রোজই বাবার দিন
অমৃতা চট্টোপাধ্যায়
‘বাবা’ মানুষটা প্রতিটা সন্তানের কাছেই খুব প্রিয়। জন্মের পর থেকে যাঁর হাত ধরে বেড়ে ওঠা, যাঁর থেকে পৃথিবীটা চিনতে শেখা তাঁকে একটা নির্দিষ্ট দিনে কিছু দিতে পারলে ভালোই লাগে। ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম, তখন ফাদার্স ডে-তে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বাবার জন্য পেন, কার্ড এসব হামেশাই কিনতাম। কিন্তু বড় হওয়ার পর যখন বুঝতে শিখলাম বাবা-মা-ই সন্তানের জীবনের সবকিছু— তখন থেকে আমার কাছে প্রতিটা দিনই ফাদার্স ডে আর মাদার্স ডে। নিজের জীবনের সব সমস্যা তাঁদের কাছে বলা যায়। তাঁরা সেসব সমাধান করে দেন। তাঁদের জীবনের উৎকণ্ঠা, সমস্যা আমি ভাগ করে নিই, এভাবেই জীবন এগিয়ে চলে। এখন আর ফাদার্স ডে-তে নয়, সারা বছর ধরেই বাবার জন্য কেনাকাটা করি। বাবার পছন্দ-অপছন্দ আমি জানি। বাবার একটা স্বভাব আছে যেটা খুব মজার। যে কোনও সাধারণ বিষয়ে আমার মতামতের ঠিক বিপরীতটাই বাবার বলা চাই। ধরা যাক আমি কোনও একটা সিনেমা দেখে এসে বললাম, এটা খুব ভালো ছবি। বাবা অমনি বলবে, না ওটা ভালো ছবি নয়। আবার আমি যদি বলি, ছবিটা খারাপ, তাহলে বাবা বলবে, না ওটা ভালো। আমি কখনও কখনও রেগেও যাই, কিন্তু পরে বুঝতে পারি এতে আমার যুক্তিবোধটা গড়ে উঠতে পারছে। ভালো থেকো বাবা।
বাবা আমাকে প্যাম্পার করে
দেবলীনা কুমার
আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় মানুষ হল বাবা। সেই ছোট থেকে দেখছি আমাকে অদেয় বাবার কিছু নেই। মুখের কথা খসালেই হল। অমনি সেই জিনিসটা চলে আসবে। বাবা আমাকে খুব প্যাম্পার করে। এই যে এত বড় হয়ে গিয়েছি, এখনও। বাবাকে সব কথা বলতে পারি। মনে আছে, যখন ক্লাস নাইন-টেনে পড়ি, তখন দেখতাম ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আমার বন্ধুদের বয়ফ্রেন্ডরা উপহার দিত। আমার সেরকম কেউ ছিল না, খুব মন খারাপ হতো। বাবা জানতে পেরে তখন থেকে প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আমাকে উপহার কিনে দিত। তবে কিছু সমস্যার কথা আমি মায়ের সঙ্গেই শেয়ার করি। কারণ, মা বলে বাবা আমার কোনও দোষই নাকি দেখতে পায় না। তাই বাবা সমস্যার সমাধান করলে সেটা একপেশে হতে বাধ্য।
ফাদার্স ডে-তে প্রতিবছরই আমি বাবাকে কিছু না কিছু দিই। রাতে বাইরে খেতে যাই। এবারও যাব। কোনও রেস্তরাঁয় আমরা চাইনিজ খাব। আর বাবার নতুন নেশা হল জিম করা। জিম করে করে চেহারাটা অনেক ফিট করে ফেলেছে। সুগারও অনেক কমে গিয়েছে। তাই এবার ভাবছি বাবাকে জিম করার কিছু পোশাক কিনে দেব। তাতে বাবা জিম করতে আরও উৎসাহিত হবে নিশ্চয়ই। হ্যাপি ফাদার্স ডে বাবা।
রবিবারের মাংস-ভাত
বিশ্বনাথ বসু
আমার সঙ্গে বাবার সম্পর্কটা ছিল অনেকটা কমল মিত্র আর উত্তমকুমারের মতো। তাছাড়া আমরা ছোটবেলায় ফাদার্স ডে বলে যে কিছু হয়, তা-ই জানতাম না। তবে তা সত্ত্বেও বাবার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো ছিল। বাবার থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। ভালো গান শোনার অভ্যেস, ভালো সিনেমা দেখার অভ্যেস, সাহিত্যের কদর করা— এসবই পেয়েছি। বাবা নিজের চোখে নজরুলকে দেখেছিলেন। সে গল্প শুনে গর্বে বুক ফুলে উঠত। বাবা মারা গিয়েছেন ১৫ বছর হল। সেই কবে আমাকে বলেছিলেন, হিচককের ‘বার্ডস’ সিনেমাটা দেখো। ওটা না দেখলে সিনেমার পাঠ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এই সেদিন ছবিটা দেখতে পারলাম।
আমার দুই ছেলে কিন্তু প্রতি বছর আমাকে ফাদার্স ডে-তে গিফ্ট দেয়। একবার ওদের দেওয়া বডি স্প্রে স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম। খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে আর ওদের দেওয়া গিফ্ট আর বাড়ির বাইরে বের করি না। আমিও আমার বাবার মতো চেষ্টা করি ওদের সু-সংস্কৃতির পাঠ দিয়ে যেতে।
আসলে আমার মনে হয় ফাদার্স ডে টা হল বাঙালি বাড়িতে রবিবার মাংস-ভাত খাওয়ার মতো। মাংস তো রোজই খাওয়া যায়। কিন্তু রবিবার হলে জমে যায়। সেরকমই বছরের কোনও একটা দিন নির্দিষ্ট করে সম্পর্কগুলো উদযাপন করা হয়। মন্দ কী!