বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি
 

স্বপ্নের সানাই
 

নিজের বাড়ির উঠোন পেরিয়ে বাঙালি বিয়েবাড়ি তুলে এনেছিল ভাড়াবাড়িতে। এই প্রজন্ম ভাড়াবাড়ির মোহ কাটিয়ে বেছে নিচ্ছে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’। বিয়েতে দেশ ও বিদেশের নানা প্রান্তেও পাড়ি দিচ্ছেন কেউ কেউ। কলকাতা ও তার আশপাশে এমন কোন কোন জায়গা বেছে নিতে পারেন ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য, সেসবের সন্ধান দিলেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়। লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তবে হাতে হাত রেখে, সারাজীবন পরস্পরকে বইতে পারার অঙ্গীকার জীবনের একটা পর্বে এসে বেছে নিতে হয় অধিকাংশকেই। সেই দিনটিতে ঘিরে থাকেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব। মনের ভিতর রাখা  শীতলপাটির খোঁজটুকু অনেকেই সারতে চান চেনা পরিবেশের বাইরে বেরিয়ে একটু রোমাঞ্চকে সঙ্গে নিয়ে। তাই ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই আপন হয়ে উঠছে। কোথাও পাহাড় বা সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে বিয়ে, কোথাও আবার পছন্দের কোনও থিমকে সঙ্গী করে শুরু হয় নতুন জীবনের দ্বারে পাণিগ্রহণ। 

রূপকথার তোড়জোড়  
গল্পকথার মতো শুনতে লাগলেও আজকাল এমন বিয়ে আমাদের চারপাশেই হচ্ছে। একটু বাজেট বুঝে আর মাথা ঠান্ডা রেখে পরিকল্পনা করলে আপনার পরিবারের বিশেষ দিনটিও হতে পারেন ডেস্টিনেশনে মোড়া। কলকাতা শহরেই এমন অনেক ক্লাব ও পার্ক আছে, যেখানে এমন ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের আয়োজন করা হয়। কলকাতা ছাড়িয়েও বিভিন্ন জেলায় সন্ধান পাবেন এমন নানা হোটেলের। বলিউড ও টলিউডের সেলিব্রিটিদের অনেকেই আজকাল এই ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। নিজেরাও আয়োজন করতে পারেন অথবা কোনও ওয়েডিং প্ল্যানারের সাহায্য নিতে পারেন।

আমতলায় ঝামুর ঝুমুর কলাতলায় বিয়া
পুরনো বঙ্গে বাড়ির উঠোন, আঙিনা বা পাশের কোনও মাঠে ম্যাড়াপ বেঁধে প্যান্ডেল খাটিয়ে ছাদনাতলা তৈরি করে বিয়ে হতো বাড়ির আদরের কন্যের। রাঙা পায়ে মুটুক মাথায় দিয়ে কন্যে সেখান থেকেই শ্বশুরবাড়ি যেত। অনেক পরে বাড়িভাড়া করার রেওয়াজ চালু হল। আজকাল নানা ক্লাব ও বড় বড় ব্যাঙ্কয়েট হল-ও ঢুকে পড়েছে বিয়েবাড়ির সাম্রাজ্যে। এরই সঙ্গে ধীরে ধীরে বাঙালি ঘরেও ঢুকে পড়ছে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং-এর চল। শহর কলকাতা ও কলকাতার কাছাকাছি নানা এলাকায় পাবেন এমন নানা ঠাঁই।

পি সি চন্দ্র গার্ডেন: অজ গাঁয়ে বিয়ে করতে চান? কিংবা খাস কলকাতার বুকে পুরনো কোনও জমিদারবাড়ি চাইছেন? সব মিলবে। এত কিছু না চেয়ে অনেকটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা যাবে এমন চাইছেন? তা-ও পাবেন। সায়েন্স সিটির কাছে পি সি চন্দ্র গার্ডেন ভাড়া করতে পারেন বিয়েবাড়ির জন্য। ২০০-২৫০ জন অতিথিকে নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান হলে জায়গাটি ভাড়া করার জন্য বাজেট রাখুন ২-৩ লাখের মধ্যে। ৪০০-৬০০ জন অতিথি হলে খরচ বেড়ে ৪ লক্ষ টাকা হবে। ৮০০-১২০০ জন অতিথি হলে ৫ লক্ষ টাকা পড়বে। সঙ্গে অতিরিক্ত ১৮ শতাংশ কর। এবার কী থিম আপনি বাছবেন তার উপর নির্ভর করবে ডেকরেশনের খরচ। কেটারিং ও ডেকরেশনের জন্যও এদের উপর নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারেন। একটি ব্যাঙ্কোয়েট হল ও দু’টি লন ও দু’টি ঘর প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। যোগাযোগ: ৯৬৭৪১০০০৫৯। 
ভিভাদা ক্রুজ: চারপাশে বহমান গঙ্গা। মাঝে লাক্সারি ক্রুজ! সেখানেই মালাবদল, সিঁদুরদান।  অনতিদূরেই হাওড়া ব্রিজ। এমন এক মোহময় পরিবেশে যদি বিয়ের অনুষ্ঠান চান, তাহলে গঙ্গার বুকে ভিভাদা হতে পারে আপনার বাছাই। ‘অস্পিসিয়াশ’ ক্রুজটিতে ৮০০ জন অতিথি থাকতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৫ লক্ষ টাকা, সঙ্গে অতিরিক্ত কর। এখানেও খাবার ও ডেকরেশন নিজেদের ব্যবস্থাপনায় করতে পারেন। চাইলে খাবার ও  লাইভ মিউজিকের আয়োজন করে দেবেন কর্তৃপক্ষ।  আমিষ খাবারের জন্য ১৮৫০ টাকা প্রতি প্লেট ও নিরামিষে ১৪৫০ টাকা প্রতি প্লেটে খরচ ধরে এগন। যোগাযোগ: ৯৮৮৩৯৩৩০৩৩।

পোলো ফ্লোটেল: গঙ্গাবক্ষে ভাসমান হোটেল পোলো ফ্লোটেলেও বিশেষ দিনটির আয়োজন করতে পারে। নিমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যার উপর নির্ভর করে খরচ নির্ধারিত হবে।  ডেকরেশন ও খাবারের আয়োজন হোটেলের তরফ থেকেই করা হবে। মেনু দু’রকমের পাবেন। মাথাপিছু যথাক্রমে ১৮০০ টাকা ও ২২০০  টাকা খরচ ধরে এগন।  সঙ্গে লাগবে অতিরিক্ত কর। নির্দিষ্ট মেনুর সঙ্গে অন্য কোনও পদ যোগ করতে চাইলে তার জন্যও নির্ধারিত একটি খরচ পড়বে। পাবেন মাল্টিক্যুইজিন। অনুষ্ঠানের জন্য ১৬টি নানা মাপের হল ঘরও রয়েছে। গঙ্গার উপর খোলা আকাশের নীচে যেমন ছাদনাতলা সাজাতে পারেন, কেউ চাইলে ভিতরের হলগুলোতেও আয়োজন করতে পারেন। যোগাযোগ: ৮৬৯৭৯৭১৬৭৭।

নিক্কো পার্ক: নিক্কো পার্কের ভিতরে চারটি ওয়েডিং প্যাসেজ রয়েছে। চাইলে যে কোনও থিমনির্ভর সাজ বেছে নিতে পারনে এখানে। অনেকটা খোলা জায়গা, সবুজ ঘেরা চারপাশ নিয়ে সাজাতে পারেন আপনার বিবাহ আসর। কেউ যদি ব্যাঙ্কোয়েট চান, তাও পাবেন এখানে।  ৫০০-১০০০ জন অতিথি হলে ‘ওয়েট ও ওয়াইল্ড’-এ বিয়ের আয়োজন করতে চাইলে ভাড়া পড়বে ৩ লক্ষ টাকা, সঙ্গে অতিরিক্ত কর। সঙ্গে ডেকরেশনের জন্য ধরে রাখুন আরও ৭-৮ লক্ষ টাকা। অতিথি সংখ্যা ১০০০-১৫০০-র মধ্যে হলে ইস্ট সাইড প্যাভেলিয়ন বাছতে পারেন। এটির ভাড়া পড়বে ৫ লক্ষ টাকা, সঙ্গে কর। সাজানোর জন্য বরাদ্দ রাখুন ৯-১০ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কোয়েট ওয়েস্ট সাইড প্যাভিলিয়নটির ভাড়া পড়বে ৫ লক্ষ টাকা সহ কর। ডেকরেশনের জন্য খরচ পড়বে ৭ লক্ষ টাকা। ৫০০-৮০০ জন অতিথির জন্য ভাড়া করতে পারেন এই ব্যাঙ্কোয়েট। এখানকার রয়্যাল কোর্টইয়ার্ডটিতে ৮০০-১২০০ জন অতিথির জন্য আয়োজন করতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৪ লক্ষ টাকা, সঙ্গে কর। ডেকরেশনের খরচ ৯-১০ লক্ষ টাকা। কলকাতার সব নামী কেটারার এদের তালিকাভুক্ত। যোগাযোগ: ৮০৪৮১২৫৩০৫।

শোভাবাজার রাজবাড়ি: নিজেকে এক রাতের জন্য রাজকন্যে বা রাজপুত্তুরও ভাবতে পারেন। সাত মহলা বাড়ি আর রাজকীয় পরিবেশে বিয়ে সারতে চাইলে যোগাযোগ করুন শোভাবাজার রাজবাড়িতে। রাজবাড়ির একটি অংশ বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়া পড়বে ৬০ হাজার টাকা। চাহিদা ও সময় অনুযায়ী দামের হেরফের হয়। তবে গোটা বাড়ি আলো আর ম্যারাপে সাজিয়ে তোলার খরচ আলাদা। খাবারের জন্য নিজের পছন্দের ক্যাটারারের পরিষেবাও নিতে পারেন। যোগাযোগ: ০৩৩-৪৫৪৪৩২৩৩।
বাওয়ালি রাজবাড়ি: রাজবাড়ির তালিকায় রয়েছে বাওয়ালিও। মনের মানুষের সঙ্গে এক হওয়ার এই লীলাভূমিটি কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা দূরে। গথিক থাম, সুউচ্চ প্রাসাদ, নকশা ও রাজবাড়ির আভিজাত্যে ভেসে বহু সেলিব্রিটি এখানে বিয়ের আসর সাজিয়েছেন। ভাড়া পড়ে ৫ লক্ষ টাকা। এর সঙ্গে ডেকরেশন আরও ২-৩ লক্ষ ও খাওয়ার খরচ আলাদা করে ধরতে হবে। এই মহোৎসবে রান্নার দায়িত্ব দিতে পারেন রাজবাড়ির রন্ধনশালাকে। যোগাযোগ: ৯৮৩০৩৮৩০০৮।
লাটুবাবু-ছাতুবাবুর বাড়ি: বিডন স্ট্রিট পোস্ট অফিসের কাছে এই অট্টালিকাও বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। ‘বাবু’ রামদুলাল দে-র এই বাড়ি আভিজাত্যের এসেন্স গায়ে চড়িয়ে আপনার অতিথিদের সমাদর করবে।  ৩০-৪০ হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে এই বাড়ি পেতে পারেন বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য। ডেকরেশন খরচ প্রায় ১ লক্ষ টাকা। বেলজিয়ান গ্লাসের দরজা-জানালা, শ্বেতপাথরের মেঝে, সেগুন কাঠের আসবাবে পুরনো যুগের কলকাতাকেও খুঁজে পাবেন এখানে।  খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব দিন নিজের পছন্দের কেটারারকে।  যোগাযোগ: ০৩৩-৪০০০৬৪৯৪।

প্রিন্সটন ক্লাব: পাঁচ-পাঁচটি সুসজ্জিত ব্যাঙ্কোয়েট রয়েছে প্রিন্সটন ক্লাবে। বর্মা টিক কাঠ, ইতালিয়ান মার্বেল, মোমের আলোর মায়াবী পরিবেশ, ফুল ও সুগন্ধিতে মোড়া এই হলগুলোতেও বসাতে পারেন বিয়ের আসর। বর ও কনের আত্মীয়দের থাকার জন্য বড় বড় ছ’টি রুমও এখানে পাবেন। এদের নিজস্ব কিচেনে বাঙালিয়ানা থেকে শুরু করে ভারতের সবরকম প্রদেশের খাবারই পারেবন। আপনার পছন্দের ক্যুইজিন ও মেনু বেছে দিন, বাকি দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। শুধু বিয়ের জায়গা ও মেনুই নয়, এখানে অনুষ্ঠান করলে ডেকরেশন থেকে শুরু করে গাড়ির ব্যবস্থা, আলো, বরের গাড়ির সাজ, ফোটোগ্রোফি, মেকআপ আর্টিস্ট, রিটার্ন গিফট, ই-কার্ড সবকিছুর দায়িত্বই নেবে ক্লাবটি। থাকবে লাইভ ব্যান্ড, কেক, কুকিজও। ৫০০-১৫০০ জনের মধ্যে অতিথির সংখ্যা হলে আয়োজন করতে পারেন এখানে। 
যোগাযোগ: ৯৮৩০২২৯৩১৩।

ক্লাব ভার্দে: মধ্যবিত্তের বাজেটের মধ্যে বিয়েবাড়ি খুঁজলে ক্লাব ভার্দেয় যোগাযোগ করতে পারেন। ভাড়া ও খাওয়ার খরচ মিলিয়ে প্রতি অতিথি পিছু ১৩০০ টাকা করে ভাড়া পড়ে। এছাড়া এখানকার তালিকাভুক্ত ডেকরেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থিম বাছতে পারেন। পছন্দ অনুযায়ী বাজেটে সাজিয়ে তোলা হবে আপনার স্বপ্নের ছাদনাতলা। তার খরচ আলাদা। যোগাযোগ: ৯৮৮৩২৭২৮২২।
রায়চক: কলকাতা থেকে গাড়িতে দেড়-দু’ঘণ্টাতেই পৌঁছনো যায় রায়চক। ৮০-৫০০ জন অতিথি নিয়ে বিয়ের আসর বসাতে চাইলে গঙ্গার ধারে রায়চক ফোর্ট হতে পারে আপনার গন্তব্য। এখানে নানা আকারের চারটি ম্যারেজ হল রয়েছে। অতিথির সংখ্যা বুঝে বুক করে 
নিন। 
এখানকার তালিকাভুক্ত কেটারার ও ডেকরেটর আপনার উৎসবকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রস্তুত। থিমের উপর নির্ভর করবে খরচ। অতিথিদের থাকার জন্য ঘরের ভাড়া শুরু প্রায় ১১,১০০ টাকা থেকে। সঙ্গে যোগ হবে অতিরিক্ত কর। বিবাহবাসরের জন্য যোগাযোগ: ৯৮৩১৪০৪০৪০।​​​​​​ 

19th     November,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ