বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা
 

স্বামীর অবর্তমানে শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর অধিকার

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আইনি দিক খতিয়ে দেখলেন অন্বেষা দত্ত।

ভালোবেসে হোক বা দেখাশোনা, হিন্দুমতে ধুমধাম করে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরেও কোনও কোনও স্ত্রীর জীবনে হয়তো ঘনিয়ে আসে আশঙ্কার কালো মেঘ। বিয়ের পরে স্বামী বেঁচে থাকাকালীন হয়তো অসুবিধা হল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্বামী যদি মারা যান? ছেলের মৃত্যুর পর ছেলের বউয়ের প্রতি সবসময় কি সহমর্মিতা দেখান শ্বশুর-শাশুড়ি? হিন্দু আইনে এক্ষেত্রে স্ত্রীর অধিকার সীমিত এবং শর্তাধীন বলা চলে। তার জন্য শ্বশুরবাড়িতে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হন স্ত্রী। এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম প্রাক্তন বিচারপতি মানস শর্মার (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে। 
ধরা যাক, বিয়ের কিছু বছর পরে স্বামীবিয়োগ হল। তখন স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি থেকে আদৌ সম্পত্তি কি পাবেন? বিষয়টি নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে বলে জানালেন প্রাক্তন বিচারপতি। 
মানসবাবুর মতে, স্বামী যদি তাঁর বাবা-মায়ের বাড়িতে থাকেন, এবং বিয়ের কিছু বছর পরে মারা যান, তাহলে তাঁর স্ত্রী হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে একমাত্র সেই সম্পত্তিই পাবেন, যা তাঁর স্বামীর একান্ত নিজস্ব এবং স্বামীর নামেই ছিল। শ্বশুরের সম্পত্তি প্রাথমিকভাবে ছেলের বউ পাবেন না। এছাড়া বাবা যদি কোনও সম্পত্তি ছেলেকে দিয়ে যান অর্থাৎ সেই সম্পত্তিতে ছেলের অধিকারে তিনিই সিলমোহর দিয়ে গিয়েছেন, সেই সম্পত্তিও স্ত্রীর প্রাপ্য। কিন্তু ছেলে অর্থাৎ স্বামীর যদি নিজস্ব কোনও সম্পত্তি না থাকে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর বাবা-মা অর্থাৎ মেয়েটির শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে থাকেন, তাহলে সেই সময় শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তিতে স্ত্রীর কোনও অধিকার থাকবে না। এছাড়া ধরা যাক, বাড়ি রয়েছে শ্বশুরের নামে। শ্বশুর মারা গিয়েছেন এবং তাঁর ছেলে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মহিলার স্বামীও আগে মারা গিয়েছেন, তাহলে আবার স্ত্রী এবং শাশুড়ি দু’জনেই ওই সম্পত্তির সমান ভাগীদার হতে পারেন। স্বামী-শ্বশুরের পরে শাশুড়ি গত হলেও সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না বিধবা স্ত্রীর। এক্ষেত্রে শ্বশুরের অন্য সন্তান থাকলে তখন সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ হবে সকলের মধ্যে। 
উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন তিনি। ধরা যাক রবিবাবু মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী হলেন উমা। ছেলে সৈকত। ছেলে আগে মারা গিয়েছেন। সৈকতের বউ রীমা। এক্ষেত্রে যখনই রবিবাবু মারা যাবেন, তারপরে সম্পত্তি উমা-রীমা দু’জনেই পাবেন উত্তরাধিকারী হিসেবে (ক্লাস ওয়ান এয়ার)। স্বামী মারা গেলে শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এমনই শর্তনির্ভর বিষয়। স্বামী বাবার বাড়িতেই থাকলে তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সেক্ষেত্রে কিছুই কি পাবেন না? মানসবাবু বললেন, পাবেন। তাঁর নিজস্ব যে স্ত্রীধন আছে, সেটা পাবেন এবং স্বামীর স্বঅর্জিত সম্পত্তি যদি থেকে থাকে, সেটাও পাবেন। 
অনেক সময় হয়তো দেখা গেল স্ত্রী কর্মরতা নন এবং তাঁর হয়তো সন্তানাদি আছে। সেক্ষেত্রে তাঁর স্বামীবিয়োগ হলে এবং স্বামীর নিজস্ব সম্পত্তি না থাকলে শ্বশুরবাড়ি যদি মাথার উপর থেকে হাত তুলে নেয়, বাড়ির বউকে তো পথে বসতে হবে? মানসবাবু বলছেন, অনেকটা তাই। আর সন্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টা ইনহেরিটেন্স বা উত্তরাধিকারের পর্যায়ে পড়ে। উত্তরাধিকার আসে পূর্বসূরির কাছ থেকে। পূর্বসূরি ছিলেন শ্বশুর বা ছেলের বাবা, যিনি মারা গিয়েছেন। সম্পত্তি থাকলে তা প্রথমে যাবে শাশুড়ির কাছে। শাশুড়ির ছেলে মারা গেলে আগে যেমন বলা হল, শাশুড়ি ও ছেলের স্ত্রী দু’জনেই ভাগীদার। এরপর শাশুড়ি মারা গেলে তাঁর ছেলের স্ত্রী এবং তাঁর নাতি-নাতনি উত্তরাধিকার পেতে পারে। কোনও শ্বশুর-শাশুড়ি যদি ছেলের মৃত্যুর পর বাড়ির বউ এবং নাতি-নাতনিকে বের করে দেন, তখন বউ-নাতি-নাতনির কিছু করার নেই। পাঁচ-দশ-পনেরো বছর বাদে যদি শ্বশুর বা শাশুড়ি মারা যান, তখন আবার বাড়ির বউ সন্তানাদি নিয়ে এসে সম্পত্তির ভাগ চাইতে পারেন। এবং সম্পত্তির অধিকার তাঁর ও তাঁর সন্তানদের থাকবে। তাঁদের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তি বিক্রিও করা যাবে না। মৃত স্বামীর অন্য ভাইবোন থাকলে সমানভাবে ভাগ হবে সম্পত্তি।
স্বামী বেঁচে থাকতে যদি গার্হস্থ্য হিংসার মামলাও করেন স্ত্রী, তখনও তিনি শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তির অধিকারী থাকছেন, যেহেতু স্বামী জীবিত। কিন্তু বিধবার জন্য হিন্দু আইনে শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ‘জটিলতা’ আছে। তিনি স্বাভাবিকভাবে সম্পত্তির অধিকারী হতে পারেন না। শ্বশুর বা শাশুড়ির অবর্তমানেই একমাত্র তিনি এবং তাঁর সন্তান সুযোগ পাবে।
আর একটি প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে অনুরোধ জানাই প্রাক্তন বিচারপতিকে। কোনও বিয়ে যদি রেজিস্টার্ড না হয়, সেক্ষেত্রে কি সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর অসুবিধা হয়? তিনি জানালেন, রেজিস্ট্রি না হলেও সামাজিক বিয়ে অর্থাৎ আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি সব হয়ে থাকলে তা মান্য। কারণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেক অতিথিই হিন্দু রীতিনীতি মেনে বিয়ে হয়েছে, এই সাক্ষ্য আদালতে দিতে পারবেন। অনেক মেয়ে পালিয়ে মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে পস্তায়। এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই সমস্যা হয়? প্রাক্তন বিচারপতি বললেন, মন্দিরের বিয়ে তখনই গ্রাহ্য হবে যখন দেখা যাবে সিঁদুরদান, অগ্নিসাক্ষী করে সাতপাক ঘুরে বিয়ে হয়েছে এবং যিনি বিয়ে দিয়েছেন, সেই পুরোহিত আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে পারছেন। তাঁকে বলতে হবে, সব হিন্দু নিয়ম মেনেই তিনি ওই বিয়ে দিয়েছিলেন। এমন অনেক মামলা পাওয়া যায় যেখানে অনেক মেয়ে মন্দিরে মালাবদল করাটাই ‘বিয়ে’ ভেবে থাকতে শুরু করে ‘স্বামী’র সঙ্গে। সে পরে বিপদে পড়তে পারে। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ি কিছুদিন পরে তাকে বের করে দিলে মুশকিল। কারণ এই বিয়ে মান্যতা পাবে না আদালতে। 
* পুরো আলোচনাটিই হিন্দু বিবাহ আইনের উপর কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। অন্য মতে বিয়ে এখানে বিবেচিত হয়নি।
 
 মডেল: বৈশিখা ভট্টাচার্য, সুমনা ভট্টাচার্য, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, বৈশালী ভট্টাচার্য  ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায় 

6th     April,   2024
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ