বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

পাহাড়  ঘেরা  ভুটানে

ঘন সবুজ পাহাড়গুলোর রং ক্রমশ ফিকে হতে হতে একসময় শ্বেতশুভ্র বরফচূড়ায় পরিণত হয়েছে। ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরিয়ে তোলে মুগ্ধতায়। ঘুরে এসে লিখলেন সমীর  কুমার  ঘোষ।

দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ে ঘেরা  অপরূপ দেশটি দেখব বলে শিয়ালদা স্টেশন থেকে রাতের কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস  ধরে শুরু হয় আমাদের যাত্রা। পরদিন দুপুর নাগাদ পৌঁছে যাই হাসিমারা। সেখান থেকে  ট্রেকারে মাত্র আধ ঘণ্টায়  ভারতের সীমান্ত শহর জয়গাঁ। এখান থেকে হাঁটা পথেই পড়ে ‘গেটওয়ে অব ভুটান’, ফুন্টশোলিং। পাহাড়ের পাদদেশে ছিমছাম ঝাঁ চকচকে এক মনোরম  শহর। প্রবেশমুখেই রয়েছে একটি সুদৃশ্য  কারুকার্যমণ্ডিত তোরণ। তোরণ পেরিয়ে একটু এগলেই ডান হাতে ইমিগ্রেশন অফিস। ওখানে ভোটার কার্ডের প্রতিলিপি ও দু’টি ছবি জমা দিয়ে সংগ্রহ করে নিলাম থিম্পু ও পারো ভ্রমণের অনুমতি। 
পরদিন  সকালে  গাড়ি ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়ি ১৭২ কিমি দূরে অবস্থিত ‘পারো’-র পথে। শহর ছাড়িয়ে গাড়ি ক্রমশ উঠতে থাকে উপরের দিকে। পাঁচ কিলোমিটার যাওয়ার পরই জিপ এসে দাঁড়ায় ‘খারবন্দী’ পাহাড়ে।  ইমিগ্রেশন অফিস থেকে নেওয়া অনুমতিপত্র  নিকটবর্তী  চেকপোস্টে  দেখিয়ে  আবারও রওনা  দিই  পারোর দিকে।  পথের  দু’ধারের  অনুপম  সৌন্দর্য  ততক্ষণে  আমাদের মুগ্ধ করে ফেলেছে। চারপাশে ছেয়ে  থাকা  ঘন  শাল, সেগুন, মেহগনি  ও জারুল  গাছ পাতা নেড়ে অভ্যর্থনা  জানাচ্ছে। সর্পিল পাহাড়ি পথ বেয়ে ক্রমাগত এগচ্ছি আমরা।  কখনও  পথ ঢেকে  যাচ্ছে  সাদা কুয়াশার আস্তরণে, আবার  খানিক বাদেই ঝকঝকে নীল আকাশ সঙ্গী হচ্ছে পথের। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চলার পর পৌঁছে যাই থিম্পু চু ও পারো চু-এর মিলনস্থানে। তিব্বতি  ভাষায় ‘চু’ শব্দটির  অর্থ নদী। নদীর দুটোর মিলনস্থলের  পাশেই সুন্দর একটি  কনফ্লুয়েন্স  ব্রিজ। এখান থেকে মাত্র  ২৪ কিলোমিটার দূরে  অবস্থিত  ছবির মতো সাজানো  পারো  উপত্যকা। চলার  পথে  বহুক্ষণ আমাদের সঙ্গী হয় পারো চু। যখন হোটেলে  ঢুকি  সূর্যদেব তখন পশ্চিমে  হেলেছেন। পরদিন বেশ সকালেই বেরিয়ে পড়ি পারো উপত্যকা ভ্রমণে। প্রথমেই  যাই পারো মিউজিয়াম দর্শনে। পাহাড়ের  উপর ছোট্ট মিউজিয়াম। বেশ কিছু  প্রাচীন  অস্ত্র, বাসন, পুঁথি ও ছবি দিয়ে সাজানো রয়েছে। এরপর শহরের  মধ্যমণি  ‘রিমপুং জং’ দর্শন। জং অর্থাৎ দুর্গ। সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত  কাঠের সেতু পেরিয়ে বেশ  কিছুটা  ঢালু  পাহাড়ি  রাস্তা বেয়ে পৌঁছতে  হয় । উঁচু  পাহাড়ের উপর অনেকটা জায়গা নিয়ে  পাঁচতলা জং। ভিতরে রয়েছে তথাগত বুদ্ধ, গুরু পদ্মসম্ভব ও নওয়াং নামগিয়েলের  মূর্তি। এছাড়াও  রয়েছে  বৌদ্ধধর্মের  নানান  গ্রন্থ  ও পুঁথি। দেশশাসন, শত্রু  হানা প্রতিরোধ, শিক্ষা, ধর্ম চর্চা, সবকিছুরই কেন্দ্রবিন্দু  এই  জং। পরবর্তী গন্তব্য বিখ্যাত টাইগার’স নেস্ট। ড্রাইভার  জানান,  এটি উঁচু পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত বৌদ্ধ মঠ। পাহাড়ি  পথ  বেয়ে  যেতে  যেতে  চোখে পড়ে  কৃষিকেন্দ্রিক  ভুটানের  এ  এক অনন্য  রূপ।   টাইগার’স নেস্টে ট্রেক করে ওঠার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। তবে মঠের পাদদেশে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের মন্তব্য শুনে বুঝলাম পথের সৌন্দর্য অপার্থিব। পরদিন খুব সকালেই বেরিয়ে পড়ি চেলে-লা ও  হা উপত্যকার পথে। যেতে যেতে দেখি  পথের দু’ধারে ঘন সবুজ বনানী আর নানা রঙের রডোডেনড্রন ছড়িয়ে। যত উপরে উঠি, ঠান্ডা  ততই যেন জাঁকিয়ে ধরতে থাকে। দূরে তাকালে চোখে পড়ে দুধ সাদা বরফ শৃঙ্গ। এক ঘণ্টা চলার পর পৌঁছই চেলে-লা। প্রচণ্ড হাওয়া এখানে। চতুর্দিকে  বুদ্ধের  বাণী লিপিবদ্ধ। লা বা পাস-এর  মাথায়  উঠে তাকালে এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে  ভরে ওঠে মন। হা উপত্যকা হল মিলিটারি বেস। এখানকার বৌদ্ধ মঠটিও সুন্দর, শান্ত। 
পরের দিন রওনা হই পুনাখার পথে। বেশ কিছুটা  পথ চলার পর চির ও পাইন গাছের মধ্য দিয়ে খানিকটা চড়াই পথ  পেরিয়ে  পৌঁছে  যাই  দোচু লা। এখানে  মাটি থেকে খানিকটা উঁচুতে এক সুসজ্জিত প্রশস্ত প্রাঙ্গণে রাজ নির্দেশে নির্মিত হয়েছে একটি বড় মন্দির ও তাকে ঘিরে ১০৩টি ছোট মন্দির। মন্দির  চত্বরে  দাঁড়িয়ে দূরে তাকালে চোখে পড়ে একের পর এক  মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা দুধ-সাদা শৃঙ্গ। শেষ বিকেলের রং লেগে ঝলমলে সব। তারপর থিম্পু পেরিয়ে পুনাখা। শান্ত এই শহরটি আমাদের মন জয় করে নিমেষেই। পুনাখার পাহাড়ি সৌন্দর্য আর চঞ্চল নদীর পাড়ে বসে বসেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নেমে আসে। আমরা হোটেল অভিমুখে যাত্রা করি। 
ছোট্ট শহর থিম্পু  দৈর্ঘে ্য মাত্র  ছ’কিমি ও প্রস্থে  দু’কিমি। চঞ্চল ওয়াঙ-চুর দু’পাশে  পাহাড়ের  কোলে  ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে  শহরটি। থিম্পুর  একমাত্র  স্টেডিয়ামটিও  গড়ে উঠেছে   এই  নদীর  তীরেই। থিম্পুর  বিখ্যাত  ‘ঘড়ি ঘরের’  পাশ দিয়ে বেশ কিছুটা  এগিয়ে  গেলেই  বাঁ হাতে পড়ে  ভুটানের  প্রাক্তন  রাজা  জিগমে দোরজি  ওয়াঙ চু’র  স্মরণে  তৈরি  বিখ্যাত  স্তূপধর্মী  গুম্ফা  বা চোর্তেন। এখানে পথেঘাটে  চোর্তেনের  ছড়াছড়ি। সাধারণত  বরণীয়  ব্যক্তিদের  স্মরণীয়  করে  রাখার  জন্য  নির্মাণ করা হয়  চোর্তেন। 
তারপর যাই চিড়িয়াখানা দেখতে।  নির্জন  এলাকায়  অনেকটা  উঁচুতে সযত্নে গড়ে  তোলা  হয়েছে  চিড়িয়াখানাটি। নাম টাকিন জু। হরিণ,  সম্বর  জাতীয় বেশ  কয়েকটি  বন্য প্রাণীকে  রাখা হয়েছে  এখানে। এরপর বুদ্ধ পয়েন্ট।  থিম্পুর  মূল আকর্ষণও  হয়ে  উঠেছে  এটি। দূর  থেকেই চোখে পড়ে উঁচু  পাহাড়ের  মাথায়  নির্মিত  ধ্যানাসনে  বসা  সোনালি  রঙের বিশাল আকৃতির  বুদ্ধমূর্তিটি। আঁকাবাঁকা  পাহাড়ি  পথে  উঠতে  উঠতে  পৌঁছে  যাই  মন্দিরটির  পাদদেশে। ঝাঁ চকচকে বিশাল চত্বর। সেখান থেকে পুরো থিম্পু শহরটাই  পর্যটকদের  চোখে ধরা   দেয়। বুদ্ধ  পয়েন্ট  থেকে  ফেরার  পথেই   দেখে  নিই   জাতীয়  অঙ্কন  বিদ্যালয়  ও   হস্তশিল্পের  জাদুঘরটিও। তারপর  আসি  থিম্পুর বিখ্যাত  তাশি চো  জং দর্শনে। দশ হাজার  বর্গমিটার  আয়তাকার  ভূমিতে  সাদা পাথরের  এই  জংটি  নির্মাণ  করিয়েছিলেন  নামগিয়েল। শতাধিক  ঘরের  এই  জংটিতে  রয়েছে   ভগবান   বুদ্ধের  সহস্রাধিক মূর্তি। এছাড়াও  প্রধান  সেনাপতির  দপ্তর,  অস্ত্রাগার, মন্ত্রীদের  বাসস্থান  সবই  রয়েছে  এই জঙের  ভিতর।  
থিম্পু দর্শন শেষে ভুটান ভ্রমণেও ইতি পড়ে। এসেছিলাম  হাসিমারা  স্টেশন  হয়ে, ফিরব আলিপুরদুয়ার  জংশন  থেকে। যে অতুলন ীয় সৌন্দর্যের  টানে  এসেছিলাম, তা কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ফিরে  চললাম আপন দেশে। কীভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আলিপুরদুয়ার বা হাসিমারা নেমে সেখান থেকে যাত্রা শুরু করতে পারেন। থিম্পু ও পারো যাওয়ার জন্য ভালো বাস সার্ভিস আছে। গাড়িও ভাড়া নিতে পারেন। 
ছবি: লেখক
 

20th     May,   2023
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ