বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
নানারকম
 

বহিছে একই ধারা

কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ। মহাভারতের এক অন্যতম অধ্যায়।  এই  যুদ্ধের পিছনে ছিল  রাজনৈতিক অভিসন্ধি। রাজ্যপাট নিজের দখলে রাখতে কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে  নিজের মতো আইন তৈরি করে নিয়েছিলেন সত্যবতী। মহাভারতে  সত্যবতী ছিলেন এক অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর রাজনীতির উৎস খুঁজতে মহাভারতের গভীরে ডুব দেওয়া যায়। তাঁকে কেন্দ্র করে কালিন্দী নাট্য সৃজনের নাটক ‘বহমান’।  
মহাভারতের প্রারম্ভিক পর্বকে এই নাটকের বিষয় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।  যেখানে  দাসরাজের পালিত কন্যা সত্যবতীই নায়িকা। তাঁর ঘটনাবহুল জীবন। নানা ঘাত প্রতিঘাত  তাঁর নারীসত্তাকে কণ্টকময় করে তলে। মুনি পরাশর তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। এরপর সত্যবতীর গর্ভে জন্ম হয় ব্যাসদেবের। কিন্তু সত্যবতী অনার্য হওয়ার কারণে পরাশর মুনি তাঁকে ত্যাগ করে ব্যাসদেবকে নিয়ে চলে যান। এদিকে  মহারাজ শান্তনু শিকারে এসে সত্যবতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে দূত মারফত বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। রাজকূলে কন্যার বিবাহ প্রস্তাব আসায় যারপরনাই আনন্দে আপ্লুত দাসরাজ। তিনি  কন্যার কাছে রাজবধূ হওয়ার আকুতি নিয়ে আসেন। সত্যবতী বিবাহ প্রস্তাবে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেও পিতার আকুতিকে অসম্মান করতে পারেন না। কিন্তু বিবাহের একাধিক শর্ত আরোপ করেন সত্যবতী। তাঁর অসম্মানের প্রতিশোধের পাশাপাশি আর্যাবর্তে অনার্যদের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর  লক্ষ্য।
ভেবেচিন্তে রাজনীতির ঘুঁটি সাজাতে থাকেন সত্যবতী। কুরু বংশের মহারানি হয়ে রাজনৈতিক ভাবে সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের হাতে।
সত্যবতী দেখিয়ে দেন রাজনীতিতে ন্যায় অন্যায় বলে কিছু নেই। যে ভাবে হোক কার্যসিদ্ধি করাই লক্ষ্য। তাই রাজনীতিই শেষ কথা।  এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান রাজনীতির কারবারিদের মুখগুলো দর্শকের মনে ভেসে ওঠে। মহাভারতে যে বীজ বপন করা হয়েছিল তা আজও সমান ভাবে বহমান। এই নাটকের মধ্যে নাট্যকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে কৌশল তুলে ধরেছেন  তার সঙ্গে বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
সত্যবতীর দৃঢ় কন্ঠে পুরুষ জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও প্রতিবাদের সুর  উঠে আসে। আর্যাবর্তে নারীরা প্রবহমান কাল ধরে অবহেলিত ও অপমানিত। ভালো লাগে সত্যবতীর প্রতিবাদী অভিনয়। ছোট সত্যবতী (আম্রপালি মিত্র) ও বড় সত্যবতী (মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়) এই নাটকের মূলধন। সত্যবতীর সংলাপ দর্শককে ভাবিয়ে তোলে। নাট্য পরিচালনা ও দাসরাজার চরিত্রে ছিলেন বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়। ভীষ্মের চরিত্রে অরূপ দত্ত অনবদ্য। সভামুখ্যের দায়িত্ব দারুণ সামলেছেন। ব্যাসদেবের (রণদেব নন্দী) চারিত্রিক গুণাবলী ধরা পড়েছে তাঁর অভিনয়ে। তাঁর চাহনির মধ্যে চরিত্রের দৃঢ়তা  দারুণ ভাবে ধরা পড়ে। অম্বিকা (জুঁই বাগচি), বিদুর (অচিন্ত্য কুমার মজুমদার), কুন্তির (শর্মিষ্ঠা বোস)  অভিনয় নজর কাড়ে। শেষে দুর্যোধন (প্রতাপ মন্ডল) হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন। দৃঢ় প্রতিবাদী  কণ্ঠে তিনি সত্যবতীকে সত্যের মুখোমুখি  দাঁড় করিয়ে দেন। নাটকের সূত্রধরের কাজটি করেন অরিন্দম বন্দ্যপোধ্যায়। অরুণ মণ্ডলের মঞ্চ পরিকল্পনা, অনিন্দ্য নন্দীর আবহ ও দীপঙ্কর দে-র আলোর কারিগরিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নাটক। বিশেষ করে অন্দরমহলের মঞ্চ পরিকল্পনা ও আলোর ব্যবহার সুন্দর। অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, আম্রপালি মিত্র, প্রলয় মৃধা, সংবিৎ চট্টোপাধ্যায়ের গানে নাটক ভরে ওঠে। 
তাপস কাঁড়ার

5th     April,   2024
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ