবে। 
গঙ্গাস্নান ও ভোজ্য সহিত জলপূর্ণ ঘটদানে সূর্যালোক গমনের ফল পাওয়া যায়। 
এই দিন শিব, গঙ্গা, কৈলাস, হিমালয় ও ভগীরথের পুজো করা হয়। ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্তে নিয়ে আসেন। পুরী ধামে একুশ দিন ব্যাপী চন্দন যাত্রা উৎসব পালিত হয়। পুজো শেষে যব দ্বারা হোম করলে শুভ ফল পাওয়া যায়। 
জৈন ধর্মালম্বীদের বর্ষীতপ সমাপন উৎসব। শ্রীধাম নবদ্বীপে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর চন্দন যাত্রা উৎসব পালিত হয়। জলে ভিজিয়ে তুলসী পাতা নারায়ণকে নিবেদন করুন। 
অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোয় সম্পদ ও সৌভাগ্য বর্ধিত হবে। কর্মক্ষেত্রে নাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি পাবে। আধ্যাত্মিক উন্নতি ও সিদ্ধি লাভ ঘটবে। 
পুজোর নিয়ম
এই দিনটি স্বয়ংসিদ্ধ মুহূর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। 
আতপ চাল ও ঘষা চন্দন বাটা বিষ্ণুকে নিবেদন করুন, দেবী লক্ষ্মীকে কুমকুম দিন। তিল, যব, গম, ছোলা ও দুধ দ্বারা তৈরি মিষ্টি ও ভোগ নিবেদন করুন। কর্পূর জ্বালান, ঘি এর বাতি দিন, ধূপকাঠি ও পদ্ম ফুল দিয়ে শুদ্ধ অন্তঃকরণে দেবতাদের উদ্দেশ্যে অর্পণ করুন। বিষ্ণু লক্ষ্মী ও কুবের মন্ত্র পাঠ করুন। 
এই তিথিতে পাখা, চাল, পোশাক, ঘি, সব্জি, ফল ও তেতুঁল দানে শুভ ফলের বৃদ্ধি ঘটে। 
অক্ষয় তৃতীয়ায় এই কাজগুলি অবশ্যই করবেন। 
এই দিন নিরামিষ ভজন করুন, আমিষ ও উগ্র গন্ধযুক্ত খাবার বর্জন করুন। 
মদ ও মাদকদ্রব্য বর্জন করুন, এতে জীবনের রোগ শোক কমবে। 
তুলসী পাতা তুলতে হলে অবশ্যই স্নান করুন। 
এই দিন বাড়ি নির্মাণের কাজ স্থগিত রাখুন তবে গৃহ প্রবেশ হিসাবে খুবই শুভ মুহূর্ত। 
বাইরে থেকে ঘরের প্রবেশের সময় খালি হাতে প্রবেশ করবেন না, হাতে কিছু জিনিস নিয়ে প্রবেশ করুন উন্নতি ত্বরান্বিত হবে ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। 
এই তিথিতে মনকে সংযত ও উৎফুল্ল রাখুন, কপটতা, হিংসা এড়িয়ে চলুন। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন। বাড়ির বড় ছোট সবার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখুন।
জৈন ধর্মালম্বীদের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। 
এদিন কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য দান করেছিলেন। কুবের এই দিন লক্ষ্মী লাভ করেছিলেন বলে এই দিন বৈভব লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। 
এই তিথি হতে পুরী ধামে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ শুরু করা হয়। বৈদিক বিশ্বাস অনুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোনও শুভ কাজ সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় থাকে।
কেদার, বদ্রী , যমুনোত্রী ও গঙ্গোত্রী মন্দিরে দ্বার উদঘাটন হয়ে থাকে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে। ৬ মাস পূর্বে যে মন্দিরের দ্বার বন্ধ হয়েছিল দ্বার খুললেই প্রদীপের আলো দেখা যায়। যা ৬ মাস আগে জ্বালিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মহাভারতে আমরা দেখতে পাই যুধিষ্ঠিরদের বনবাসের সময় এই তিথির উল্লেখ আছে। এদিন বনবাসের সময় ঋষি মুনিরা যুধিষ্ঠিরদের কুঠিরে আগমন করলে দ্রৌপদী ত্রস্থ হয়ে পড়েন, অতিথিদের সেবা করার সামর্থ্য না থাকার জন্য তখন দ্রৌপদীর অনুরোধে যুধিষ্ঠিরের প্রার্থনায় সূর্যদেব সন্তুষ্ট হয়ে যুধিষ্ঠিরকে একটি বাটি দান করেন। দ্রৌপদী এই বাটির সাহায্যে সমস্ত মুনি ঋষিদের খাবার পরিবেশন করেন, যতক্ষণ না সমস্ত অতিথিবৃন্দ সন্তোষ লাভ করেন ততক্ষণ তা পূর্ণ ছিল। এই পাত্র অক্ষয় পাত্র নামে অভিহিত এই জন্য এই দিন নরনারায়ণ সেবায় অনেক সুফল লাভ করা যায়। 
এই দিনের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি ঘটনা হল সুদামা তার বাল্য বন্ধুর কাছে দ্বারকায় গিয়েছিলেন এবং বর হিসাবে সীমাহীন সম্পদ পেয়েছিলেন। 
মহারাষ্ট্রেও এটা একটি পবিত্রতম দিন, তারা মনে করেন এই দিন নতুন ব্যবসা শুরু হওয়া অত্যন্ত শুভ। নারীরা হলুদ ও কুমকুম বিনিময় করেন ও গৌরী পুজো করেন তাদের বিশ্বাস অক্ষয় তৃতীয়ায় কোনও শুভ কাজ শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য আনে। 
ওড়িশায় ধান চাষের শুভ দিন হিসাবে গণ্য করা হয়। এই দিন ধানের বীজ বপন করলে ভালো ফলের আশা করা হয়। কৃষকরা খরিফ মরশুমের সূচনা হিসাবে ধানের বীজ বপন করে থাকেন। 
তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশে এই দিন সমৃদ্ধি ও দাতব্যের সঙ্গে জড়িত। সিংহাচলম মন্দিরে বিশেষ যত্ন ও ভক্তি সহকারে এই দিনটি উদযাপিত হয়। মন্দিরে দেবতার চন্দনের স্তর এই দিন সরানো হয় যাতে ভক্তরা দেবতার অন্তর্নিহিত মূর্তি দেখবার সুযোগ পান, দেবতার প্রকৃত রূপের দর্শন লাভ ঘটে। 
এদিন চাল কেনা, ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা জমা দেওয়া, নতুন বস্ত্র কেনা শুভ। 
সোনা কেনার মুহূর্ত সকাল ৭টা ৪৯ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিট আবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিট থেকে বিকাল ৫টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিট থেকে ৮টা ১৩ মিনিট ও রাত ৯ টা ৩৫ থেকে ১টা ৪২ অবধি শুভ সময়। 
একটি নতুন হলুদ কাপড় ৭০ সেন্টিমিটার দিয়ে সিংহাসন ঢাকুন। ভগবান বিষ্ণুর বামে লক্ষ্মী দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করুন দেবতার ডান দিকে। ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান, কলসে হলুদ লাগান, সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক অঙ্কন করুন। সাতটি হলুদ পৈতা, সাতটা হলুদ সুপারি, তামার কয়েনে সাতটি কাঁচা হলুদ, সাতটি হলুদ মিষ্টি হলুদ কাপড় দিয়ে এই সমস্ত জিনিস রেখে ঢাকা দিন। হলুদ রঙের ধূপ জ্বালান, দেবীর সম্মুখে রেখে মা লক্ষ্মীর পুজো করুন। কুমকুম ও হলুদ দিয়ে কলসটি গঙ্গাজলে পূর্ণ করুন ভেতরে একটি হলুদ কয়েন দিন ঘটের মাথায় আম পাতা দিন। আম পাতার ওপরে একটি নারকেল দিতে হবে। 
জ্যোতিষ বিচারের বৈশাখ মাসের অক্ষয় তৃতীয়া হাওয়ায় মেঘ ও বৃষ রাশি শুভ ফল দান করে থাকে। মেষে সূর্য এবং বৃষে চন্দ্র অবস্থান করেন তাই এই রাশি অত্যন্ত শুভ হিসেবে দেখা হয়। ভগবান বিষ্ণুকে চন্দনের লেপ দিন। 
শাস্ত্রানুসারে এই দিন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সারা বছর পোশাকের আড়ালে পা ঢাকা থাকে বৃন্দাবনের বাঁকা বিহারীর। এইদিন তাঁর চরণ দর্শনের সুযোগ পায় সর্বসাধারণ। তাঁর চরণ দর্শন করলে মৃত্যুর পর স্বর্গে স্থান হয়।
পুরাণে কথিত আছে এই দিন স্বয়ং ভগবান শিব ভিখারির ছদ্মবেশে অন্নপূর্ণা দর্শন করেছিলেন। দেবী অন্নপূর্ণা দেবী পার্বতীর অবতার এবং এই পৃথিবীতেই আনন্দময় অনুষ্ঠানে ক্ষুধার্তদের অন্ন দান করার জন্যই দেবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। এই দিন খাবার দান করলে কোনও খাবারের অভাব ঘটে না। 

10th     May,   2024
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ