বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
হ য ব র ল
 

জাদুঘরের জাদু

জাদুঘরে ঢুকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। আমরা ইতিহাস বইতে যা কিছু পড়েছি, মনে হয় সেগুলোই জীবন্ত হয়ে উঠেছে চোখের সামনে। এ এক অদ্ভুত জাদু! লিখেছে তোমাদের বন্ধুরা।

আবার যাব জাদুঘরে
২০১৬ তে কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘর দেখতে গিয়েছিলাম বাবা-মায়ের সঙ্গে। প্রথমেই গেলাম প্রাণীদেহের অস্থি, কঙ্কাল, জীবাশ্ম, স্টাফড প্রাণীর সংগ্রহে সাজানো গ্যালারিতে। দেখলাম তিমির চোয়াল, অতিকায় কচ্ছপের জীবাশ্ম, কুমির ও ম্যামথের কঙ্কাল। এক পলকে দেখে মনে হচ্ছিল, বিশালকায় সেই সমস্ত কঙ্কাল আত্মশ্লাঘায় পরিপূর্ণ হয়ে যেন সকলকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে কোনও না কোনও পুরা যুগের চিহ্ন বহন করে। এরপর অনুবর্ত্তী হলাম ‘ভারহুত’ গ্যালারির। মধ্যপ্রদেশের সাতনার একটি গ্রাম হল ভারহুত। এখানে প্রদর্শিত বেড়া বা রেলিংয়ের ওপর খোদাই করা নকশা ভগবান বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয়। সুলতানি, মুঘল যুগে রাজাদের শাসনকার্যে ব্যবহৃত মুদ্রার সম্ভার দেখতে গেলাম কয়েন গ্যালারিতে। এতদিন যা ইতিহাস বইয়ের শুধুমাত্র একটি চিত্র ছিল, তা আজ প্রথমবার আমার চোখের সামনে জ্বলন্ত। গেলাম ডেকরেটিভ আর্ট গ্যালারিতে। সেখানে ছিল মনোমুগ্ধকর হাতির দাঁতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস, বর্মাশিল্পীদের বিখ্যাত কাঠের কাজ। সব মিলিয়ে এক অপরূপ শিল্পসম্ভার। এছাড়া জুলজি গ্যলারিতে দেখলাম বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ, মাছ, পাখির মডেল। গেলাম জাদুঘরের সবচেয়ে আলোচ্য মিশর গ্যালারিতে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো মমি বাতানুকূল ঘরে একটি কাচের বাক্সে রাখা আছে। মনে যেন এক অব্যক্ত ভয় নিয়েই চাক্ষুষ করলাম শায়িত মমিটি। শুনলাম প্রতি সপ্তাহে কাচের বাক্সের ভিতর রাখা সিলিকা জেল বদলে দিতে হয়। ঘরটির জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য এই ঘরে হাইড্রোমিটার আছে। গাইড কাকু বললেন, মমিতে সুতো, মোম ইত্যাদি থাকে বলে নির্দিষ্ট তাপ ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে হয়। প্রশ্ন জাগে পিরামিডের ভিতরে কী হতো। এরকম আরও অনেক প্রশ্ন সেদিন মনে ভেসে উঠেছিল। সেই কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য আবার যাব জাদুঘরে। বারবার যেতে হবে।
প্রাঞ্জল গঙ্গোপাধ্যায়, অষ্টম শ্রেণি
বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় (উ. মা.)

কত অজানার মাঝে একদিন
লক্ষ লক্ষ বছর আগের ইতিহাসকে জানতে হলে আমাদের জাদুঘরে যেতে হয়। সেখানে বইয়ের পাতা থেকে ইতিহাস দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। আমিও ভারতীয় জাদুঘরে গিয়েছি। ভারতীয় জাদুঘর একটি সাংস্কৃতিক ও বিজ্ঞান জাদুঘর। এর ছয়টি ভাগ আছে— শিল্পকলা, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণীতত্ত্ব ও গাছপালা। যাবার আগে অবশ্য বাবার কাছ থেকেই জাদুঘর বিষয়ে নানা কথা জেনে নিয়েছিলাম। ১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’ এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে। জাদুঘরের মূল আকর্ষণটি হল প্রাচীন মিশরীয় সংগ্রহের একটি মমি রয়েছে। আমাদের দেশ বহু ভাষা ও সংস্কৃতির। তার নমুনা হিসেবে আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় শিলালিপি, মুদ্রা ও সিলমোহর কয়েকটি গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পকলা শাখাটিতে ভারতীয় চিত্রকলা, বস্ত্রশিল্প ও অলংকরণ সামগ্রী রয়েছে। প্রাণীবিদ্যার গ্যালারিগুলিতে কীটপতঙ্গ, মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃত নমুনার মডেল রাখা আছে। প্রাকৃতিক ইতিহাসের ধারণা পেতে এই গ্যালারি খুব কার্যকর। অর্থকরী উদ্ভিদবিভাগে তৈলবীজ, গাছের নানা রঞ্জক পদার্থ, রজন, ভেষজ উদ্ভিদের সংগ্রহ রয়েছে। ভূতত্ত্ববিভাগে রয়েছে শিবালিক জীবাশ্ম, ভূপৃষ্ঠের গঠন, উল্কাপিণ্ড, প্রস্তর ও খনিজ, মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী বিভিন্ন প্রাণীর ফসিল। পাশাপাশি ডাইনোসর ও ম্যামথের কঙ্কাল আছে। জাদুঘরের ওই সুবিশাল তথ্যভাণ্ডার দেখে সেখান থেকে আমার যেতেই ইচ্ছে করছিল না। পৃথিবীর ইতিহাসের বহু অজানার মাঝে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। 
প্রার্থিতা দত্ত, সপ্তম শ্রেণি
শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়

জাদুঘরের অভিজ্ঞতা ভোলার নয়
গতবছর লকডাউনের কিছু আগে আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতার জাদুঘরে গিয়েছিলাম। পড়ার বইতে বিজ্ঞান শিল্প ইতিহাস এবং লোকশিল্পের অনেক কথা আমরা পড়ি। শুধু পড়ে যা শেখা যায় না, তাকেই আমরা চোখে দেখে, কানে শুনে অভিজ্ঞতার অংশ করে তুলি। সেকারণে নানা জায়গায় যাই। দেখি। সেখানেই জাদুঘরের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মনে আছে, একটি ঘরে ছিল স্তন্যপায়ী প্রাণীর নমুনা। এই সমস্ত প্রদর্শনী পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তন ধারার ওপর আলোকপাত করে। এই ঘরের পাশে ছিল পাখির ঘর। অন্য একটি ঘরে বিভিন্ন সরীসৃপের নমুনা রাখা হয়েছিল। 
এরপরে আমরা আর একটি সুবিশাল ঘরে গিয়েছিলাম যেখানে পাথরের অনেক সুন্দর নমুনা রাখা ছিল। বিভিন্ন ধাতব আকরিকগুলি দেখে মনে হচ্ছিল এর থেকে মানুষ কত না পরিশ্রমে ধাতু বের করে নানা উপকরণ তৈরি করেছে। এরকমভাবেই এক একটি ধাতুর যুগ এসেছে পৃথিবীতে। মানুষের ব্যবহারের নানা জিনিস যেমন, মাটির তৈরি মূর্তি, সাজের চুড়ি, গহনা ও অন্যান্য ধাতব সরঞ্জাম ছিল। এখনও এই ধরনের উপকরণ আমরা ব্যবহার করি। এই বিষয়গুলি অতীত সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনযাত্রার ওপর অন্তর্দৃষ্টি দেয়। বিশ্বজুড়ে সংগ্রহ করা হস্তশিল্পের অনেক নমুনা এই সংগ্রহশালায় আছে যা এখনও পৃথিবীর নানা দেশে প্রদর্শন করা হয়। এটি আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় ও বিদেশে হস্তশিল্পের বিকাশের গল্পও বলে দেয়। আমি জাদুঘরের সবটাই ঘুরে দেখেছি। আমাদের দেশের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতি জানতে এখানে সকলের আসা দরকার বলে আমার মনে হয়।
সৌহার্দ্য জানা, নবম শ্রেণি
হাওড়া জেলা স্কুল

একটি স্মরণীয় দিন
২০১৭ সালের এক রবিবারের সকালে ঠিক হল যে আমরা প্রাচীন ভারতীয় জাদুঘরে যাব। শিহরনে আনন্দে আমার মন নেচে উঠল। কারণ এর আগে আমি কোনওদিন জাদুঘরে যাইনি। যথারীতি দুপুরের মধ্যে পৌঁছে গেলাম। ভারতীয় জাদুঘরের বহিরাংশ সৌন্দর্য দেখে আমার মনে হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি লাইন— ‘হে নূতন দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ’। কারণ আমার কাছে সেটা ছিল শ্রেষ্ঠ সুন্দর। ভেতরে ঢুকে লম্বা বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এবং প্রাচীন নিদর্শনগুলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল আমি সেই যুগে চলে গিয়েছি। সবথেকে ভালো লেগেছিল প্রাচীনকালের জন্তুদের কঙ্কালের সেই গ্যালারিটি। বিশাল তিমি মাছের কঙ্কাল থেকে শুরু করে কচ্ছপের কঙ্কাল প্রাচীনকালের হাতির কঙ্কাল ও ডাইনোসরের কঙ্কাল ইত্যাদি আমাকে এক অন্য জগতে পৌঁছে দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের হারিয়ে যাওয়া জগতে যেন আমি পৌঁছে গিয়েছি। আমাকে সবথেকে আকৃষ্ট করেছিল প্রাচীন মিশরীয়দের মমি, যা দেখে মনে হচ্ছিল শিহরন জাগানো ‘মিশর রহস্য’ সিনেমাটির কথা এবং ইতিহাসে পড়া প্রাচীন মিশরীয়দের কথা।
সীমিত সময়ের মধ্যে মিউজিয়াম পুরো ঘোরা সম্ভব হয়নি, অতৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম সেদিন। আবার পরে গিয়ে পুরোটা ঘোরার ইচ্ছা আছে। কিন্তু যতটুকু দেখেছিলাম তার স্মৃতি আজও অমলিন।
নয়নিকা চট্টোপাধ্যায়, সপ্তম শ্রেণি
বেথুন কলেজিয়েট স্কুল

জাদুঘরে কিছুক্ষণ
যে কোনও জাদুঘরে সময় কাটানো সবসময়ই রোমাঞ্চকর। আর তা যদি হয় ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ জাদুঘর হয় তাহলে তো কথাই নেই। জাদুঘরে ঢুকলেই আমাদের স্বাগত জানায় এক স্কন্ধ-কাটা মূর্তি। অনেকে মনে করেন এটাই সম্ভবত সম্রাট কনিষ্কর একমাত্র অবশিষ্ট মূর্তি। যদিও একদিনে সব বিভাগ ঘুরে দেখা সম্ভব না। ঢুকেই বাঁ-দিকের প্রথম ঘরটায় বৃহৎকায় ম্যামথের ও বিভিন্ন রহস্যময় প্রাগৈতিহাসিক দানবদের অবশিষ্ট কঙ্কাল দেখতে ভুলিনি। দেখলেই যেন গা শিরশির করে ওঠে। এরপর গুটি গুটি পায়ে সেই প্রকাণ্ড তিমি মাছের চোয়ালকে পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম মিশরের মমির দিকে। মিশরের ঘরটা অন্য ঘরগুলোর থেকে একটু আলাদা। এখানকার সৌন্দর্যায়ন হয়েছে এক আলো আঁধারের রহস্যময়তা দিয়ে। সেই ঘরে প্রদর্শিত আছে নানা মূর্তি যা পৌরাণিক মিশর সভ্যতা ও সমাজের শেষ কিছু নির্দেশক। আর মধ্যিখানে কাঁচের বাক্সে সুরক্ষিত মমি। অমূল্য সব অলঙ্কারে সজ্জিত মমি নিজেই যেন এক রাজকীয় সময়ের প্রতীক। কী যে এক অদ্ভুত দক্ষতার সঙ্গে প্রাচীন মিশরীয়রা মানুষের মৃত্যুর পরেও তাদের শরীরকে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল, তা আমাদের আজও বিস্মিত করে। তারপর শিল্পকলা বিভাগে প্রবেশ করতেই মনে হল যেন এক নতুন বিস্ময়-মাখানো শিল্পের দুনিয়ায় আমরা এসে পড়েছি। অবশেষে আমাদের ভ্রমণ শেষ হয়। বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম যে জাদুঘরে নাকি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর দেহ সংরক্ষিত আছে, কিন্তু সে নয় আরেকবারের জন্য তোলা থাক।  
বিনয়ন মিত্র, নবম শ্রেণি
ন্যাশনাল  গেমস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল

স্বপ্নের মতো
তখনও করোনা মানুষের শরীর বা মন কিছুই গ্রাস করেনি। দু’ বছর আগের কথা। এক আবেগমাখানো সকালে, মা-বাবার সঙ্গে বেরিয়ে কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘর, অর্থাৎ ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম দেখার স্বপ্ন পূরণ হল আমার।  সাদা রঙের তিনদিক ঘেরা ইমারতের এক অদ্ভুত সুন্দর স্থাপত্য। কত প্রাচীন জিনিসের দুর্লভ সংগ্রহ সেখানে। ফসিলস, মমি, মুঘল আমলের সুন্দর প্রাচীন চিত্র। মনে হচ্ছিল যেন সব ঘটনা আমার সামনেই ঘটছে। তাছাড়াও সেখানে ছিল নানান গ্যালারি। স্বদেশী-বিদেশি পাখি যেমন ইন্ডিয়ান রবিন, টেইলর বার্ড, গ্রেট হর্নবিল ইত্যাদি। কত রকমের জীব ও নানান শস্য চাষের অদ্ভুত বিবরণ। গ্যালারিগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল, প্রাণ খুঁজে পেলাম সবকিছুতে। বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল। তবে খালি মনে সেখান থেকে বিদায় নিইনি, দেশ-বিদেশের অজানা জ্ঞান ও মনের মধ্যে নতুনকে জানার অদ্ভুত কৌতূহল নিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে আবারও যাব বলে।
ঋদ্ধি মণ্ডল, নবম শ্রেণি
সেন্ট স্টিফেনস স্কুল, দমদম

অসাধারণ অভিজ্ঞতা
ভারতীয় জাদুঘর পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম জাদুঘর। তেরো বছর বয়সে প্রথম জাদুঘর দেখার অভিজ্ঞতা তোমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এক রবিবার দুপুরে সপরিবারে আমরা ঘুরতে যাই। তিনতলা বিস্তৃত জাদুঘরে রয়েছে পুরাতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক, শিল্পকলা, প্রাণীবিদ্যা ভিত্তিক বিভাগ। প্রবেশ করেই সর্পিল গতিতে এগিয়ে খোঁজ পেলাম একটা ম্যাপের। নীচের তলায় রয়েছে একটি বৃহৎ চতুর্ভুজাকার ক্ষেত্র, যার চারপাশের স্তম্ভগুলির গায়ের জটিল ভাস্কর্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল। দ্বিতীয় তলে দেখেছিলাম শুঙ্গ রাজবংশের ভাস্কর্য ও বুদ্ধমূর্তির সমাহার। মধ্যযুগের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে প্রবেশ করে সুপ্রাচীন ভারতীয় শিক্ষালয় সম্পর্কে জানলাম। ইজিপ্টিয়ান গ্যালারিতে ৪০০০ বছরের পুরাতন মমি কাঁচের বাক্সে সজ্জিত দেখেছিলাম। বিভিন্ন ধরনের প্রস্তরখণ্ড দেখে খুব ভালো লেগেছিল। জুওলজিক্যাল গ্যালারি দেখতে দেখতে আমি আক্ষরিক ভাবেই অবাক হয়ে যাই। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, প্রাণী, মস্ত তিমির ঝুলন্ত কঙ্কাল, হাতির দাঁত, বিভিন্ন প্রাণীর খুলি অনেকক্ষণ ধরে দেখেছিলাম। জাদুঘর ভ্রমণ ছিল আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন। বাইরের প্রবহমান দুনিয়া থেকে মুহূর্তের জন্য ইতিহাসের পাতায় পড়া জগতে ফিরে যাওয়ার জন্য জাদুঘর হল সেরা ঠিকানা। 
আশিয়া বেগম, দশম শ্রেণি
শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল

এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা
অজানাকে জানা ও অদেখাকে দেখার মাধ্যমে আমরা বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করি। তেমনই আমার প্রথম জাদুঘর দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আজও আমার স্মৃতিপটে অক্ষত হয়ে রয়েছে। প্রথমে ট্রেনে করে পৌঁছেছিলাম কলকাতায়। তারপর বাসে করেই নেমেছিলাম জাদুঘরের সামনে। সামনে থেকে প্রথম জাদুঘর দেখেই মনটা আনন্দে পুলকিত হয়। অবশেষে প্রবেশ করলাম জাদুঘরের অন্দরমহলে। বহুমুখী প্রতিষ্ঠানটির সুশৃঙ্খল কার্যক্রম দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। আমরা প্রথমে প্রবেশ করলাম প্রত্নতত্ব বিভাগে, যেখানে প্রাক ও আদি ঐতিহাসিক, মৌর্য, গুপ্ত, পাল প্রভৃতি বহু যুগের প্রাচীন নিদর্শন। যেমন বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা, পাণ্ডুলিপি, সিলমোহরগুলি অক্ষত ছিল। জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জীববিদ্যা ও ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ। জীববিদ্যা বিভাগে দেখেছিলাম বিভিন্ন বিলুপ্ত জীবজন্তুর কঙ্কাল, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংরক্ষিত দেহাবশেষ, মানব বিবর্তনের মূর্তি ও বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ সমূহ। অন্যদিকে ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছিল বিভিন্ন প্রাণীর জীবাশ্ম, উল্কাপিণ্ড, প্রস্তর ও খনিজ। এগুলি আমাকে প্রবলভাবে মুগ্ধ করেছিল। ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বৌদ্ধ মূর্তি, অশোক স্তম্ভ, মিশরীয় মমি। আমি প্রতিটি বিভাগ কৌতূহলী হয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। কিন্তু সবশেষে এল ফেরার পালা। মনটা বিষাদে ভরে উঠলেও, একরাশ আনন্দ ও এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে ফিরলাম বাড়িতে।
শুভেন্দু সাহা, দশম শ্রেণি
ব্যারাকপুর রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়

সব কিছু চোখের সামনে ভাসছে
অল্প বয়সে বাবা-মায়ের কাছে জাদুঘরের গল্প শুনে একটা অদ্ভুত কৌতুহল জেগেছিল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় জাদুঘরে প্রবেশ করে প্রথম দর্শনেই আবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। ছাপার অক্ষরে বা গল্প-কথায় যা পড়ে বা শুনে এসেছি তাকে চোখের নাগালে ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা হল। প্রাচীন অস্থি, কঙ্কাল, জীবাশ্মে সাজানো গ্যালারি দেখে এগিয়ে গেলাম উত্তরপ্রদেশ থেকে খনন করে আনা কাঠের রেলিংয়ের দিকে। এতে নকশা করে ভগবান বুদ্ধের জীবনের গল্প বলা আছে। বিভিন্ন সময়ের ব্যবহৃত মুদ্রা, সুসজ্জিত আর্ট গ্যালারিতে প্রাচীন শিল্পীদের তৈরি নানান হাতের কাজ দেখে মুগ্ধ হলাম। ইজিপ্ট গ্যালারিতে প্রাচীন মিশরের মমি, ফ্যারাওদের ছবি দেখে গেলাম জুওলজিক্যাল গ্যালারিতে মাছ, পাখি, সরীসৃপ এবং মিসিং লিঙ্কের মডেল দেখতে। টেক্সটাইল গ্যালারিতে ভারতে উৎপাদিত রেশম সম্পর্কে জানলাম। ম্যামাল ফসিল, মাস্ক গ্যালারিও খুব ভালো লেগেছিল। শিল্পী নন্দলাল বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে আঁকা বিখ্যাত কিছু ছবি দেখেছিলাম। এক জায়গায় এসে বাবা বললেন, রবি ঠাকুরের নিজের কন্ঠে গাওয়া গানের রেকর্ড দেখতে পাওয়া যাবে। শুধু দেখলাম না, শুনলামও। হঠাৎ মনে হল সেই বিশাল গ্যালারির মধ্যে একটা অসীম নিস্তব্ধতা, অনুভব করছিলাম প্রিয় কবিকে। 
দিগন্ত দাস, নবম শ্রেণি
হিন্দু স্কুল

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

20th     June,   2021
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ