আরজি কর হাসপাতালের নার্স সুস্মিতা চক্রবর্তী সম্প্রতি একক মাতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। দৃঢ়চেতা এই নার্স বহুদিন ধরেই মাতৃত্ব গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন মনে মনে। শেষ পর্যন্ত একক মাতৃত্বের সিদ্ধান্তেই অনড় থেকেছেন তিনি। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? প্রশ্ন করলে সুস্মিতা বলেন, ‘আমার কেরিয়ারই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে মূল কারণ। অনেক অল্প বয়স থেকেই নার্সিংয়ের কেরিয়ারে সন্তান সম্ভাবনা, ডেলিভারি ইত্যাদি দেখেছি। সন্তান কোলে নিয়ে মায়ের মুখের চেহারা কেমন নিমেষে বদলে যায় তা-ও দেখেছি। দেখতে দেখতেই নিজের অজান্তে আমার মধ্যে মাতৃত্বের সাধ জাগে। আর সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিই।’ কিন্তু একক মাতৃত্ব কেন? আর পাঁচজনের মতো জীবনসঙ্গী বেছে তাঁর সঙ্গেও তো অভিভাবকত্ব ভাগ করতে পারতেন, তাই না? সুস্মিতা অবশ্য স্পষ্ট জানালেন, বিয়ে-সংসার ইত্যাদি কখনওই তাঁকে আকর্ষণ করেনি। বরং তিনি নিজের কেরিয়ারের দিকেই মন দিতে চেয়েছেন সব সময়। কিন্তু ক্রমশ মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার বাসনা তাঁকে ঘিরে ধরে। আর সেই কারণেই বিয়ে না করেও মা হবেন বলে মনঃস্থ করেছিলেন সুস্মিতা।
তা বলে বিয়ের চেষ্টা যে তিনি করেননি একেবারে তা কিন্তু নয়। তবে শেষ পর্যন্ত কাউকেই ঠিক মনে ধরেনি তাঁর। মনের মানুষটিকে খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত একক মাতৃত্ব গ্রহণ করার কথা ভাবেন। ভাবনা অনুযায়ী এগিয়ে তিনি আজ এক কন্যাসন্তানের গর্বিত জননী।
পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থনের কথা উঠলে সুস্মিতা বলেন, তাঁর এই সিদ্ধান্তে তিনি বাবা এবং ভাইকে পাশে পেয়েছেন। মা অবশ্য এখনও একটু বিরক্ত হয়ে রয়েছেন মেয়ের ওপর। সুস্মিতা বললেন, ‘আসলে মা চেয়েছিলেন বিয়ে করে সন্তান ধারণ করি। বলেছিলেন, একা বাচ্চা মানুষ করা সহজ নয়। সেই মতো চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু সুবিধে হয়নি। তাছাড়া আমি মনে করি না সন্তান মানুষ করতে গেলে স্বামীর দরকার। বরং আমার মনে হয় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার একটা বড় ধাপ এই একক মাতৃত্ব। যাই হোক, আমার সঙ্গে চিন্তাধারায় অমিল হয়েছে বলে মা এখনও একটু রেগেই আছেন আমার ওপর। আশা করি, পরে তিনি আমার এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন এবং সমর্থনও করবেন।’ তবে সামাজিক কোনও বাধা তিনি পাননি। বরং আত্মীয়, বন্ধু সবাই তাঁর এই সিদ্ধান্তে তাঁর পাশেই থেকেছেন। তাঁর কথায়, একজন মহিলা যে আইনত একাই সন্তানের সব অধিকার ও দায়িত্ব নিতে পারছে, এটাই তো মেয়েদের সামাজিক অগ্রগতির একটা বড় ধাপ। ফলে এই পর্যায়ে পৌঁছনোর পর সমাজ আর কী-ই বা বাধার সৃষ্টি করবে! তাছাড়া সন্তান বহনের মতো কঠিন কাজ যদি মেয়েরা একাই করতে পারেন, তাহলে তাকে মানুষও একাই করতে পারবেন।