বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

ধৈর্য রাখতে পারলে দর্শককে অভিনন্দন

কম করে তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা যাঁর ছবি বানাতেই লাগে, তাঁর সিরিজ লম্বা হবে প্রত্যাশিত! তা বলে সাত ঘণ্টা? হ্যাঁ সঞ্জয়লীলা বনসালি পরিচালিত ‘হীরামাণ্ডি: দ্য ডায়মন্ড বাজার’-এর স্ক্রিন টাইম মোটামুটি সাত ঘণ্টা। প্রশ্ন হল, এই কাহিনি কি এখনকার দর্শককে টেনে বসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে? সোজা উত্তর, না। অথচ রাখতে পারত। 
একটু পিছনের দিকে তাকানো যাক। বাস্তবে লাহোরের হীরামাণ্ডিকে ‘শাহি মহল্লা’ও বলা হতো। মোগল নবাবদের ঘনঘন যাতায়াত ছিল এই মহল্লায়, তাই তা ‘শাহি’। সেখানে নাচ-গানে মনোরঞ্জনই ছিল মুখ্য। তবে শিল্পকলায় অভিজাত ছাপটি ছিল পাকা। ক্রমে তার রূপ বদলায়। অন্যান্য প্রদেশের মতো ভারত থেকেও শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনের জন্য মহিলাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হতো। ব্রিটিশ রাজ শুরু হওয়ার পরে আপত্তি ওঠে হীরামাণ্ডি নিয়ে। ব্রিটিশরা মাণ্ডি সরানোর চেষ্টা করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টে এলাকার অবনমনে সেখানে জুড়ে যায় দেহব্যবসা। নানা সময়ের ওঠাপড়ার সাক্ষী এই মাণ্ডির অস্তিত্ব এখনও বর্তমান।    
একদিকে বাইজিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ, ব্যাকড্রপে স্বাধীনতার লড়াই, সঙ্গে কিছুটা প্রেম— বনসালি কিছু বাকি রাখেননি। তাঁর সিগনেচার স্টাইলে উপর্যুপরি বৈভবে ঘেরা সেট, অসাধারণ কালার কম্বিনেশনে সিনেমাটোগ্রাফি, বিরাট মহল, ঝাড়বাতির আলো-আঁধারি মুহূর্ত তো ছিলই। কিন্তু গল্পের অসংখ্য সুতো। সব গোড়া থেকে জুড়তে জুড়তেই পেরিয়ে যাবে ঘণ্টা চারেক। ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে ধৈর্য হারাবে দর্শক। 
প্রাক স্বাধীনতা পর্বের আন্দোলন উঠে এসেছে সিরিজে। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে মালিকাজান (মনীষা কৈরালা), তিনি শাহি মহলের ‘হুজুর’ (মালকিন)। কালো একটা অতীত আছে তার। নবাব জুলফিকরের (শেখর সুমন) সঙ্গে মিলে নিজের দিদি রেহানাকে (সোনাক্ষী সিনহা) খুন করে সে। মালিকাজানের হাতে খুন হওয়া দিদির মেয়ে, ফারদিনের ভূমিকায় পর্দায় আবার ফিরে আসেন সোনাক্ষী সিনহা। 
মালিকাজানের দুই কন্যা, আলমজেব (শরমিন সেহগল) এবং বিব্বো (অদিতি রাও হায়দারি)। বাইজি বাড়ির ছায়া ত্যাগ করে আলম চায় কবি হতে। আর বিব্বো প্রতিষ্ঠিত বাইজি। সে গোপনে স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সাহেব বা নবাবদের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে বিপ্লবীদের জন্য জোগাড় করে অতি গোপন ও জরুরি সব তথ্য। এই চরিত্রটি সম্ভবত কানপুরের বাইজি আজিজুন বাইয়ের আধারে তৈরি। ১৮৫৭ বিদ্রোহে লড়েছিলেন আজিজুন। সিরিজে বিব্বোর ‘আশিক’ নবাব ওয়ালি মহম্মদ (ফারদিন খান) যে কেন আছেন! এতদিন পরে ফারদিনকে স্ক্রিনে দেখার আলাদা কোনও ‘এফেক্ট’ তৈরি হয়নি। 
দেশ উত্তাল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। এদিকে আলম সেসব খবর পায় প্রেমে পড়ার পর। তার প্রেমিক, তাজদার (তাহা শাহ) লন্ডন ফেরত নবাবপুত্র। তাজ-আলমের প্রেমের কাহিনিতে বড় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পরিচালক। এই তরুণ দুই অভিনেতার মধ্যে রসায়ন পোক্ত নয়। আলম নাচের দৃশ্যেও বেশ বেমানান। সিরিজের তাল কাটার শুরু সেখান থেকেই। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিফলনেও গোলমাল রয়েছে কিছু। লাহোরে আন্দোলন অথচ মুসলিম লিগের কোনও উল্লেখ নেই! 
সিরিজে চোখ ভরে দেখা যাঁকে, তিনি মনীষা। ধূর্ত, খল, প্রতিহিংসাপরায়ণ, স্বার্থপর একইসঙ্গে অসহায় বাইজির চরিত্রাঙ্কন তাঁর বাঁ হাতের খেল। গলার বুড়িয়ে যাওয়া চামড়া না ঢেকে তিনি মন দিয়েছেন অভিনয়ে। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন সোনাক্ষীও। দিনে দিনে প্রমাণ করছেন তিনি কতটা পাকা অভিনেত্রী। অভিনয়, নাচে মুগ্ধ করেছেন অদিতি রাও হায়দারিও। আর এক বাইজি লাজ্জো (রিচা চাড্ডা) এক নবাবের বঞ্চনার শিকার, ট্র্যাজিক চরিত্র। রিচার মতো শক্তিশালী অভিনেত্রীর পর্দায় উপস্থিতি আর একটু বাড়লে সিরিজ নিয়ে খারাপ লাগা হয়তো কমত। 
বনসালি তাঁর ম্যামথাকৃতি সিরিজ গুটিয়েছেন বাইজিমহলে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউয়ের ছোঁয়া দিয়ে। দেখার ধৈর্য বজায় রেখে এই পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে দর্শককে অভিনন্দন! 
অন্বেষা দত্ত

6th     May,   2024
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ