বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

‘সত্যজিতের সঙ্গীত আরও একশো বছর থাকবে’

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনের প্রাক্কালে কম্পোজার সত্যজিতের কথা শোনালেন সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র।

গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো
বয়স তখন কত হবে, আঠারো। বাবা জাহ্নবী রঞ্জন মিশ্রর সান্নিধ্যে বেহালার তালিম নিচ্ছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। পাশাপাশি শিখছেন কেমনভাবে তৈরি করতে হয় মিউজিক্যাল স্কোর। ঠিক ওই সময়েই ‘সুরকার’ সত্যজিৎ রায়ের ফ্লোরে পা রাখা দেবজ্যোতির। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে সুরকার বললেন, ‘তখন ‘ঘরে বাইরে’র অর্কেস্ট্রেশনের কাজ চলছে। ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ একটা বিরাট চেম্বার অর্কেস্ট্রেশন তৈরি করলেন সত্যজিৎ রায়। রবীন্দ্রনাথের গানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়! আমি ভায়োলিন, ভিয়োলা, চেলো বাদকের দলে ছিলাম। একজন ভায়োলিনিস্ট হিসেবে সেই সময় থেকে শুরু করে ‘কম্পোজার সত্যজিৎ রায় স্বর, সুর ও চিত্রভাষ’ বইটা লেখার সময় পর্যন্ত বলা যেতে পারে আমি সত্যজিৎ রায়ের মিউজিক নিয়ে অসম্ভব ভাবে ইন্সপায়ার্ড ছিলাম’। বইটা লেখার সময় তিনি আবার পরিচালকের সমস্ত ছবি দেখেছিলেন। প্রতিটি স্কোর, অর্কেস্ট্রেশন খুঁটিয়ে শুনেছিলেন। ‘ওই গানই ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’তে সিম্ফোনিক স্কেলে ব্যবহার করলাম। এই ভাবেই আমার গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোর মতো করে সত্যজিৎ তর্পণ’, বললেন তিনি। 

চেনা সুরের অনুভূতি
দেবজ্যোতির বিশ্লেষণ, ‘সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন মিউজিকে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আমাদের চেনা বিভিন্ন জিনিসকে উনি অদ্ভুত মুন্সিয়ানায় মিউজিক্যাল স্কোরের মধ্যে নিয়ে আসছেন।’ ‘মণিহারা’ ছবির দৃষ্টান্ত দেন দেবজ্যোতি। ‘ওই ছবিতে ‘বাজে করুণ সুরে’ থেকে একটা ছোট্ট ফ্রেজ নিয়ে কী করে ওই যে অদ্ভুত একটা ভৌতিক দৃশ্যের আবহ তৈরি করছেন, শুনে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। আবার ‘চারুলতা’য় ‘মম চিত্তে’ গানটা ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিয়োলা, চেলোতে বাজছে। শুনে মনে হচ্ছে যেন ওই তিন চরিত্রের সম্পর্কের মধ্যে একটা অশনি সংকেত নেমে আসছে।’ দেবজ্যোতি ফিরে যান ‘পথের পাঁচালী’র পরিপূর্ণতায়। বোঝান, ‘ওখানে রবিশঙ্করের যে মিউজিক, সেগুলোও পরিচালক হিসেবে সত্যজিৎ নিজের মতো করে ব্যবহার করছেন।’

আজি হতে শতবর্ষ পরে
মোবাইলের রিং টোন থেকে শুরু করে ব্যবহারিক জীবনের সর্বত্র এখনও সত্যজিতের সুর। জীবনযাপনের যন্ত্রনায়, যান্ত্রিকতায় কিংবা জয়োল্লাসে কিংবদন্তি পরিচালকের অর্কেস্ট্রেশন। দেবজ্যোতির দাবি, আগামী একশো বছরেও তা মলিন হবে না। কারণ? ‘সত্যজিৎ মানুষের চিরন্তন অনুভূতি, প্রবণতাকে সুরে ধরে ছিলেন। সারা পৃথিবীর সঙ্গীত শুনতেন, সেগুলোকে নিজের দেশের মতো করে তৈরি করতেন। সত্যজিতের সঙ্গীত আরও একশো বছর থেকে যাবে এই কারণেই’, বললেন তিনি।

নদীর প্রবাহ
রবীন্দ্রসঙ্গীত ও সত্যজিৎ রায়। প্রসঙ্গ উঠতেই দেবজ্যোতি মনে করিয়ে দেন, রবীন্দ্রনাথ নিজে স্বরলিপি লিখতেন না।দিনু ঠাকুর সহ বহু মানুষ স্বরলিপি করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ কখন, কোন অবস্থায় গান রচনা করে সুর দিচ্ছেন, কোন গানটার কোন লয়, ছন্দ সেগুলো সঠিক জানা যায় না। ফলে একটা ডিকোড করতেই হতো। দেবব্রত বিশ্বাসের কথা মাথায় রেখেও বলছি, সত্যজিৎ প্রথম মিউজিক্যালি ডিকোড করলেন। পরবর্তী কালে ঋতুপর্ণ ও আমি চেষ্টা করেছিলাম। এরপরেও এই রকম নিরীক্ষা এগিয়ে যেতে থাকবে। কারণ, রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্যে একটা সচল ব্যাপার আছে। যেন নদীর প্রবাহ। সেই প্রবাহমানতার মধ্যে সত্যজিৎ রায় ছিলেন’ বললেন দেবজ্যোতি।

কম্পোজার সত্যজিৎ
কম্পোজার সত্যজিতকে নিয়ে বইটি লেখার নেপথ্য কাহিনি ভাগ করে নিয়ে দেবজ্যোতি বললেন, ‘পরবর্তীকালে যাঁরা কাজ করতে আসবেন, অনেক রেফারেন্স তাঁরা এই বই থেকে পাবেন। আমার বইটা কিন্তু সত্যজিতের মিউজিকের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা নয়। আমি আমার ভাবনায় মিউজিকগুলোকে নিজের মতো করে ইন্টারপ্রেট করেছি।’ 
প্রিয়ব্রত দত্ত

1st     May,   2024
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ