বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
গল্পের পাতা
 

পিশাচ সাধু
 

জয়ন্ত দে : ক্যাপ্টেনকে এলাকা ছাড়ার কড়া নির্দেশ দিয়েছে পরম। এদিকে, বিষ খেয়ে হজম করে দেখিয়ে দেবে বার বার বলছে পিশাচসাধু। বঁড়শিকে পালিয়ে আসতে বলল সহজ। কিন্তু সে রাজি হল না। তারপর... প্রবল দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল সহজ। কিন্তু এলাকার কাছাকাছি আসতেই তার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ, একমাত্র ওষুধের দোকান আর দু-একটা খাবারের হোটেল খোলা। কিন্তু তারাও যেন হাফ ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে। ক’টা বাজে? কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখল সহজ। আটটা পঁচিশ! তার কেন এমন মনে হচ্ছে? একটু এগতেই দেখল, সব বন্ধ। তবে হ্যাঁ, গাড়ি চলছে। রাস্তার জায়গায় জায়গায় পুলিস। গলির মোড়ে মোড়ে জটলা। সহজ একটা জটলার সামনে বাইকটা দাঁড় করাল। একজনকে আলগোছে জিজ্ঞেস করল— কী হয়েছে দাদা?
কিছু হয়নি, এবার হবে। চলে যান।
তেএঁটে লোক! এরা সোজা কথার সোজা উত্তর দেয় না, অথচ অনেক বাড়তি কথা খরচ করে। সহজ চলে গেল না। সে লোকটার সামনে বাইকে বসে পকেট থেকে ফোন বের করল। কাউকে ফোন করে জেনে নেবে। কিন্তু ফোন খুলেই সে অবাক। ২৯টা মিসড কল। ক্যাপ্টেনের বাড়িতে বর্ণিনীর দ্বিতীয় ফোনটা আসার পর সে মোবাইলটিকে সাইলেন্ট মুডে করে দিয়েছিল। অনেক অচেনা নম্বরের সঙ্গে চেনা নম্বরও অনেক। বর্ণিনী, মিমি, ভানুদা, শঙ্করদা... সমর, অজিত। মিমির খান তিনেক কল। কী এমন হল? সে প্রথম মিমিকে ফোন করল। 
‘তুই কোথায়? ফোন ধরছিস না কেন? এখুনি বাড়ি আয়, মা খুব চিন্তা করছে—।’ মিমি ভয়ার্ত গলায় বলে উঠল। ফোন কেটে দিল। সহজ জিজ্ঞাসা করতে পারল না— কী হয়েছে?
বেরিয়ে বর্ণিনীকে ফোন করার কথা ছিল। ওকেই ফোন করা যাক। 
বনির খুব চাপা গলা। ‘তুই কোথায়?’
‘বনি কী হয়েছে রে?’
‘কী হয়েছে মানে, তুই কিছু জানিস না!’
‘অনেকে ফোন করেছিল, ২৯টা মিসড কল। তোর সঙ্গে কথা বলার পর আমি ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রেখেছিলাম। সত্যি কিছু জানি না।’
‘এখন তুই কোথায় আছিস?’
‘রাস্তায়, একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে।’
‘শোন, সাতটা নাগাদ পরমেশ্বরদাকে ওর অফিসের নীচে গুলি করা হয়েছে।’
‘অ্যাক!’ সহজের গলা ফুঁড়ে আওয়াজটা বেরিয়ে এল। ‘পরমেশ্বরদার কী অবস্থা?’
‘দুটো গুলিই ওর ডানদিকের পাঁজরায় ঢুকেছে। অবস্থা ভালো নয়, ওকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে। তুই হসপিটালে যাবি না। চারদিকে খুব উত্তেজনা। আর ওখানে তোর যাওয়া ঠিক হবে না।’
‘মানে? আমার তো হাসপাতালে যাওয়া উচিত।’
‘আমি বাবার কাছ থেকে যা শুনেছি, দু’জন ছিল। একজন বাইক চালাচ্ছিল, পিছনের জন গুলি করে। যে বাইক চালাচ্ছিল, মনে করা হচ্ছে, সে পদ্মনাভ। ওর পিছনেই বাইরের লোক ছিল। আর গুলি চলার কিছুক্ষণ আগে সুজি নাকি বাইক নিয়ে ওই জায়গায় এসেছিল। শোন, পরমেশ্বরদার যদি কিছু হয়ে যায়, তুইও একটু সমস্যায় পড়বি।’
‘আমি! আমি কেন?’
‘পদ্মনাভর সঙ্গে মিমির রিলেশন আছে, এটা সবাই জানে।’
‘পদ্মনাভর সঙ্গে মিমির কোনও রিলেশনই নেই।’
‘সেটা আমরা জানি, কিন্তু বাইরের সবাই জানে না। তুই ঠান্ডা মাথায় একটা কথা বলতো— যে গুলি খেয়েছে সে তোর বন্ধু, আর যে গুলি চালিয়েছে সে তোর বিশেষ পরিচিত। মাঝে কিন্তু তুই। তাই তোকে বলছি, মাথা ঠান্ডা করে বাড়ি চলে যা। আমি কি তোর বাড়িতে যাব?’
‘না, দরকার নেই।’
সহজ বাইকে বসল, ভাবল বাড়ি যাবে। কিন্তু মন টানছে হাসপাতালের দিকে। সে কিছুটা এসে আবার বাইক থামাল। ফোন করতে হবে। এবার শঙ্কর—।
‘তুমি কি হাসপাতালে শঙ্করদা?’
‘হ্যাঁ রে হাসপাতালে আছি?’
‘কেমন আছে?’
‘ঠিক আছে, অপারেশন করে দুটো গুলিই বের করে দিয়েছে। কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে।’
‘আমি হাসপাতালে যাচ্ছি শঙ্করদা।’
‘আমি তোকে অনেক ফোন করেছি—তুই কোথায় গিয়েছিলি—ক্যাপ্টেনের বাড়ি?’
‘হ্যাঁ, তোমাকে কে বলল?’
‘এলাকায় এসে পরমই আমাকে ফোন করে বলল— ও নচেকে নিয়ে খুব আপসেট। ক্যাপ্টেনের জন্যই সুজি-নচে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাই ও তোকে ক্যাপ্টেনের কাছে পাঠিয়েছে। ক্যাপ্টেনকে ও মারতে চায় না, এলাকা থেকে দূরে চলে যেতে বলেছে।’
‘হ্যাঁ, আমি ক্যাপ্টেনকে বলেছি।’
‘ক্যাপ্টেন কী বলল?’
‘আমাকে গাল মন্দ করলেন, পরমেশ্বরের কুকুর-টুকুর বললেন। বিষ খাবার হুমকি দিচ্ছিলেন। উনি নাকি বিষ খেয়ে হজম করে নেবেন!’  
শঙ্কর হাসল, ‘আমি জানতাম, তুই গালাগালি খাবি। আমি শুনে পরমকে বলেছি— তুই স্যাকরার হাতুড়িকে পাঠিয়েছিস কামারশালায়—। ক্যাপ্টেনকে চমকানোর জন্য অন্য ছেলে আছে। ঠিক আছে, পরম যখন বলেছে, ক্যাপ্টেনকে এলাকা ছাড়া করে দেব।’
সহজ কাতর গলায় বলল, ‘শঙ্করদা আমি হাসপাতালে যাচ্ছি— তুমি আছ তো?’
‘তুই হাসপাতালে আসিস না, এরা সব খেপে আছে। ওরা আজই সুজির বাড়ি ভাঙচুর করবে বলছিল। এমনকী, পদ্মনাভদের ফ্ল্যাটেও হামলা চালাত। আমি ঠেকিয়ে রেখেছি। এখন হঠাৎ তোকে চোখের সামনে দেখলে খেপে যেতে পারে।’
‘কী বলছ, আমাকে কেন?’ সহজ ঠান্ডা গলায় বলল।
‘পরম আজ বিকেলেই তোর সঙ্গে হাসপাতালে ছিল। তুই আগে বেরিয়ে এসেছিস। তারপর ও এলাকায় ঢুকেছে। তারপরই গুলি চলল। আর গুলি করল তোর বোনের বয়ফ্রেন্ড— বিষয়টা কেমন একটা খটকা থেকে গেল না! পরম সুস্থ হয়ে উঠুক। তারপর তুই ঠেকের দিকে যাস। তার আগে যাস না।’
সহজের মনে হল তার কানে কেউ গরম সিসা ঢেলে দিল।
শঙ্কর কাশল। বলল, ‘তুই আবার এটা নিয়ে টেনশন করিস না। পাঁচরকম ছেলেকে নিয়ে আমাকে চলতে হয়। ও আমি সামলে নেব। একটু ঠান্ডা হতে দে। এই শোন, তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি— সত্যি কথা বলবি। কী রে বলব?’
‘বলো।’
‘ক্যাপ্টেনের ছুকরিটা খুব খেলুড়ে। শুনছি তুই ওটাকে তুলেছিস। সে তোল। আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু মালটার বড় দেমাক! আমি যতবার গিয়েছি, আমাকে যা তা অপমান করেছে। ওর গুমোর আমি ভাঙব। ওকে একদিন জোকার রিসর্টে নিয়ে আসতে পারবি। তোর সঙ্গে তো প্রেম চলছে, তুই ওকে ম্যানেজ করে নিয়ে আয়। ওর সঙ্গে আগে বোঝাপড়া করব। তারপর ক্যাপ্টেনকে দেখব। পরম যখন হুকুম দিয়েছে। আমি সেটা পালন করব।’
সহজ ফোন কেটে দিল।
ধীর গতিতে সহজ বাড়ি ফিরল। ভালো করে স্নান করল। মায়ের ঘরে গেল। কস্তুরী বলল, ‘চিন্তা করিস না, কিছু হবে না, ঠিক হয়ে যাবে।’
সহজ বলল, ‘নচে ভালো আছে মা।’
কস্তুরী অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘তোর ওই দাদাও ভালো হয়ে যাবে।’
সহজ ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। বারান্দায় চোখ বন্ধ করে বসে মিমি। ওর চোখে জলের দাগ। এর মধ্যে বর্ণিনী ফোন করল, ‘আমার খুব ভয় করছে।’
‘আমার কিছু হবে না। চিন্তা করিস না।’
‘তোর জন্য নয়, বঁড়শি জন্য। ওকে আমি ফোন করব? ওই লোকটা একটা ভয়ঙ্কর খুনি। বঁড়শির বিপদ হতে পারে। ওকে ইমিডিয়েট রেসকিউ করা দরকার।’
সহজ চুপ করে থাকল। জীবনে কোনওদিন সে এত সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেনি।
বর্ণিনী বলল, ‘ওই লোকটা যদি একবার বুঝে ফেলে ওর সব কথা আমরা জেনে গিয়েছি— ও নির্ঘাত বঁড়শিকে মেরে পালিয়ে যাবে। ওকে ধরা তখন খুবই দুঃসাধ্য হবে। সারা ভারতে অজস্র আশ্রম, ধর্মীয় স্থান। একবার গা ঢাকা দিলে পুলিসের সাধ্য নেই ওকে ধরা। দেখ, লোকটা শাস্তি পাবে কি না, সেটা নিয়ে আমি ভাবছি না। আমি মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছি। ওকে বাঁচাতেই হবে। আমি ফোন করছি ওকে। প্রয়োজন হলে আমি বাবার সাহায্য নিয়ে ওকে তুলে নিয়ে আসব।’
‘ও কি আসবে?’
‘আমাকে চেষ্টা করতেই হবে।’
সহজ খেল না। মিমিও খায়নি। দোতলায় আজ ভাই-বোন দুটি ভিন্ন কারণে যেন বিনিদ্র রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্য সময় হলে একে অপরকে সান্ত্বনা দিত। কিন্তু আজ দু’জনেই যেন বেসামাল। মিমির মাথায় বার বার ঘুরে ফিরে আসছে, পদ্মনাভকে ওরা ছাড়বে না। আজ না হোক কাল মারবেই। আজ হয়তো পদ্মনাভর সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। কিন্তু অনেক অনেক সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছিল দু’জনে। পদ্মনাভর এমন লোভী হয়ে ওঠার পিছনে তার ইন্ধনও কম নেই। লোভী পদ্মনাভর সঙ্গে সেও লোভ করেছে। সমান তালে সুর মিলিয়েছে। এই লোভের চক্করে আজ যখন দিকশূন্য হয়ে পদ্মনাভ ঘুরছে, তখন তার হাত ছেড়ে দিয়েছে মিমি।
আর সহজ নিজেকে নিয়ে ভাবে না। তার সব আকাশপাতাল ভাবনা এখন বঁড়শিকে নিয়ে। বঁড়শিকে শুধু ক্যাপ্টেনের হাত থেকে নয়, শঙ্করের হাত থেকেও রক্ষা করতে হবে।
এগারোটা নাগাদ ফোন করল শঙ্কর, ‘কী রে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়েছিস? আমরা একটু আগে হাসপাতাল থেকে ফিরলাম। ওর জ্ঞান এসেছে। আপাতত বিপদ নেই। কিন্তু ও ভুগবে। ডানদিকের পাঁজরটা পুরো ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। তুই আমার কথা মনে রেখেছিস তো। কাল সকালেই ওর বাড়ি যাবি। যদি রাজি হয় কাল দুপুরে বাইকে বসিয়ে— জায়গা আমি বলে দেব। ও খেলুড়ে মেয়ে! ওকে আমি ভাঙব না, মুচড়ে দেব।’
সহজ খুব আস্তে আস্তে বলল, ‘তুমি মদ খেয়ে লাট হয়ে আছ শঙ্করদা। ঘুমিয়ে পড়ো। এসব কথা তোমার রোবট-কালী জানতে পারলে ধরে পেটাবে!’
শঙ্কর খিস্তি দিতে যাচ্ছিল, তার আগেই সহজ ফোনটা এরোপ্লেন মুডে করে দিল। মাথার ভেতর দপ দপ করছে! নিজেকে শান্ত করতে হবে। নীচে বাবার চটির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সহজ নীচে গেল। 
সম্বুদ্ধ মিত্র বললেন, ‘শোনো, তোমার ঠাকুরদার সব খাতা আমার হেফাজতে। আমার মনে হল তোমার আলমারিটাও সেফ নয়। তোমার ঠাকুরমার হাত অনেক লম্বা। আমি সব খাতা আমার অফিসে নিয়ে গিয়েছি। আর সাদা খাতায় ভরে দিয়েছি বাবার ট্রাঙ্ক।’
‘খাতাগুলো কি তুমি দেখেছ?’
‘দেখেছি মানে, চোখ রাখলেই হারিয়ে যাচ্ছি। পুরাণ রামায়ণ মহাভারতের চরিত্র ধরে ধরে বিশ্লেষণ!’ সম্বুদ্ধ মিত্র চাপা গলায় বললেন, ‘তা ওঁকে নিয়ে যাওয়ার কী হল, আর তো কোনও বাধা নেই! এবার ব্যবস্থা করে ফেলো। যদি টাকার দরকার পড়ে আমাকে বলো—।’
সহজ ঘাড় নাড়ল, বলল, ‘সময় হয়ে গিয়েছে, যে কোনওদিন ভোরে বেরিয়ে যাব।’
‘বাবাকে বলে রেখেছি আমি, উনি কিন্তু প্রস্তুত। তুমি ডাকলেই উনি বেরিয়ে যাবেন।’
হঠাৎ সহজের মনে হল সিঁড়ির ওপর মিমি দাঁড়িয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। মিমি এক পা নেমে এসে খুব নিচু স্বরে বলল, ‘দাভাই একটু শুনবি।’
সহজ এগিয়ে গেল। সিঁড়ির ওপর উঠতেই মিমি বলল, ‘আমাকে বনি একটা এসএমএস করেছে, তোর সঙ্গে ওর খুব দরকার। তোকে ফোনে পাচ্ছে না।’
সহজ ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। মিমি বলল, ‘দাভাই আর কিছু কী হয়েছে?’
সহজ জানে না আর কী হতে পারে? আর কীসের আশঙ্কা করছে মিমি? সহজ বলল, ‘জানি না।’
মিমি বলল, ‘দাভাই আমার সঙ্গে পদ্মনাভর কোনও সম্পর্ক নেই। আমি ওর সঙ্গে সব সম্পর্কই ছিন্ন করেছি। সবকিছু মিলিয়েই ও খুব ফ্রাসট্রেটেড। ও আগেই বাজে চক্করে পড়েছে। ক’দিন ধরেই খবর পাচ্ছিলাম ও দিন-রাত মদ খাচ্ছিল। আমি শুনেও কোনও যোগাযোগ করিনি। করবও না। ওকে নিজেকে নিজেই সামলাতে হবে। কিন্তু দাভাই, আমি জানি না এখন ওর কী হবে? বাড়িতে ফিরলেই নির্ঘাত মরবে। ওদিকে পুলিসও ওর পিছনে—।’ মিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর ঘরের দিকে চলে গেল।
সহজ ঘরে এসে ফোন করল বর্ণিনীকে।
খুব বিরক্তির স্বরে বর্ণিনী বলল, ‘তুই যে কী করিস! যখনই তোকে আমার দরকার পড়ে তখনই তোকে পাই না।’
সহজ বলল ‘তোর নিজের দরকারে তো আমাকে তোর দরকার পড়ে না। কার কী হয়েছে?’
‘আমি বঁড়শিকে নিয়ে এসেছি। আমি আগে বঁড়শিকে ফোন করেছিলাম। তখন ও আসতে চায়নি। পরে ও নিজেই ফোন করেছিল। বাবা আমার সঙ্গে ফোর্স দিয়েছে, ওখানেও পুলিস পোস্টিং আছে। নে তুই বঁড়শির সঙ্গে কথা বল, সব জানতে পারবি।’
সহজ শুনতে পেল, ফোনের হাত বদল হচ্ছে। ‘নাও তুমি কথা বলো।’
সহজ বলল, ‘হ্যালো, বঁড়শি আমি সহজ, বলো।’
ওপারে অপার নীরবতা। তারপর মৃদু গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। ‘আমি শঙ্খিনী বলছি, আমি আর বঁড়শি নই। আপনাদের ক্যাপ্টেন, ওই পিশাচ সাধু মারা গিয়েছেন।’
‘কী!’ অস্ফুটে বলে উঠল সহজ।
‘হ্যাঁ, পাপ মিটিছে! আপনি চলে আসার পর আমাকে শাসিয়ে যাচ্ছিল, ওই ঘরে ওঁর অবর্তমানে কে এসেছিল? কারা এসেছিল? কী হয়েছে? ওঁর জিনিস কে চুরি করেছে? সব ওঁকে বলতে হবে। আমি একটা কথাই বলে গিয়েছি, কী জিনিস চুরি গিয়েছে? সে কথার উত্তর উনি দেননি। শুধু হুমকি দিচ্ছিলেন। বার বার বলছিলেন— যারা এসেছিল তারা ওকে বিষ দেবে। ওকে বিষ খাইয়ে মারবে। কিন্তু বিষে ওঁর কিছু হবে না। উনি আমাকে দেখাতে চাইছিলেন— উনি বিষ খেয়ে বিষ হজম করতে পারেন। আমি ওঁকে বললাম, যদি বিষ খেয়ে মরে যান, আমার তো জেল হবে। উনি খস খস করে একটা কাগজে লিখে দিলেন— উনি স্বেচ্ছায় বিষ খাচ্ছেন। তারপর বিষ খেলেন। কিন্তু হজম করতে পারলেন না, বমি করে, শ্বাস টানতে টানতে, ছটফট করতে করতে মারা গেলেন।’
সহজ শান্ত গলায় বলল, ‘তুমি ওকে আটকাতে পারলে না?’
‘না, আমি তো আটকাব না। তাই সে চেষ্টা করিনি। আমি মনে প্রাণে চাইছিলাম উনি বিষ খেয়ে মরুক। আমি দেখতে চেয়েছিলাম— আমার বাবা কীভাবে মরেছে। ওই সাতজন কীভাবে মরেছে।’
সহজ চুপ। বঁড়শির হাত থেকে ফোন নিল বর্ণিনী। বলল, ‘সহজ ভোরে আমরা রওনা দেব। তুই তোর ঠাকুরদাকে নিয়ে রেডি থাকবি। আপাতত তোর ঠাকুরদার সঙ্গে ওই আশ্রমেই শঙ্খিনী যেতে চাইছে। আমরা চারটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে তোর বাড়ির সামনে আসছি।’
সহজ নীচে এল বাবাকে বলল। রাত পোহালেই যাত্রা। 
সম্বুদ্ধ মিত্র স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। সহজের দু’হাত ধরলেন, ধরা গলায় বললেন, ‘যাই বাবাকে বলে আসি— রাত পোহালেই যাত্রা!’                  (সমাপ্ত)

26th     September,   2021
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ