বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
শরীর ও স্বাস্থ্য
 

প্রখর গরমে ভোট নেতা, কর্মী থেকে আম জনতা সুস্থ থাকবেন কীভাবে?

পরামর্শে মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস। 

৭০ বছরের সেরা গরম দেখে ফেলেছে দক্ষিণবঙ্গ। চলতি সপ্তাহে ঝড়জলের প্রভাবে গরমের প্রকোপ একটু কমলেও জ্বালাপোড়া গরম আবার ফিরবে বলেই মত আবহবিদদের। এই তীব্র দাবদাহের মধ্যেই শুরু হয়েছে ভোট। এখনও চার দফা ভোটগ্রহণ বাকি। প্রার্থী থেকে নেতা-মন্ত্রী সকলেই চষে ফেলছেন ভোট ময়দান। ভোটকর্মীরাও নিজেদের দায়িত্ব পালনে ছুটে চলেছেন বিভিন্ন স্থানে। প্রচারের চাপ ছাপ ফেলছে নেতা-মন্ত্রী-প্রার্থীদের রোজনামচায়। আবার গণতন্ত্রের অধিকার পালনে এই গরমের মধ্যেই লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে আমজনতাকে। প্রবল তাপ, আর্দ্রতা ও গরমের মরশুমে ভোটযজ্ঞ সমাপন করতে চাইলে সুস্থতার দিকেও নজর দিতে হবে বইকি। ইতিমধ্যেই গরমে অসুস্থ হয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী, হিট স্ট্রোকে মারাও গিয়েছেন কিছু সাধারণ মানুষ। তাই নেতা থেকে প্রার্থী বা সাধারণ মানুষ থেকে ভোটকর্মী সকলকেই সাবধান হতে হবে। 
ভোটকর্মীদের সতর্কতা
বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারি চাকরিজীবী নানা ব্যক্তি ভোটের ‘ডিউটি’ পান। পুলিস থেকে শুরু করে শিক্ষক, একশ্রেণির সরকারি অফিসার ও কর্মীরা এই তালিকাভুক্ত। প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হাজার প্রিসাইডিং অফিসার কাজ করছেন এবারের ভোটে। সাধারণত তাঁদের আগে থেকেই ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হয় অর্থাৎ যেদিন ভোট তার আগের দিন। 
বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরের জেলায় গিয়ে এই ডিউটি পালন করে আসতে হয়। ফলে সেখানে বাড়ির আরাম ছেড়ে, চেনা পরিবেশের বাইরে দিনানিপাত করতে হয়। এতে সকলের আগে নষ্ট হয় খাওয়া ও বিশ্রাম নেওয়ার সময়। মহিলাকর্মীদের আবার এর সঙ্গে যোগ হয় পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত শৌচালয়ের অভাব। 
পুরুষদের ক্ষেত্রেও গ্রামে-গঞ্জে ডিউটি পড়লে অনেক সময় এই বিষয়টি নিয়ে আপস করতে হয়। ফলে ডিউটি সেরে ফিরে অনেকেই ইউরিনাল ইনফেকশন, ডিহাইড্রেশন বা পেটের সমস্যায় ভোগেন। তাই ভোটের ডিউটি করতে গিয়েও সুস্থ থাকার কৌশল আয়ত্তে আনতে হবে। 
• বাইরের কাটা ফল, বরফ জল, মালাই বরফ এসব খাবেন না। 
• অন্য এলাকার জল অনেক সময় সহ্য হয় না। তাই সঙ্গে জিওলিন রাখুন। 
• ভোটকর্মীদের জন্য নানা পদ রান্না করা হয়। গরমে যা-ই খান অল্প খাবেন, চেষ্টা করুন হালকা খেতে। 
• এই সময় শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক নষ্ট হয়। ঘুম কম হয় বা অচেনা পরিবেশে ভালো ঘুম হয় না। তাই হজমের সমস্যা হতে পারে। কাজেই খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত বিশ্রাম।
• শৌচালয়ের সমস্যা থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে জানান। 
• নানা শারীরিক সমস্যার জন্য যদি নিত্য কোনও ওষুধ খাওয়ার থাকে, সেগুলো যেন ভুলে না যান সেই খেয়াল রাখতে হবে।
• পুলিসকর্মীরা টুপি, ছাতা ব্যবহার করুন। সঙ্গে প্রবল ঘামে শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যাওয়া আটকাতে ওআরএস থাক।  

• ভোটকর্মীদের নানা স্নায়ুর চাপের মধ্যে দিয়ে এই ডিউটি পালন করতে হয়। মাথা ঠান্ডা রাখুন। ব্লাড প্রেশার বা অন্য ধরনের সমস্যা থাকলে স্ট্রেস বা উত্তেজনা যত কম নেবেন ততই ভালো থাকবে শরীর। 
আম জনতার নিয়ম
রোদে পুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। লাইনে দাঁড়িয়েও প্রখর গরমে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। হিট স্ট্রোকের শিকার হতে পারেন। তাই আমজনতাকেও কিছু নিয়ম মানতে হবে।
• ভোট দিতে যাওয়ার সময় টুপি, ছাতা, রোদচশমা, জলের বোতল সঙ্গে রাখুন। বাড়ি ফিরে ওআরএস খান। 
• চেষ্টা করুন মাঝে মাঝে লাইন রেখে বেরিয়ে একটু ছায়ায় দাঁড়াতে। 
• বয়স্করা সকালের দিকে ভোট দিন। রোদের তেজ বেড়ে যাওয়ার আগেই বাড়ি ফিরে আসুন। 
• হালকা খাবার খান ও ঘন ঘন জল পান করুন।

অভিজ্ঞদের পরামর্শ
অরূপ কুমার দে
পেশায় শিক্ষক 
ভোটের দ্বায়িত্ব-প্রিসাইডিং অফিসার
লোকসভা, বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত ভোট মিলিয়ে অন্তত দশটা নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবকটা ভোটই হয় গরম বা বর্ষার মধ্যে হয়েছে। এইবারও তাই। স্বাভাবিকভাবেই গরমের জন্য বিশেষ সতর্কতা নিতেই হয়। আমি সাধারণত গরমকে হার মানাতে প্রশিক্ষণ এবং ভোটের দিন ঢিলেঢালা পোশাক পরি। সাধারণত আদ্দির পোশাক পরতেই অভ্যস্ত। ভোট যেদিন, তার আগের দিনই ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হয়। ভোটের দিন সকালে উঠেই স্নান করে নিই। তারপর সকালে হালকা কিছু খাবার খাই। সঙ্গে পর্যাপ্ত জল এবং এনার্জি ড্রিংকস রাখি। ভোটকেন্দ্রে যারা খাবার তৈরির দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের বলাই থাকে যেন হালকা খাবার তৈরি করা হয়। মশলাদার খাবার একদমই নয়। সাধারণত ডাল বা একটা চচ্চড়ি এটাই খাই ভোটের দিন। দিনেরবেলা মাঝেমধ্যেই মুখ, চোখ, কান, ঘাড়ে জল দিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিই। যাঁরা প্রথম ভোটের ডিউটিতে যাচ্ছেন, তাঁদের এগুলোই মেনে চলতে বলব। সর্বোপরি আমার উপদেশ থাকবে কোনওরকম মানসিক চাপ নেওয়া চলবে না। ঘাবড়ে গেলেই বিপদ। মানসিক চাপ নিয়ে ফেললে এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। 

অনামিকা চক্রবর্তী 
পেশায় শিক্ষিকা 
ভোটের দায়িত্ব— প্রিসাইডিং অফিসার
আমাদের মহিলাদের ক্ষেত্রে ভোটের ডিউটি অসুবিধাজনক হলেও এড়ানো সম্ভব নয়। সবথেকে বড় সমস্যা হল গরম। এ জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা রাখতেই হয়। ভোটের আগের দিন রাতে হালকা খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়াও হালকা পোশাক পড়ে যাওয়া এবং সঙ্গে অতিরিক্ত পোশাক রাখা দরকার। আমি সাধারণত সাদা পোশাক পরতেই অভ্যস্ত এই গরমকালে। ভোট-ডিউটির দিনও তাই-ই করি। সাধারণত প্রত্যন্ত এলাকাতেই এযাবৎ ভোটের ডিউটি করে এসেছি।  যেহেতু গরমের জন্য পছন্দসই পর্যাপ্ত খাবার পাবার সম্ভাবনা কম থাকে, তাই সঙ্গে শুকনো খাবার রাখি। যেমন মুড়ি, চিঁড়ে, বিস্কুট, ছাতুর প্যাকেট ইত্যাদি। আগেই দেখি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রয়েছে কি না। সেইমতো পর্যাপ্ত জল মজুত করে রাখি। জল পরিশ্রুত করার জন্য জিওলিন সঙ্গে থাকে। এছাড়াও ওআরএস-এর প্যাকেট রাখা মাস্ট। দুপুরে হালকা খাবার পারলে সঙ্গে টক দই খেলে গরম থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। যাঁরা নতুন ভোট করতে যাচ্ছেন তাঁদের এই ব্যবস্থাগুলি রাখতেই বলব।



নেতা, কর্মী, প্রার্থীদের দাওয়াই
সৌগত রায় 
তৃণমূল প্রার্থী
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠছি। আটটা থেকে খুব বেশি হলে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রচার চলছে। প্রচারের সারাদিন জল খাচ্ছি প্রচুর পরিমাণে। এছাড়াও শরবত, নুন- লেবু-চিনির জল ইত্যাদি থাকছে। মাঝেমধ্যে সময় পেলে বরফ মুখে-গায়ে-হাতে একটু ঘষে নিচ্ছি। মাথায় টুপিটা থাকছে সবসময়। অতি সাধারণ ঘরোয়া খাবার খাচ্ছি। বিকেলের দিকে ৪টের পর থেকে প্রচার শুরু করছি।

ডাঃ সুভাষ সরকার
বিজেপি প্রার্থী
প্রাতরাশে হালকা খাবারের সঙ্গে তরমুজ জাতীয় রসাল ফল খাচ্ছি। 
এছাড়াও রুটি, মুড়ি, চিঁড়ে টক দই থাকছে পাতে। বেশি বেশি খাওয়া নয়, প্রয়োজনে বারবার কম কম খাবার খাচ্ছি। 
কোনও মশলাদার খাদ্যগ্রহণ নয়। দু’বার স্নান জরুরি। একটা করে ডাব মাস্ট। সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত প্রচার করছি। সঙ্গে নকুল দানা এবং ফাইন সল্ট থাকছে।

সুজন চক্রবর্তী
সিপিএম প্রার্থী
একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হচ্ছে আমার প্রচারের জন্য সাধারণ মানুষ যেন কোনওভাবেই কষ্ট না পান। তাছাড়া পার্টির কর্মীরাও যাঁরা মিটিং, মিছিলে আসছেন, তাঁদের দিকটাও বিশেষ নজরে রাখতে হচ্ছে। ফলে তীব্র তাপমাত্রার সময়টাকে সরিয়ে রেখে সকালে এবং বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে প্রচার চলছে। হেঁটে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে বক্তব্য তুলে ধরার মধ্যে আলাদা তাৎপর্য রয়েছে, সেটাই করার চেষ্টা করছি।

প্রদীপ ভট্টাচার্য 
কংগ্রেস প্রার্থী 
ভোরে যখন বেরচ্ছি, তখন চিঁড়ে-নুন-লেবু দিয়ে খেয়ে যাচ্ছি। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রচার চলছে। ফিরে এসে নুন- চিনি আর লেবু দিয়ে শরবত খাচ্ছি। দুপুরবেলায় পাতে সব্জি দিয়ে পাতলা ঝোল, একেবারে সাধারণ মাছের ঝোল, চাটনি আর টক দই। চা মাত্র সকাল এবং বিকেলে এক কাপ করে। জল খাই প্রচুর পরিমাণে। সন্ধেবেলায় হেলথ ড্রিঙ্ক খাচ্ছি। ১২টা থেকে ৩টে কোনও প্রচার নয়। 

9th     May,   2024
 
 
অক্ষয় তৃতীয়া ১৪৩১
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ