বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

সাধারণ গোয়েন্দার গল্প
রিভলভার রহস্য

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী: ৫ আগস্ট, ১৯৬৬। মুক্তি পেল রক ব্যান্ড বিটলসের সপ্তম অ্যালবাম ‘রিভলভার’। ইয়লো সাবমেরিন, টুমরো নেভার নোজ, গুড ডে সানশাইনের মতো গানের কথা, মিউজিক স্টাইল চমকে দিল সঙ্গীতপ্রেমীদের। বিশ্বজুড়ে বিটলস মুগ্ধতার রেশ। সেই সুর ছুঁয়েছিল পাহাড়ি দম্পতি বিকাশ ও আসনলাকেও। আদ্যন্ত দুই বিটলস ভক্ত নিজেদের হোটেলের নাম রাখলেন সেই অ্যালবামের নামেই। ‘রিভলভার’। হলুদ রঙের ছোট হোটেলের ঘরগুলিও বিটলসের সদস্যদের নামে। তারই একটিতে এসে উঠেছেন তমালী বন্দ্যোপাধ্যায় (তনুশ্রী চক্রবর্তী)। কে তিনি? জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে। রিওয়াইন্ড...।
সকালের আড়মোড়া ভেঙে একটু একটু করে জাগছে কলকাতা। আর পাঁচটা দিনের মতো। ট্রাম, বাসের ক্যাকোফোনির মধ্যেই খুদেদের সঙ্গে গলি ক্রিকেটে ব্যস্ত সুব্রত শর্মা (সুপ্রভাত দাস)। চাকরি খুইয়ে প্রাক্তন এই ক্রাইম রিপোর্টার এখন ‘ড্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’র গোয়েন্দা। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ড্যানি বন্দ্যোপাধ্যায় (অঞ্জন দত্ত) একটি কেসের তদন্তের মধ্যেই গুলিতে প্রাণ হারান। তারপর থেকে কেস বিশেষ আসে না। তাই ক্রিকেট খেলা আর পাড়ার কাকুদের তাসের ম্যাজিক দেখিয়ে চমকে দিয়ে সময় কাটে সুব্রতর। এর মধ্যেই চেম্বারে হাজির এক মক্কেল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় (সুজন মুখোপাধ্যায়)। তাঁর স্ত্রী তমালী উধাও। সম্ভবত প্রেমিক জাভেদ চৌধুরীর (শোয়েব কবীর) সঙ্গে। তদন্তভার গোয়েন্দার কাঁধে। একের পর এক টুইস্টে ধাক্কা খেয়ে শেষ পর্যন্ত সুব্রত পৌঁছন বৃষ্টিভেজা দার্জিলিংয়ে।  
বর্ষায় চেনা পাহাড়ও অচেনা রূপ নেয়। গল্পের জটিল থেকে জটিলতর অংশ মেঘ-বৃষ্টি-কুয়াশা মুখরিত দার্জিলিংয়ে অন্য মাত্রা পাবে, সেকথা বিলক্ষণ জানতেন পরিচালক। এই রহস্যবিন্যাস আরও গতি পায় প্রভাতেন্দু মণ্ডলের ক্যামেরায়। অবশ্য দর্শকরা চেনা দার্জিলিং খুঁজলে হতাশ হবেন। কারণ এই দার্জিলিং আপনাকে চোখের আরাম দেবে না। বরং নিয়ে যাবে ‘হামরো দার্জিলিং’য়ে। বৃষ্টিভেজা ম্যাল, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পেরিয়ে ক্যামেরা পৌঁছেছে জৌলুসহীন পাহাড়ি গলি, তস্য গলিতে। ক্যামেরার সঙ্গে সমান্তরাল যাত্রা নীল দত্তের আবহ সঙ্গীতের। আর ‘পুরনো চাঁদ’ গানটি এই সিনেমার সেরা প্রাপ্তি।
বাংলা সিনেমায় এখন গোয়েন্দা যুগ চলছে—ব্যোমকেশ, ফেলুদা, শবর, একেন, সোনাদা... তালিকা দীর্ঘ। তীক্ষ্ণতার মাপকাঠিতে তাঁদের যুক্তি, বুদ্ধি, দক্ষতার নিরিখে সুব্রত নিতান্তই সাধারণ। আর এখানেই সাফল্য অঞ্জন দত্তের। নিজের তৈরি গোয়েন্দা চরিত্রকে তিনি গড়েছেন রাজা রায়, হরিপদদের মতো করে। এক অতি সাধারণ গোয়েন্দা যে দুমদাম প্রেমে পড়ে, দুঃখে কাঁদে, বোকার মতো ভুল করে। এমন চরিত্রে সুপ্রভাত দাসের অভিনয় মনে দাগ কাটে। তদন্ত এগোয়। পদে পদে হোঁচট খায় সুব্রত। কখনও অপহৃতাকে চিনতে পারে না এই গোয়েন্দা (!), আবার কখনও লাশ শনাক্তকরণ বিষয়ক কথা জন্ম দেয় বেশ কিছু প্রশ্নের। দ্বিতীয়ার্ধের চিত্রনাট্যও কিছুটা অগোছালো। 
সিনেমার ড্যানির ভূত (অঞ্জন) যেন সুব্রতর অল্টার ইগো। রহস্য-অসহায়তার টানাপোড়েন তনুশ্রীর চরিত্রজুড়ে। সেই অভিনয়ে লেটার মার্কস পাবেন তিনি। মক্কেলের মাপা ও চাপা চরিত্রে সুজন অনবদ্য। চন্দন সেন, কাঞ্চন মল্লিক, শোয়েব কবীর, রানা গুহ, তানিকা বসুও নিজেদের চরিত্রে সাবলীল। দক্ষ অভিনেত্রী হলেও এই চিত্রনাট্যে সুদীপা বসুর বিশেষ কিছু করার সুযোগ ছিল না। তবে এই সিনেমায় রিভলভার, জয়ী’স পাবের অনেক না-চরিত্রও মূর্ত হয়েছে অঞ্জন দত্তর হাত ধরে।
ছবির সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছে সুব্রত শর্মার নতুন বই। কলকাতা বইমেলায়। তারই একটি গল্প, ‘রিভলভার রহস্য’ নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে। সিনেমা হিসেবে এ ছবি হয়তো অঞ্জন দত্তের সেরা কাজ নয়, কিন্তু ছক ভাঙারও তো একটা আনন্দ আছে। শেষে বইপোকাদের জন্য একটাই অনুরোধ, ড্যানির সদ্য প্রকাশিত দ্বিতীয় বইটি কিনলেও সিনেমা দেখার আগে গল্পটা পড়বেন না। বড়পর্দার চমক... এ সুযোগ একবারই আসে।

6th     February,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ