বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
চারুপমা
 

প্রাণখোলা
ঢিলেঢালা

গরমি জ্বালা এক নিমেষে ঠান্ডা করতে চান? তাহলে আপনাকে জানতেই হবে অ্যান্টি-ফিট পোশাকের হালহকিকত। লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

হেডিং দেখে নিশ্চয়ই মালুম পাচ্ছেন কিসের কথা বলতে চাইছি। বৈশাখের গরম হাওয়াকে পকেটে পুরে কাজকর্ম করতে ঢিলেঢালা পোশাকের জুড়ি মেলা ভার। সে পোশাকের পোশাকি নাম এখন ‘অ্যান্টি-ফিট’ ড্রেস। কী বললেন? বড়সড় সাইজের ওই জামায় একেবারে মানাচ্ছে না আপনাকে? উঁহু, তাহলে আপনি এ পোশাকের মর্মই বোঝেননি। এ পোশাকে আরাম পাওয়াটাই লিস্টে সবার আগে, তারপর তা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। সত্যি বলতে কি, ফ্যাশনেও এখন দারুণ ইন অ্যান্টি-ফিট জামাকাপড়।  

গোড়ার কথা
অ্যান্টি-ফিট শব্দটা থেকেই স্পষ্ট, ফিটিং পোশাকের বিপরীত মেরুতে অবস্থান এই পোশাকের। আমেরিকায় ওভারসাইজড ফ্যাশনের এমন একটা ঢেউ উঠেছিল ১৯২০-তে।  মার্কিন মহিলারা প্রথম ভোটাধিকার পেলেন ওই সময়েই। বাইরে বেরিয়ে ক্রমশ কাজকর্মও করতে শুরু করলেন তারপর থেকে। সেই সূত্রে বাইরে পরার আরামদায়ক পোশাকের প্রয়োজন পড়ল আরও বেশি করে। ঢিলেঢালা পোশাকও তখন স্বাধীনতার সমার্থক।
টাইট ফিট জামাকাপড় উপর-উপর দেখতে যতই ভালো লাগুক আরামের সঙ্গে তার তেমন দোস্তি নেই, বিশেষত গরমকালে। আর অ্যান্টি-ফিট মানেই স্বচ্ছন্দ-পোশাক। ভারী, পাতলা, মাঝারি— যে কোনও চেহারায় মানিয়ে যায়। অ্যান্টি-ফিট ড্রেস বার্তা দেয় ফ্যাশন সকলের জন্য, আমাদের দেখার চোখটা শুধু বদলাতে হবে। 
কেউ বলেন রিল্যাক্সড ফিট, কেউ বা বলেন ওভারসাইজড ক্লোদিং। এ পোশাকের বাঁধাধরা ফর্ম নেই, তাই তা সকলের আপন। ফ্যাশন দুনিয়ায় বডি হাগিং পোশাকই একটা সময়ে মনে করা হতো সেরা। কিন্তু সে পোশাকে অস্বাচ্ছন্দ্যই যেন কালে কালে তৈরি করেছিল ঢিলেঢালা পোশাকের দাবি। যা আরামদায়ক নয়, তা মেনে নেওয়ার নয়। বিশ শতকের এ দাবি আবার ফিরল বছর দশ-বারো আগে, অর্থাৎ ২০১০-এর মাঝামাঝি ফের এই ট্রেন্ড দেখা গেল বিভিন্ন জায়গায়। 

হালফিল ফ্যাশনে
কোনও কোনও ডিজাইনারের মতে অ্যান্টি ফিট সবচেয়ে ভালো লাগে সলিড কালারে। তবে এর কাট বা শেপ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন অনেকেই। কেউ কাফতান শেপ, কেউ স্যাক বা বস্তা শেপ এমন নানা আকারে ড্রেস বা কুর্তি বানান। ছেলেদের পোশাকেও একইভাবে অ্যান্টি ফিট ব্যবহার হচ্ছে এখন। কুর্তা বা শার্টেও ফিট-বিরোধী কাট আনছেন অনেকে। 
এই সূত্রে মনে পড়ে বলিউড অভিনেত্রী নেহা ধুপিয়ার কথা। ঢিলেঢালা লম্বা ঝুলের পোশাক কীভাবে স্টাইল বজায় রেখে ক্যারি করতে হয়, দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় মাঝেমধ্যেই তাঁকে দেখা যায় এধরনের পোশাকে। মেয়েদের বিশেষ করে প্রেগন্যান্সির পরে অনেকের চেহারা ভারী হয়ে যায় নানা শারীরিক কারণে। তখন কোনও পোশাকে মানাচ্ছে না নিজেকে, এমন একটা মনখারাপ কাজ করে অনেকেরই মধ্যে। নেহা ধুপিয়ার ছবি দেখলে বুঝবেন, পোশাক নিয়ে প্রথাগত ধারণা ছেড়ে কবেই বেরিয়ে এসেছেন তিনি। অনেকটা একই স্মার্টনেসে নিজেকে ক্যারি করেন আর এক বলিউড অভিনেত্রী সমীরা রেড্ডি। বড়সড় ফ্লোয়ি কুর্তার সঙ্গে ফ্লেয়ারড পালাজো প্যান্ট অথবা একদিকে কাট আউট স্লিভে অফ শোল্ডার ড্রেস, কখনও রিল্যাক্সড ফিটে অ্যাসেমিট্রিকাল টিউনিক সঙ্গে ট্যাপারড স্ট্রেট প্যান্ট, কখনও কাফতান স্টাইলে টিউনিক— এমন নানা মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করছেন তাঁরা। 

পোশাকে নারীবাদ
নারীশরীরকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেভাবে এতদিন দেখে এসেছে, সেখানে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে মেয়েদের পোশাকের। পোশাক থেকে শুধু শরীর নয়, আর্থিক সঙ্গতি, লিঙ্গপরিচয় ইত্যাদি সবকিছুই বিবেচিত হতো যেন। সেই দমনপীড়নের ‘দেখা’-য় একটা ধাক্কা দিয়েছিল আকৃতিহীন পোশাক। যে পোশাক বুঝিয়ে দিতে পেরেছিল নারীশরীর শুধু ‘দেখার’ জন্য নয়। জেন্ডার-ফ্লুইড (লিঙ্গ-নিরপেক্ষ) পোশাক এভাবেই অনেকটা নজরে আসতে শুরু করল। ব্লগার অসীমা গান্ধী বলছেন, নিখুঁত হওয়ার ধারণাটাকেই খারিজ করে ফিট-বিরোধী পোশাক। তার পাশাপাশি আর একটি জিনিসও উঠে আসে এই ধারার পোশাক ভাবনায়। সেটা হল, যা পরছি, যেভাবে পরছি তাতেই আমি আত্মবিশ্বাসী এবং আমার চেহারা নিয়ে আমার বা সমাজের মাথাব্যথা না থাকাটাই ‘স্বাভাবিক’। আর এমন ভাবনার জন্যই অ্যান্টি ফিট পোশাকের সঙ্গে নারীবাদের সংযোগ খুঁজে পান অনেকে। 

ডিজাইনারদের মত
ব্র্যান্ড ‘শুভা ডিজাইন স্টুডিও’য় অর্গ্যানিক কটনে লুজ ফিট পোশাক অনেক দিন ধরেই বানাচ্ছেন কলকাতার ডিজাইনার শুভা মিত্রা। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টি ফিট পোশাক আমার কাছে একটা আবেগের ব্যাপার। ব্র্যান্ড শুরু করার আগে থেকেই আমার নিজেরও ফিটেড জামাকাপড় পরতে অস্বস্তি হতো। ‘নিখুঁত’ শরীর তো সবার হয় না। আঁটসাঁট জামাকাপড়ে আত্মবিশ্বাস নষ্ট তো হয়ই, সঙ্গে হাঁসফাঁসও লাগে। আমি মনে করি নিজের ত্বক ও মন দুটোরই শ্বাস ফেলার জায়গা চাই।’ 
শুভার মতে, ‘ইউরোপীয় ফ্যাশনের ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখা যাবে একটা সময়ের পর ফিটেড পোশাকের দিন কীভাবে শেষ হয়ে গিয়েছে। নারী শরীর টাইট পোশাকে আবদ্ধ থাকলে পুরুষের দৃশ্যসুখ, তার বিরুদ্ধেই  বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন মহিলারা। সব গড়নের মেয়েরাই অ্যান্টি ফিট পোশাক পরতে পারে। এ পোশাক তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে এবং নিজের শর্তে বাঁচার রসদ জোগায়।’ 
মেয়েদের জন্য ব্র্যান্ড ‘সই’-ও কাজ করে ওভারসাইজড পোশাক নিয়ে। তার ডিজাইনার শ্রীপর্ণা বসু বললেন, ‘অনেক দিন ধরেই ঢিলেঢালা পোশাক বানাই। বডি পজিটিভিটি ছিল আমার টার্গেট। যারা প্লাস সাইজ, তাদের কথা ভেবে ওভারসাইজড পোশাক বানানো শুরু করি। ফিটেড জামাকাপড়ে তারা কমফর্ট পান না। তাই মূলত সুতির কাপড়ে ওই ধরনের পোশাক বানানো শুরু করি, যেটা ক্রমশ ট্রেন্ড হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ওয়েল টোনড বডিতেও কেউ আরামদায়ক পোশাক পরতে চাইতেই পারে— হাওয়াবাতাস খেলে, গরমের জন্য আদর্শ। এধরনের পোশাক বানিয়ে দারুণ সাড়া পেয়েছি। ৫০+ অবধি সাইজের পোশাক বানাই আমি। ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী। আর পোশাক এমন হয় যে সাত-আট ঘণ্টা পরে থাকলেও তাতে কোনও অস্বস্তি হবে না।’     
তাহলে বুঝলেন তো? আরামকে প্রাধান্য কেন দেবেন? গরমে ঢিলেঢালা পোশাকে বাঁচুন প্রাণভরে। 

23rd     April,   2022
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ