বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিনোদন
 

নিজেকে প্রমাণ করার মতো 
চরিত্র এখনও পেলাম না

মুক্তি পাচ্ছে ‘বাবা বেবি ও’। নিন্দুকরা নানা কথা বললেও যিশু সেনগুপ্ত এখনও একই রয়েছেন। তবে হ্যাঁ, দেশের তিনটে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে কেরিয়ার ও জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই বদলেছে এখন। এক বিকালে যিশুর সঙ্গে আড্ডা দিলেন অভিনন্দন দত্ত।

একটা অভিযোগ দিয়ে শুরু করা যাক। অনেকেই বলেন, আপনাকে এখন কলকাতায় খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়!
(হেসে) বাজে কথা। গত দু’বছরে কলকাতায় বাংলা ছবির সংখ্যাও কমেছে। তখন হিন্দি আর দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির কাজগুলো শেষ করতে হল। তার মাঝেই ‘বাবা বেবি ও’ করলাম। ভালো বাংলা কনটেন্ট থাকলে ঠিকই পাওয়া যায় আমাকে। 

বাংলার বাইরে তো ছোট ছোট চরিত্রেই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। 
ভালো কনটেন্ট হলে একটা দৃশ্যে অভিনয় করতেও আপত্তি নেই। ‘রাজকাহিনী’ বা ‘জুলফিকার’ ছবিতেও তো ছোট চরিত্র ছিল। দর্শক কিন্তু চরিত্রগুলোকে মনে রেখেছেন। 

‘বাবা বেবি ও’-র ট্রেলার মুক্তি পাবে এই সপ্তাহে। ‘সিঙ্গল ফাদার’ কনসেপ্ট নিয়ে বাঙালি সমাজে এখনও ছুৎমার্গ রয়েছে...
সেই জন্যই তো ছবিটা করা। সারোগেসি বিষয়টা নিয়ে বাংলা কেন, সারা দেশেই ছুৎমার্গ রয়েছে। আশা করি এর পর, এই বিষয়ে একটু হলেও মানুষের চিন্তাভাবনা বদলাবে।

সারোগেসির মাধ্যমে বাবা হওয়ার জন্য এক সময় শাহরুখ খান, করণ জোহর বা তুষার কাপুর—প্রত্যেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এই ছবিতে রাজি হওয়ার পর মনে হয়নি যে ইমেজের দিকে আঙুল উঠতে পারে।

এত ভেবে কোনওদিনই ছবি সই করিনি। গল্পটা আমার ভালো লাগছে কি না সেটাই আসল কথা। চিত্রনাট্য পছন্দ হয়েছিল। তাই রাজি হয়েছিলাম। ব্যস, এইটুকুই।    

‘উমা’তে আপনার মেয়ের (সারা) সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। এবারে আপনার সহশিল্পী আরও ছোট দুটো বাচ্চা। ফ্লোরে ওদের সামলানো কতটা কঠিন ছিল?

মাত্র ছ’-সাত মাস বয়স। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। ওরা এতটাই মিষ্টি যে ওদের সঙ্গেই সারাটা দিন কেটে যেত। মহামারীর মাঝে শ্যুটিং হয়েছিল বলে যাবতীয় বিধি-নিষেধ মেনেই ফ্লোরে ছিলাম। 

বিগত কয়েক বছরে বলিউড বা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির অনেকের সঙ্গেই কাজ করলেন। কিন্তু ‘অন্তিম: দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ ছবিতে সলমনের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করাই কি সবথেকে উল্লেখযোগ্য বলবেন?

সেটা বলার সময় আসেনি। তবে বুঝতে পেরেছি, বাংলার তুলনায় বলিউডে আরও বেছে বেছে কাজ করা প্রয়োজন। ওখানে কাজের সুযোগ বেশি ঠিকই। কিন্তু কোন কাজটা শেষে কোথায় দাঁড়াবে সেটা আগে থেকে বোঝা মুশকিল। তাই বলিউডে আরও ভালো কাজের অপেক্ষায় রয়েছি।

সলমন মানুষ হিসেবে কীরকম?
বললে বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সলমন কিন্তু মাটির মানুষ। তবে খুবই কম কথা বলেন। সেটেই মহেশ (মঞ্জেরেকর) স্যারের উপস্থিতিতে মহামারীতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা নিয়ে ওঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল।

বাংলা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ওঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছিল?
উনি বলছিলেন যে দেশের অন্যতম সেরা ছবিগুলো বাংলা থেকে আসে। একসময় চিরঞ্জীবী স্যারও একই কথা বলেছিলেন। বাংলার প্রতি দেশের বাকি ইন্ডাস্ট্রি এখনও এই ধারণা পোষণ করে দেখে খুবই ভালো লেগেছিল।   

সলমনের সঙ্গে কাজের কোনও স্মৃতি ভাগ করতে চান?
(একটু ভেবে) প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ছবির ক্ল্যাইম্যাক্স শ্যুট করেছিলাম। তার মধ্যে অনেক দৃশ্যই সম্পাদনায় বাদ গিয়েছে। স্টান্টগুলো সব আমারই করা। সলমন একবার বলেছিলেন, ‘কী দরকার। স্টান্টম্যান তো আছেই।’ আমি বলেছিলাম, একবার চেষ্টা করে দেখাই যাক। তখন রাজি হয়েছিলেন। একটা দৃশ্যে আমার টেক ওকে হচ্ছিল না। তখন উনি আমার সঙ্গে রিহার্সাল করেছিলেন। অত বড় সুপারস্টারের থেকে এতটা সহযোগিতা আশা করিনি।   

সলমনের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে টলিউডের অনেকেই হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা জাহির করতেন। কিন্তু আপনি উল্লেখ তো দূরঅস্ত, ওঁর সঙ্গে একটা ছবিও পোস্ট করেননি। কারণটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় একদমই সক্রিয় নই। কাজের জন্যই থাকা। কতগুলো কথা বলতে চাই। হয়তো অনেকে আমাকে দার্শনিক ভাবতে পারেন! সোশ্যাল মিডিয়া শুধুই মানুষের সাফল্যের কথা বলে। কেউ কি কারও ব্যর্থতা সেখানে উল্লেখ করেন? তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধুই ভালো ভালো কথা বলে ফ্যান বা ফলোয়ারদের কিন্তু আমরা ভুল বার্তা দিই। জীবন শুধুই সুন্দর নয়।

তাহলে চিরঞ্জীবী ও আলিয়ার সঙ্গে তোলা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন কেন?
চিরঞ্জীবী স্যারের সঙ্গে ছবিটা আমি সত্যিই তুলতে চেয়েছিলাম। হায়দরাবাদে আলিয়ার সঙ্গে জিমে দেখা হওয়ার পর ছবিটা তুলে আমরা প্রথমে মহেশ (ভাট) স্যারকে পাঠিয়েছিলাম। তারপর আলিয়া বলায় ছবিটা পোস্ট করি।      

‘সড়ক ২’ মুক্তির আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে ছবির বিরুদ্ধে ক্যাম্পেন হয়েছিল, সেটা মানা কতটা কঠিন ছিল?
আমি জানতাম এটা হবেই। আমাকেও বলা হয়েছে, কোন সাহসে আমি মহেশ ভাটের ছবিতে অভিনয় করেছি! আমার বাবা সবসময় একটা কথা বলতেন, কারও দিকে একটা আঙুল তুললে মাথায় রাখতে হবে নিজের দিকেও তিনটে আঙুল ওঠে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কথাটার মূল্য বুঝতে পারছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তো কেউ ভেবে কথা বলে না। সবাই সিনেমার সমালোচক। সবাই রান্না জানে, সবাই ইঞ্জিনিয়ার। ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম। 

বিগত তিন বছরের কথা মাথায় রেখে জাতীয় মঞ্চে এখন নিজের পরিচিতিকে কীভাবে দেখছেন?
অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনওদিনই ভাবি না। আমাকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন যিশু এখনও একই রয়েছে। এখনও ক্রিকেট খেলতে ভালো লাগে, ড্রামস বাজাতে পছন্দ করি। এখনও বাড়ির ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই। পরিচিতি একটু বেড়েছে সেটা অস্বীকার করব না। হায়দরাবাদে আমাকে সেলফি তুলতে হচ্ছে। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে আক্ষেপ হয়, নিজেকে প্রমাণ করার মতো চরিত্র এখনও পেলাম না।

ইন্ডাস্ট্রিতে ২৩ বছর কাটিয়ে ফেলার পরেও এরকম ভাবনার কারণ কী?
‘চিত্রাঙ্গদা’য় অভিনয় করে মনে হয়েছিল নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছি। তারপর মনে হল, এরপর কী? ‘এক যে ছিল রাজা’র পরেও একইরকম ধারণা হয়েছিল। রাতে ঘুমতে দেবে না, সেরকম একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের অপেক্ষায় আছি।

টলিউডের কোথায় উন্নতির প্রয়োজন বলে মনে হয়? 
আগে ভালো দিকটা বলি। বাংলার পরিচালকরা ১৮-২০ দিনে একটা ছবি তৈরি করছেন। এটা বাইরে অকল্পনীয়। সেখানে আমরা এগিয়ে। আমাদের বাজেট কম, সিনেমা হল কমছে। ২০০০ সালে যখন অভিনয়ে আসছি তখন শুনতাম একশো হলে ছবি রিলিজ করছে। আজ সেটা একশো স্ক্রিনিংয়ে দাঁড়িয়েছে! সবার আগে চাই পরিকাঠামো। দ্বিতীয়ত, বাংলায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য একটু কম বলে আমার মনে হয়। পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে এর কথা ওকে বলা হচ্ছে! এতটুকু একটা ইন্ডাস্ট্রিতে এগুলো কাম্য নয়। নতুন কাউকে লঞ্চ করলে সবার উচিত পাশে দাঁড়ানো। 

নতুন বছরে কেরিয়ার ও জীবন থেকে প্রত্যাশা কী?
আমি আজ পর্যন্ত জীবনের কাছে কিছু চাইনি। সাফল্য বা ব্যর্থতা—যখন যেটা এসেছে মাথা পেতে নিয়েছি। যেটাই সামনে আসুক না কেন একজন স্বামী, বাবা বা বন্ধু হিসেবে সেটার মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে সকলের পাশে যেন দাঁড়াতে পারি। আরও বেশি করে যেন ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে পারি, জীবনের কাছে এইটুকুই প্রত্যাশা।
 

19th     January,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ