বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

ঋষি অরবিন্দ -এর ছেলেবেলা

আমাদের এই দেশকে গড়ে তোলার জন্য অনেকে অনেকভাবে স্বার্থত্যাগ করে এগিয়ে এসেছিলেন। এই কলমে জানতে পারবে সেরকমই মহান মানুষের ছেলেবেলার কথা। এবার ঋষি অরবিন্দ। লিখেছেন চকিতা চট্টোপাধ্যায়। 

‘অরবিন্দ রবীন্দ্রের লহ নমস্কার
হে বন্ধু, হে দেশবন্ধু, 
স্বদেশ আর তার বাণী মুক্তি তুমি।’
যাঁকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তিনি হলেন সেই বিরল ব্যক্তিত্ব, প্রথম জীবনে যিনি ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, পরবর্তীকালে যাঁর রূপান্তর ঘটেছিল ‘ঋষি’ অরবিন্দে! ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবসের দিনটি যে তাঁরও জন্মদিবস— তাই আজ বলব তাঁর আশ্চর্য জীবন-কথা।
 প্রাচ্য সভ্যতার আদর্শ ও পাশ্চাত্য সভ্যতার বাস্তবতার সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা বাংলার  
‘নবজাগরণ’-এর প্রতিভূ ‘ইয়ংবেঙ্গল’-এর অন্যতম উত্তরসাধক বাবা ডঃ কৃষ্ণধন ঘোষ ও মনীষী রাজনারায়ণ বসুর কন্যা মা স্বর্ণলতাদেবীর ঘরে ১৮৭২ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম হয়েছিল অরবিন্দ ঘোষের। ডঃ কৃষ্ণধন মনেপ্রাণে এমনি সাহেবি ভাবধারার ছিলেন যে খ্রিস্টানদের মতোই ‘মিডল- নেম’ সমন্বিত নামকরণ করেছিলেন ছেলের— অরবিন্দ ‘অ্যাক্রয়েড’ ঘোষ! পাঁচবছর বয়সে দুই দাদার সঙ্গে  অরবিন্দ ভর্তি হলেন দার্জিলিং লোরেটো কনভেন্টে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বলে শিক্ষকদের প্রিয়পাত্র ছিলেন সেখানে। 
পাশ্চাত্য শিক্ষার গুণগুলি আয়ত্ত করানোর লক্ষ্যে কৃষ্ণধন ছেলেদের লেখাপড়া শিখতে পাঠিয়ে ছিলেন বিলেতে। তাই সাত বছর বয়স থেকে একুশ বছর বয়স অবধি অরবিন্দের সঙ্গে  বাংলা ভাষার কোনও পরিচয় হল না। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে মিঃ রেভারেন্ড  ড্রুয়াট-সস্ত্রীক তাঁকে ল্যাটিন ও ইংরেজি শেখালেন। ম্যানচেস্টার স্কুলে ভর্তি হলেন অরবিন্দ। পড়াশুনোয়, ইংরেজি কবিতা আবৃত্তিতে সেরা ছাত্র হিসেবে এখানে বহু পুরস্কার ও পদকও পেলেন। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় বৃত্তিলাভ করে ভর্তি হলেন কিংস কলেজে। দু’ বছর পর এলেন কেমব্রিজে। ‘ট্রাইপস’ পরীক্ষায় প্রথম হলেন। 
বিলেতে থাকলেও দেশের খবর তিনি পেতেন বাবার পাঠানো দেশীয় খবরের কাগজ আর চিঠিপত্র থেকে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভারতে কীভাবে ইংরেজদের হাতে দেশের মানুষ অপমানিত হচ্ছে! ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে জেগে উঠল ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব। কেমব্রিজে পড়ার সময় ভারতীয় ছাত্রদের সমিতি ‘ভারতীয় মজলীশ’-এর সম্পাদক হলেন। সেখানে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ভাষণ দিতেন তিনি।
কৃষ্ণধন চিঠি লিখে ছেলেকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসতে বললেন। পাশ করলেই প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হাতের মুঠোয়! অরবিন্দ পিতৃআজ্ঞা মেনে পরীক্ষায় বসলেন ঠিকই, কিন্তু ঘোড়ায় চড়ার পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত থাকলেন। ফলে আইসিএস সার্টিফিকেট আর তাঁর পাওয়া হল না! তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি স্বেচ্ছায় আইসিএস হওয়ার প্রলোভনকে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন!
আশাভঙ্গ কৃষ্ণধন ঘোষ বিলেতে অরবিন্দের খরচপত্র পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। ঠিক সেইসময় বরোদার তরুণ মহারাজা পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন বিলেতে। তাঁর সঙ্গে হঠাৎ পরিচয় ঘটল অরবিন্দের। উচ্চশিক্ষিত, ইউরোপের পাঁচ- ছ’টি ভাষাজ্ঞ নম্র যুবকটিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বন্ধু ও ব্যক্তিগত সচিবরূপে গ্রহণ করলেন মহারাজা। দেশে ফিরে বরোদা কলেজের ইংরেজির অধ্যাপকও নিযুক্ত করলেন অরবিন্দকে। মাত্র তেইশ বছর বয়সে অরবিন্দ সেই কলেজেরই ভাইস প্রিন্সিপাল হলেন।
ভারতবর্ষে এসে তিনি শিখলেন ছ’ টি ভারতীয় ভাষা। পড়লেন ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র ও স্বামী বিবেকানন্দের লেখা। মহারাষ্ট্রের গুপ্ত বিপ্লবী দলের নেতা ঠাকুর সাহেবের কাছে বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষিত হলেন। ‘হিন্দু প্রকাশ’ সংবাদপত্রে দেশাত্মবোধক প্রবন্ধ লিখতে শুরু করলেন। বরোদায় থাকাকালীন প্রকাশ হল তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন ‘দ্য ঋষি’। তিনি তাঁর ছোটভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষা দিয়ে গুপ্ত সংগঠন গড়তে পাঠালেন বাংলায়।
১৯০৩ সালে বাঘাযতীনকেও বিপ্লবের কাজে অনুপ্রাণিত করে, তাঁর সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিলেন বরোদার সেনা বিভাগে এবং তাঁকে বিপ্লবী দলগুলিকে সংগঠিত করার কাজে পাঠালেন। ‘আপস নয়’ নামে একটি বই লিখে বিপ্লবী দলের সদস্যদের ভেতর গোপনে প্রচার করলেন অরবিন্দ।
১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে শুরু হল স্বদেশি আন্দোলন, তখন তেরো বছরের চাকরি ছেড়ে বরোদা থেকে কলকাতায় চলে এলেন তিনি। ১৯০৬ সালে কলকাতায় নবপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় বিদ্যালয়ের ন্যাশনাল কলেজের (বর্তমান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হলেন। সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেন ইংরেজি দৈনিক ‘বন্দেমাতরম’-এর। নেতৃত্ব দিতে শুরু করলেন ‘অনুশীলন সমিতি’র মতো গুপ্ত সংগঠনের। সংস্পর্শে এলেন ভগিনী নিবেদিতা ও লোকমান্য তিলকের।
১৯০৮ সালে আলিপুর বোমা মামলায় অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে অরবিন্দও গ্রেফতার হলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মামলা লড়ে তাঁকে মুক্ত করলেন এক বছর পর। জেলে থাকাকালীনই তাঁর মনের পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। মুক্তি পেয়ে প্রথমে ফরাসি অধিকৃত চন্দননগর, পরে পণ্ডিচেরী চলে গেলেন তিনি। সেখানে মাদাম পল রিশা ওরফে ‘শ্রীমা’ এবং তিনি আশ্রম গঠন করে যোগসাধনা ও সমাজসেবায় ব্রতী হলেন।
তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই ‘দ্য লাইভ ডিভাইন’, ‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘দ্য রেনেসাঁ ইন ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি।
১৯৫০ সালের ৫ ডিসেম্বর পণ্ডিচেরীতেই ঘটল এই মহাযোগীর মহাপ্রয়াণ।
তথ্য ও ছবি : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

 

15th     August,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ